মৌসুমি সততা বিলাস আমজনতার নাভিশ্বাস
হঠাৎ ফেসবুক ইউটিউব সরব। কারও সততা নিয়ে বারবার মোটিভেশনাল স্পিচ ভিডিও প্রচার করে চলেছে। গুণবাচক বিশেষণে একেবারে ঠাসাঠাসি স্তুতি বন্দনা। বলা হচ্ছে- এ যোদ্ধা, সে যোদ্ধা, সিংহপুরুষ! মানবতার ফেরিওয়ালা! অমুক-তমুকের কর্ণধার বিশিষ্ট শিল্পপতি ইত্যাদি ইত্যাদি।
পৃথিবীর সব মানুষ তোষামোদ পছন্দ করেন; যা মানবচরিত্রের স্বভাবসিদ্ধ বৈশিষ্ট্য। নতুন-নতুন তোষামুদে সাহিত্যে হাত পাকিয়ে সরষে তেলেগু সম্প্রদায় আগে রাজা-মহারাজাদের সন্তুষ্ট করে নিজের সুপ্ত অভিলাষিত কামনা-বাসনা পূরণ করে নিতেন। আস্তে-আস্তে এক সময়ে রাজা মহারাজার দৃশ্য-অদৃশ্য প্রভাবক বনে রাজনীতি সমরনীতি ব্যবসানীতি এমন কী হেরেম- বেশ্যানীতি দিয়ে রাজাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলতেন।
সে ঘরানার তোষামুদে বহুমুখী-বহুরূপী ভীষণ পিচ্ছিল প্রজাতিকে কেউই বাগে আনতে পারেনি। সময় পরিস্থিতি বুঝে এ প্রজাতি দেখায় ভানুমতীর খেল! মেখে দেয় যৌনবর্ধক ষণ্ডার তেল। ব্যস বৎস! তুমি যাবে কোথায়?
প্রাচীন-মধ্যযুগ পেরিয়ে আধুনিক যুগে ও বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতায় থেমে নেই এ প্রজাতির দৌরাত্ম্য। কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছে না এ পিচ্ছিল স্বার্থান্ধ প্রজাতিকে। রাজনীতি, সমরনীতি ব্যবসানীতি, সরকারি বেসরকারি দরকারি, বেদরকারি সকলের একই চিন্তা। কী প্রকারে! কী উপায়ে কাঙ্ক্ষিত সিদ্ধিলাভ করা যাবে?
ভীষণ ব্যাপার হচ্ছে তোষামুদে সরষে তৈল সংস্কৃতি নিয়ে চরম অযোগ্য ঘুষখোর মুনাফেক, কালোবাজারি মীরজাফর, রাজন্য জগতশেঠ, খন্দকার মোশতাক ঘরানার চরম হিংসুটে সুযোগসন্ধানী চক্রটি চক্রব্যুহ বানিয়ে দিকে দিকে সব দিকে বসে আছে। দোষে গুণে সবার পথচলা। এ চক্রটি আগেভাগে জেনে নেন, কাঙ্ক্ষিত শিকারের দুর্বল দিকগুলো,ব্যস কেল্লাফতে। যদি এতে কাজ না হয়! সংঘবদ্ধ সন্তর্পণে কাঙ্ক্ষিত শিকারের একমাত্র মলত্যাগের সময় ছাড়া সবখানেই মোসাদ-আইএসআই গোয়েন্দা সংস্থা হয়ে ফাঁদ পেতে রাখেন। এক কথায় সফলতা চাই-ই! ইসরাইল গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের মতো লেগে থাকার নীতিতে কাঙ্ক্ষিত শিকার একদিন জব্দ হবেই।
কাঙ্ক্ষিত শিকার যে মাত্র জব্দ হয়েছে! এবার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। বিজি পলিসি দয়া পলিসি নিষ্ঠুর পলিসি কান্না পলিসি রম্য-গল্প পলিসি আপ্যায়ন পলিসি হঠাৎ রাগ-হাসি পলিসি পার্টি পলিসি, মুহূর্ত পলিসি চিৎকার পলিসি দিয়ে দুই হাতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হয়ে সব লুটেপুটে খেয়ে নেয়। ইঁচড়েপাকা হাত পাকিয়ে নেয়া ধুরন্ধর বস হলে অবশ্য ভিন্ন কথা! এ মহামানব মানবতার ফেরিওয়ালা সেজে দেশ-বিদেশে সরকার-জনগণের সব সম্পদ কখন যে কীভাবে ফেরি করে বিক্রি করেছেন,তা মানবতার ফেরিবাবা ছাড়া কেউ জানেন না।
মানবতার ফেরিবাবা ফেরি করে অনেক সময় ক্লান্ত হয়ে কোনো ষোড়শী সুন্দরী, গৃহবধূর বাড়ি রিসোর্স কিংবা অফিসে মাগুর মাছের ঝোল খেয়ে নারীকোলে মাথা রেখে মানবতা প্রীতি-উপহার দিয়ে জিরিয়ে নেন।
ঘুম হতে উঠে রাজাদের মতো সবাইকে ডেকে নেন,সততার গল্প সুন্দরবনের হরিণ শিকার, আমাজন বনের দিগম্বর মানবের সাক্ষাত, শালীর বোন ভোজালি, তালতো বোন রূপালি, বান্ধবী জুলির অকাল প্রসব বেদনার গল্প নিয়ে সবাই হু হা হো করেন; নীরবে অশ্রুজল ফেলেন।
সতর্ক বহুমুখী-বহুরূপী ধান্ধাবাজ বস এদের মাঝে কাঙ্ক্ষিত তোষামোদ খুঁজে নেন। যে চরম মেরুদণ্ডহীন নপুংসক টাইপ নির্লজ্জ! তার কদর অন্যদের হতে বেশি। যে নিমিষে চরম স্বার্থে ত্যাগ সুখে নিজের স্ত্রী, বোন এমনকী নিজের ষোড়শী কন্যা সঁপে দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না।
এক সময়ে বসের বস হয়ে এ চরম বেহায়া তোষামুদে প্রজাতি সবই শাসন শোষণ করেন। সর্বহারা মাওবাদীদের মতো চাঁদাবাজ হয়ে জনগণের বারোটা বাজিয়ে রাতারাতি গাড়ি-বাড়ি ব্যাংক ব্যালেন্স করে নেন। নিজের সগোত্রের উপ-রাজা নমস্য বন্দনায় আমুদে জীবন পার করে এক সময় সবাইকে সততা বটি খাইয়ে সততার ক্লাস নেন।
সবকিছুই রাতারাতি ভুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে সব সম্ভবের দেশে মোটিভেশনাল সুপারস্টার মানবতার ফেরিওয়ালা বনে যান। কিছু দান দয়া করে লাইভে দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়ে শিকার গেলা অজগরের মতো ফেনা বের করে এদিক-ওদিক তাকিয়ে হারিয়ে যান।
এ বিরল সর্বভুক প্রজাতি আমজনতা চিনে নিতে অনেক দেরি করে ফেলেন। সর্বভুক ভণ্ড প্রাণীটি আমজনতার সরল বিশ্বাস সুযোগ নিয়ে বার বার হারিয়ে করোনার নতুন আপডেট নিয়ে সুযোগ বুঝে মৌসুমি সততা বিলাসে কখন কোথায় কীভাবে মানবতার ফেরিবাবা সেজে সর্বস্বান্ত করেন! তা নির্মম নিয়তি মেনে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান ভুক্তভোগী আমজনতা।
লেখক: রাজীব কুমার দাশ, প্রাবন্ধিক ও কবি, পুলিশ পরিদর্শক
ইমেইল: [email protected]
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
মৌসুমি সততা বিলাস আমজনতার নাভিশ্বাস
হঠাৎ ফেসবুক ইউটিউব সরব। কারও সততা নিয়ে বারবার মোটিভেশনাল স্পিচ ভিডিও প্রচার করে চলেছে। গুণবাচক বিশেষণে একেবারে ঠাসাঠাসি স্তুতি বন্দনা। বলা হচ্ছে- এ যোদ্ধা, সে যোদ্ধা, সিংহপুরুষ! মানবতার ফেরিওয়ালা! অমুক-তমুকের কর্ণধার বিশিষ্ট শিল্পপতি ইত্যাদি ইত্যাদি।
পৃথিবীর সব মানুষ তোষামোদ পছন্দ করেন; যা মানবচরিত্রের স্বভাবসিদ্ধ বৈশিষ্ট্য। নতুন-নতুন তোষামুদে সাহিত্যে হাত পাকিয়ে সরষে তেলেগু সম্প্রদায় আগে রাজা-মহারাজাদের সন্তুষ্ট করে নিজের সুপ্ত অভিলাষিত কামনা-বাসনা পূরণ করে নিতেন। আস্তে-আস্তে এক সময়ে রাজা মহারাজার দৃশ্য-অদৃশ্য প্রভাবক বনে রাজনীতি সমরনীতি ব্যবসানীতি এমন কী হেরেম- বেশ্যানীতি দিয়ে রাজাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলতেন।
সে ঘরানার তোষামুদে বহুমুখী-বহুরূপী ভীষণ পিচ্ছিল প্রজাতিকে কেউই বাগে আনতে পারেনি। সময় পরিস্থিতি বুঝে এ প্রজাতি দেখায় ভানুমতীর খেল! মেখে দেয় যৌনবর্ধক ষণ্ডার তেল। ব্যস বৎস! তুমি যাবে কোথায়?
প্রাচীন-মধ্যযুগ পেরিয়ে আধুনিক যুগে ও বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতায় থেমে নেই এ প্রজাতির দৌরাত্ম্য। কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছে না এ পিচ্ছিল স্বার্থান্ধ প্রজাতিকে। রাজনীতি, সমরনীতি ব্যবসানীতি, সরকারি বেসরকারি দরকারি, বেদরকারি সকলের একই চিন্তা। কী প্রকারে! কী উপায়ে কাঙ্ক্ষিত সিদ্ধিলাভ করা যাবে?
ভীষণ ব্যাপার হচ্ছে তোষামুদে সরষে তৈল সংস্কৃতি নিয়ে চরম অযোগ্য ঘুষখোর মুনাফেক, কালোবাজারি মীরজাফর, রাজন্য জগতশেঠ, খন্দকার মোশতাক ঘরানার চরম হিংসুটে সুযোগসন্ধানী চক্রটি চক্রব্যুহ বানিয়ে দিকে দিকে সব দিকে বসে আছে। দোষে গুণে সবার পথচলা। এ চক্রটি আগেভাগে জেনে নেন, কাঙ্ক্ষিত শিকারের দুর্বল দিকগুলো,ব্যস কেল্লাফতে। যদি এতে কাজ না হয়! সংঘবদ্ধ সন্তর্পণে কাঙ্ক্ষিত শিকারের একমাত্র মলত্যাগের সময় ছাড়া সবখানেই মোসাদ-আইএসআই গোয়েন্দা সংস্থা হয়ে ফাঁদ পেতে রাখেন। এক কথায় সফলতা চাই-ই! ইসরাইল গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের মতো লেগে থাকার নীতিতে কাঙ্ক্ষিত শিকার একদিন জব্দ হবেই।
কাঙ্ক্ষিত শিকার যে মাত্র জব্দ হয়েছে! এবার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। বিজি পলিসি দয়া পলিসি নিষ্ঠুর পলিসি কান্না পলিসি রম্য-গল্প পলিসি আপ্যায়ন পলিসি হঠাৎ রাগ-হাসি পলিসি পার্টি পলিসি, মুহূর্ত পলিসি চিৎকার পলিসি দিয়ে দুই হাতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হয়ে সব লুটেপুটে খেয়ে নেয়। ইঁচড়েপাকা হাত পাকিয়ে নেয়া ধুরন্ধর বস হলে অবশ্য ভিন্ন কথা! এ মহামানব মানবতার ফেরিওয়ালা সেজে দেশ-বিদেশে সরকার-জনগণের সব সম্পদ কখন যে কীভাবে ফেরি করে বিক্রি করেছেন,তা মানবতার ফেরিবাবা ছাড়া কেউ জানেন না।
মানবতার ফেরিবাবা ফেরি করে অনেক সময় ক্লান্ত হয়ে কোনো ষোড়শী সুন্দরী, গৃহবধূর বাড়ি রিসোর্স কিংবা অফিসে মাগুর মাছের ঝোল খেয়ে নারীকোলে মাথা রেখে মানবতা প্রীতি-উপহার দিয়ে জিরিয়ে নেন।
ঘুম হতে উঠে রাজাদের মতো সবাইকে ডেকে নেন,সততার গল্প সুন্দরবনের হরিণ শিকার, আমাজন বনের দিগম্বর মানবের সাক্ষাত, শালীর বোন ভোজালি, তালতো বোন রূপালি, বান্ধবী জুলির অকাল প্রসব বেদনার গল্প নিয়ে সবাই হু হা হো করেন; নীরবে অশ্রুজল ফেলেন।
সতর্ক বহুমুখী-বহুরূপী ধান্ধাবাজ বস এদের মাঝে কাঙ্ক্ষিত তোষামোদ খুঁজে নেন। যে চরম মেরুদণ্ডহীন নপুংসক টাইপ নির্লজ্জ! তার কদর অন্যদের হতে বেশি। যে নিমিষে চরম স্বার্থে ত্যাগ সুখে নিজের স্ত্রী, বোন এমনকী নিজের ষোড়শী কন্যা সঁপে দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না।
এক সময়ে বসের বস হয়ে এ চরম বেহায়া তোষামুদে প্রজাতি সবই শাসন শোষণ করেন। সর্বহারা মাওবাদীদের মতো চাঁদাবাজ হয়ে জনগণের বারোটা বাজিয়ে রাতারাতি গাড়ি-বাড়ি ব্যাংক ব্যালেন্স করে নেন। নিজের সগোত্রের উপ-রাজা নমস্য বন্দনায় আমুদে জীবন পার করে এক সময় সবাইকে সততা বটি খাইয়ে সততার ক্লাস নেন।
সবকিছুই রাতারাতি ভুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে সব সম্ভবের দেশে মোটিভেশনাল সুপারস্টার মানবতার ফেরিওয়ালা বনে যান। কিছু দান দয়া করে লাইভে দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়ে শিকার গেলা অজগরের মতো ফেনা বের করে এদিক-ওদিক তাকিয়ে হারিয়ে যান।
এ বিরল সর্বভুক প্রজাতি আমজনতা চিনে নিতে অনেক দেরি করে ফেলেন। সর্বভুক ভণ্ড প্রাণীটি আমজনতার সরল বিশ্বাস সুযোগ নিয়ে বার বার হারিয়ে করোনার নতুন আপডেট নিয়ে সুযোগ বুঝে মৌসুমি সততা বিলাসে কখন কোথায় কীভাবে মানবতার ফেরিবাবা সেজে সর্বস্বান্ত করেন! তা নির্মম নিয়তি মেনে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান ভুক্তভোগী আমজনতা।
লেখক: রাজীব কুমার দাশ, প্রাবন্ধিক ও কবি, পুলিশ পরিদর্শক
ইমেইল: [email protected]