Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

ভ্রমণ

নৌভ্রমণে বুড়িগঙ্গায়

Icon

লেখা ও ছবি : সুমন্ত গুপ্ত

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নৌভ্রমণে বুড়িগঙ্গায়

দিনটি ছিল শুক্রবার। সকালে ঘুম ভাঙে অনিকের ডাকাডাকিতে। নয়ন মেলে তাকাতেই অনিক বলে উঠল ঘুম থেকে ওঠো, তাড়াতাড়ি বাইরে ঘুরতে যাব। বাসায় বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না। আমি আধো ঘুমে বললাম, ঠিক আছে তুমি তৈরি হও আমি ঘুম থেকে উঠছি। বলেই আবার নিদ্রা দেবীর কোলে পতিত হলাম। মোবাইল ফোনের ডাকাডাকিতে আবার ঘুম ভাঙল, আমি চোখ মেলে তাকাতেই দেখি অনিক মোবাইলে ফোন দিয়েছে। আমাকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য ভিন্ন কায়দার পন্থা। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত ঘুম থেকে উঠতেই হলো। ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল এগারোটা বেজে গেছে। অনিককে বললাম, কোথায় যাবে ঘুরতে প্রত্যুত্তরে অনিক বলল, বুড়িগঙ্গায় নৌকা ভ্রমণে যেতে চাই, আমি বললাম এখন তো ভর দুপুর আর হাতেও কিছু কাজ আছে। বিকালে বের হই তখন সূর্যদেবের প্রকোপ তেমন থাকবে না। আমার কথায় সম্মতি দিল অনিক।

ঘড়ির কাঁটায় তখনো তিনটা বাজে নাই, অনিক তৈরি হয়ে আমার কাছে এসে উপস্থিত-আমি তৈরি চল বের হই। আমি ঝটপট তৈরি হয়ে বের হয়ে পড়লাম গন্তব্য পানে। নদীপথে নৌকা ভ্রমণ বাঙালির অস্থিমজ্জায় মিশে আছে। উৎসব পার্বণে নানা আনুষ্ঠানিকতায় নৌভ্রমণ বাড়তি আনন্দ এনে দেয়। নদীর তীরে বেড়াতে গেলে তো কথাই নেই। একটা সময় নদীর তীরের গ্রাম ও চরগ্রামে একাধিক পয়েন্টে ছিল খেয়াঘাট। তিন চাকার মানব গাড়িতে করে আমি, সানন্দা, অনিক চলে এলাম বুড়িগঙ্গা নদীর ঘাটে। চার পাশে মানুষের চিৎকার-চেঁচামেচি। যাই হোক, আমরা পদব্রজে এগিয়ে যেতে লাগলাম সম্মুখ পানে। ঘাটে গিয়ে দেখলাম শতাধিক নৌকা এদিক-সেদিক অপেক্ষা করছে যাত্রীর জন্য।

আমরা কেউই সাঁতার জানি না, তাই বড় নৌকা নিলাম ওই ধারণা থেকে, বড় নৌকা ডোবার সম্ভাবনা কম। ছোট ছোট ঢেউয়ে আমাদের নৌকা দুলছিল। প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিলাম বইকি, তারপর সব ঠিক হয়ে যায়। নৌকার মাঝে মাদুর বিছিয়ে তাতে শুয়ে পড়লাম ঠিক তখনই নজরে পড়ল নীল আকাশ। এত নীল আকাশ যা আমি আগে কখনো খেয়াল করিনি। নীল আকাশের নিচ দিয়ে সাদা তুলোর মতো মেঘ বাতাসে ভেসে যাচ্ছে। কিছু দূর থেকে দেখা যাচ্ছে আকাশে পাখির সারি। আকাশে উড়ছে পাখির দল। আমাদের নৌকার কিছু দূর দিয়ে ভটভট শব্দ করে ট্রলার, বড় বড় লঞ্চ, স্পিডবোট যাচ্ছে। আমাদের নৌকার মাঝি ছিল খুব দক্ষ, তাই সে খুব দ্রুত ও সুন্দর করে নৌকা বেয়ে চলছে। চারপাশের দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে, আমি কোনো বইয়ে আঁকা দৃশ্য দেখছি। ঢেউয়ের তালে তালে আমরা এগিয়ে চলছি। তবে বুড়িগঙ্গার কালো পানি দেখে মন খারাপ হলো।

ঢাকা থেকে দেশের অন্যান্য জেলায় জলপথে যাতায়াতের এটিই একমাত্র নদী। দক্ষিণের সঙ্গে দেশের যোগাযোগেরও প্রধান মাধ্যম এ বুড়িগঙ্গা। প্রতিদিন সন্ধ্যায় এখান থেকে দক্ষিণের জেলাগুলোর উদ্দেশে ছেড়ে যায় অসংখ্য লঞ্চ ও জাহাজ। আবার প্রতিদিন সকালে এসে পৌঁছায় তারা। এসব লঞ্চে সৃষ্ট যাবতীয় ময়লা-আবর্জনা নদীতেই ফেলা হয়। এছাড়া পোড়া তেল-মবিল বা জ্বালানি ও টনকে টন মলমূত্র পানিতে মিশে যাচ্ছে। খ্রিষ্টীয় ৭ম শতক থেকে ঢাকায় জনবসতির শুরু। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে ঢাকা বিভিন্ন শাসকের অধীনে ছিল। কখনো রাজত্ব করেছে বৌদ্ধ রাজারা, কখনো সেন, তুর্কি ও আফগানরা। মুঘলরা ঢাকায় আসে ১৬০৮ সালে। এরপর ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শাসনের পথ ধরে আরও ২২৪ বছর। তেরশ বছরের পুরোনো সেই ঢাকা আজ আর নেই।

পুরোনোকে পেছনে ফেলে গড়ে উঠেছে এক নতুন ঢাকা। আজকের ঢাকা আরও প্রসারিত ও বিস্তৃত। বুড়িগঙ্গাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে প্রাচীন ঢাকা।

শুক্রবার নৌভ্রমণ বুড়িগঙ্গা পাকিস্তানি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম