রং, তুলি ও কাগজের মাধ্যমে মানুষের বিবেককে জাগ্রত করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা রণজিত নিয়োগী
মঞ্জুশ্রী নিয়োগী দাশগুপ্তা
১২ জানুয়ারি ২০২২, ২১:৪০:৫৫ | অনলাইন সংস্করণ
১১ জানুয়ারি চিত্রশিল্পী, মুক্তিযোদ্ধা রণজিত নিয়োগীর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। তাকে নিয়ে লিখেছেন - মঞ্জুশ্রী নিয়োগী দাশগুপ্তা
রণজিত নিয়োগী ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, মানবতাবাদী, শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন কবি ও চিত্র শিল্পী। তিনি শেরপুর জেলার প্রয়াত বিপ্লবী রবি নিয়োগী ও বিপ্লবী জ্যোৎস্না নিয়োগীর জ্যোষ্ঠ ছেলে।
তিনি ২০১৬ সালের ১১ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১ টা ২০ মিনিটে ৭৫ বছর বয়সে মারা যান। তার মৃত্যুতে শেরপুর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। তার বাবা রবি নিয়োগী ময়মনসিংহ জেলায় কমিউনিস্ট পার্টি গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন।
কালাপানি খ্যাত আন্দামান জেলফেরত বিপ্লবী রবি নিয়োগী ব্রিটিশ পাকিস্তান ও বাংলাদেশের স্বৈরাচারী সরকারের শাসনামলে বিভিন্ন কারাগারে ৩৪ বছর ও ১১ বছর গৃহঅন্তরীণ অবস্থায় কাটিয়েছেন।
মা জ্যোৎস্না নিয়োগী ’৪৮ ও ’৫৪ সালে ৮ বছর কারাভোগ করেন। বাবা-মায়ের আদর্শে আজন্ম লালিত রণজিত অল্প বয়সেসই সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তার মায়ের উদ্যোগ ’৫৪ সালে শেরপুর চকবাজারে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মাণ হয়।
এই শহিদ মিনার নির্মাণ কমিটিতে প্রগতিশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে মাত্র ১২ বছর বয়সে রণজিত ও ছোট বোন মঞ্জুশ্রী নিয়োগীও অংশ নিয়েছিলেন। বর্তমানে এই ভিতের উপর নতুন রূপে নির্মিত শহিদ মিনার সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে।
১০ বছর বয়সে বিদ্যালয়ের দেয়াল পত্রিকায় প্রথম তার কবিতা ছাপা হয়। ১৯৫৯ সালে শেরপুর গোবিন্দ কুমার পিস মেমোরিয়াল বিদ্যালয় থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। চিত্র অংকন বিষয়ে আগ্রহ দেখে বাবা-মা তাকে ঢাকায় সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি করেন।
মেধা ও অধ্যবসায়ের গুণে রণজিত অল্প সময়েই শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও অন্যান্য শিক্ষকদের প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন। আর্ট কলেজে শিক্ষা গ্রহণের সাথে সাথে তিনি কবিতা চর্চা অব্যাহত রাখেন। ১৯৬৩ সাল থেকে ’৭০ সাল পর্যন্ত তার লেখা কবিতা নিয়মিত দৈনিক আজাদ, সংবাদ, বাংলার বাণী প্রভৃতি পত্রিকার সাহিত্য পাতায় এবং বিভিন্ন সাহিত্য সংকলনে প্রকাশ হয়।
১৯৬৪ সালে চারুকলা থেকে স্নাতক করেন। তিনি ১৯৬৬ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রধান শিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
’৬৯ সালে গণআন্দোলনে অন্যান্য চিত্রশিল্পীদের সঙ্গে তিনিও বিক্ষুব্ধ চিত্র, কার্টুন অঙ্কন করে গণআন্দোলনকে বেগবান করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল রাতে আজাদ পত্রিকা অফিসে অবরুদ্ধ থেকে তিনি গোলাগুলি, শেল নিক্ষেপের শব্দ ও মানুষজনের আত্মচিৎকার শুনে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। ২৬ মার্চ রাস্তায় বের হয়ে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সেই বিভীষিকাময় হত্যাযজ্ঞের নারকীয় দৃশ্য অবলোকন করেন। রণজিত বহুকষ্টে পায়ে হেঁটে নারায়ণগঞ্জে কাকা প্রকৌশলী পরেশ গুপ্তের বাসায় পৌঁছান।
সেখান থেকে কাকার পরিবারের সাথে বহু বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে কলকাতায় যান। কলকাতায় পৌঁছে তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির পশ্চিমবঙ্গ শাখার নেত্রী কমলা মুখার্জির বাসায় আশ্রয় নেন।
বাংলাদেশ-সহায়ক শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সমিতি ও বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামী শিল্পী সংস্থায় চিত্রশিল্পী হিসেবে যোগদান করেন। রণজিত নিয়োগী বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলের মানচিত্র এঁকে সেগুলো মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের হাতে পৌঁছে দিতেন।
বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বর্বর গণহত্যার চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার লক্ষ্যে কলকাতা আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ চিন্তামণি কর ও পটুয়া কামরুল হাসান বাংলাদেশের স্বনামধন্য চিত্রশিল্পীদের আঁকা ছবি নিয়ে একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭১ সালের ১ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বরে কলকাতার বিড়লা একাডেমিতে 'Exhibition of Paintings and Drawings by Artists of Bangladesh' শিরোনামে একটি চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়।
এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবী সংগঠন ‘বাংলাদেশ-সহায়ক শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সমিতি’। এই প্রদর্শনীর কাজে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছিল কলিকাতার বিভিন্ন প্রাইভেট লিমিটেড।
এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছিলেন ভারতবর্ষের প্রখ্যাত ভাস্কর দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী। এই প্রদর্শনীতে পটুয়া কামরুল হাসান, পাপেট শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, দেবদাস চক্রবর্তী, প্রাণেশ মন্ডল, রণজিত নিয়োগী, বীরেন সোম সহ ১৭ জন চিত্রশিল্পীর ৬৬টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল। সেখানে রণজিত নিয়োগীর আঁকা ৫টি চিত্রকর্ম স্থান পায়। কলকাতা, দিলি, মুম্বাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এই একই চিত্র প্রদর্শনী প্রদর্শিত হয়।
এই প্রর্দশনী মানুষের মনে অভূতপূর্ব সাড়া জাগিয়েছিল। বাংলাদেশের শিল্পীরা মুক্তিযুদ্ধে প্রমাণ করেছিলেন রং, তুলি ও কাগজের মাধ্যমেও অন্যায়ের প্রতিবাদ করে বিশ্ব বিবেক জাগ্রত করা যায়। সম্পৃক্ত করা যায় বিশ্ববাসীকে।
মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলে চিত্রকর্মগুলোর বড় একটি অংশ হারিয়ে গেলেও কয়েকটি চিত্র যুক্তরাষ্ট্রের একটি আর্কাইভে সংরক্ষিত ছিল। লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির নিজ দায়িত্বে ৭টি চিত্রকর্ম বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। চিত্র গুলো সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টিদের হাতে তুলে দেন। এই ৭টি চিত্রকর্মের মধ্যে রণজিত নিয়োগীর আঁকা একটি চিত্রকর্ম রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের মনীষা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত কবি বিষ্ণু দে সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থ ‘বাংলাদেশের কবিতা- একগুচ্ছ’ বইটির প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেন তিনি। এই বইটিতে তার কবিতাও স্থান পেয়েছিল।
শেরপুর উদীচীর প্রকাশনায় এবং রণজিত নিয়োগীর প্রচ্ছদ ও সম্পাদনায় ‘মৃৎ’ ও ‘বজ্রে বাজে বাঁশি’ নামে দুটি লিটল ম্যাগাজিনের বেশ কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
রং, তুলি ও কাগজের মাধ্যমে মানুষের বিবেককে জাগ্রত করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা রণজিত নিয়োগী
১১ জানুয়ারি চিত্রশিল্পী, মুক্তিযোদ্ধা রণজিত নিয়োগীর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। তাকে নিয়ে লিখেছেন - মঞ্জুশ্রী নিয়োগী দাশগুপ্তা
রণজিত নিয়োগী ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, মানবতাবাদী, শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন কবি ও চিত্র শিল্পী। তিনি শেরপুর জেলার প্রয়াত বিপ্লবী রবি নিয়োগী ও বিপ্লবী জ্যোৎস্না নিয়োগীর জ্যোষ্ঠ ছেলে।
তিনি ২০১৬ সালের ১১ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১ টা ২০ মিনিটে ৭৫ বছর বয়সে মারা যান। তার মৃত্যুতে শেরপুর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। তার বাবা রবি নিয়োগী ময়মনসিংহ জেলায় কমিউনিস্ট পার্টি গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন।
কালাপানি খ্যাত আন্দামান জেলফেরত বিপ্লবী রবি নিয়োগী ব্রিটিশ পাকিস্তান ও বাংলাদেশের স্বৈরাচারী সরকারের শাসনামলে বিভিন্ন কারাগারে ৩৪ বছর ও ১১ বছর গৃহঅন্তরীণ অবস্থায় কাটিয়েছেন।
মা জ্যোৎস্না নিয়োগী ’৪৮ ও ’৫৪ সালে ৮ বছর কারাভোগ করেন। বাবা-মায়ের আদর্শে আজন্ম লালিত রণজিত অল্প বয়সেসই সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তার মায়ের উদ্যোগ ’৫৪ সালে শেরপুর চকবাজারে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মাণ হয়।
এই শহিদ মিনার নির্মাণ কমিটিতে প্রগতিশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে মাত্র ১২ বছর বয়সে রণজিত ও ছোট বোন মঞ্জুশ্রী নিয়োগীও অংশ নিয়েছিলেন। বর্তমানে এই ভিতের উপর নতুন রূপে নির্মিত শহিদ মিনার সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে।
১০ বছর বয়সে বিদ্যালয়ের দেয়াল পত্রিকায় প্রথম তার কবিতা ছাপা হয়। ১৯৫৯ সালে শেরপুর গোবিন্দ কুমার পিস মেমোরিয়াল বিদ্যালয় থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। চিত্র অংকন বিষয়ে আগ্রহ দেখে বাবা-মা তাকে ঢাকায় সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি করেন।
মেধা ও অধ্যবসায়ের গুণে রণজিত অল্প সময়েই শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও অন্যান্য শিক্ষকদের প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন। আর্ট কলেজে শিক্ষা গ্রহণের সাথে সাথে তিনি কবিতা চর্চা অব্যাহত রাখেন। ১৯৬৩ সাল থেকে ’৭০ সাল পর্যন্ত তার লেখা কবিতা নিয়মিত দৈনিক আজাদ, সংবাদ, বাংলার বাণী প্রভৃতি পত্রিকার সাহিত্য পাতায় এবং বিভিন্ন সাহিত্য সংকলনে প্রকাশ হয়।
১৯৬৪ সালে চারুকলা থেকে স্নাতক করেন। তিনি ১৯৬৬ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রধান শিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
’৬৯ সালে গণআন্দোলনে অন্যান্য চিত্রশিল্পীদের সঙ্গে তিনিও বিক্ষুব্ধ চিত্র, কার্টুন অঙ্কন করে গণআন্দোলনকে বেগবান করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল রাতে আজাদ পত্রিকা অফিসে অবরুদ্ধ থেকে তিনি গোলাগুলি, শেল নিক্ষেপের শব্দ ও মানুষজনের আত্মচিৎকার শুনে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। ২৬ মার্চ রাস্তায় বের হয়ে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সেই বিভীষিকাময় হত্যাযজ্ঞের নারকীয় দৃশ্য অবলোকন করেন। রণজিত বহুকষ্টে পায়ে হেঁটে নারায়ণগঞ্জে কাকা প্রকৌশলী পরেশ গুপ্তের বাসায় পৌঁছান।
সেখান থেকে কাকার পরিবারের সাথে বহু বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে কলকাতায় যান। কলকাতায় পৌঁছে তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির পশ্চিমবঙ্গ শাখার নেত্রী কমলা মুখার্জির বাসায় আশ্রয় নেন।
বাংলাদেশ-সহায়ক শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সমিতি ও বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামী শিল্পী সংস্থায় চিত্রশিল্পী হিসেবে যোগদান করেন। রণজিত নিয়োগী বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলের মানচিত্র এঁকে সেগুলো মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের হাতে পৌঁছে দিতেন।
বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বর্বর গণহত্যার চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার লক্ষ্যে কলকাতা আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ চিন্তামণি কর ও পটুয়া কামরুল হাসান বাংলাদেশের স্বনামধন্য চিত্রশিল্পীদের আঁকা ছবি নিয়ে একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭১ সালের ১ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বরে কলকাতার বিড়লা একাডেমিতে 'Exhibition of Paintings and Drawings by Artists of Bangladesh' শিরোনামে একটি চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়।
এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবী সংগঠন ‘বাংলাদেশ-সহায়ক শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সমিতি’। এই প্রদর্শনীর কাজে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছিল কলিকাতার বিভিন্ন প্রাইভেট লিমিটেড।
এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছিলেন ভারতবর্ষের প্রখ্যাত ভাস্কর দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী। এই প্রদর্শনীতে পটুয়া কামরুল হাসান, পাপেট শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, দেবদাস চক্রবর্তী, প্রাণেশ মন্ডল, রণজিত নিয়োগী, বীরেন সোম সহ ১৭ জন চিত্রশিল্পীর ৬৬টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল। সেখানে রণজিত নিয়োগীর আঁকা ৫টি চিত্রকর্ম স্থান পায়। কলকাতা, দিলি, মুম্বাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এই একই চিত্র প্রদর্শনী প্রদর্শিত হয়।
এই প্রর্দশনী মানুষের মনে অভূতপূর্ব সাড়া জাগিয়েছিল। বাংলাদেশের শিল্পীরা মুক্তিযুদ্ধে প্রমাণ করেছিলেন রং, তুলি ও কাগজের মাধ্যমেও অন্যায়ের প্রতিবাদ করে বিশ্ব বিবেক জাগ্রত করা যায়। সম্পৃক্ত করা যায় বিশ্ববাসীকে।
মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলে চিত্রকর্মগুলোর বড় একটি অংশ হারিয়ে গেলেও কয়েকটি চিত্র যুক্তরাষ্ট্রের একটি আর্কাইভে সংরক্ষিত ছিল। লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির নিজ দায়িত্বে ৭টি চিত্রকর্ম বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। চিত্র গুলো সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টিদের হাতে তুলে দেন। এই ৭টি চিত্রকর্মের মধ্যে রণজিত নিয়োগীর আঁকা একটি চিত্রকর্ম রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের মনীষা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত কবি বিষ্ণু দে সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থ ‘বাংলাদেশের কবিতা- একগুচ্ছ’ বইটির প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেন তিনি। এই বইটিতে তার কবিতাও স্থান পেয়েছিল।
শেরপুর উদীচীর প্রকাশনায় এবং রণজিত নিয়োগীর প্রচ্ছদ ও সম্পাদনায় ‘মৃৎ’ ও ‘বজ্রে বাজে বাঁশি’ নামে দুটি লিটল ম্যাগাজিনের বেশ কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।