হোমিও চিকিৎসায় রোগ নির্মূল সম্ভব, তবে...

 মনোজ সরকার 
৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৫৬ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

হোমিওপ্যাথিকে সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করা হয়। ৫ হাজার বছর আগে থেকেই আয়ুর্বেদিক, শল্য, ইউনানি চিকিৎসার দাপট থাকলেও মাত্র ২০০ বছর আগে হোমিওপ্যাথি পদ্ধতির প্রচলন শুরু হয়। এখনো অনেকের হোমিওপ্যাথির ওপর আস্থা নেই। আর এ পদ্ধতি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে।

তবে যে যাই বলুক, হোমিওপ্যাথি এক উত্তম চিকিৎসা পদ্ধতির নাম; যা মানুষের রোগকে নির্মূল করে। হোমিওপ্যাথির কাজ এত গভীর সত্যিই অবাক হবার মতো। অবশ্য অনেকেই হোমিওপ্যাথিতে আস্থা আনতে পারেননি। তাদের মতে- অনেক চিকিৎসা করেছি কিন্তু হোমিওতে কোনো সুফল পাইনি। এটা স্বাভাবিক। অনেকের হোমিও ওষুধে কোনো কাজই হয়নি। আর এটা হোমিও পদ্ধতি ও ওষুধের জন্য নয়; চিকিৎসকের জন্য। তিনি রোগ সম্পর্কে বুঝতে পারেননি। সঠিক রোগের সঠিক ওষুধ প্রয়োগ হলে রোগ নির্মূল সম্ভব।

শতকরা ৭০-৮০ ভাগ রোগী এই চিকিৎসায় সুফল পেয়ে থাকেন বলে দাবি করেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকরা। তবে অনেককে দেখেছি হোমিওর মূলনীতি থেকে সরে গিয়ে দুই-একটি বই আয়ত্ত করে চিকিৎসক সেজে বসে আছেন। তারা সঠিক রোগ বা লক্ষণ নির্বাচনেও অক্ষম। তাদের কাছে রোগী গেলে হোমিওপ্যাথির বদনাম হবেই হবে।

এক সময় আমারও আস্থা ছিল না এ পদ্ধতির ওপর। মনে হতো- হোমিও পদ্ধতি একটি প্লাসিবো। রোগীকে এমন ওষুধ বা ব্যবস্থাপনা দেওয়া, যার বাস্তবে রোগের সঙ্গে কোনো সম্পর্কই নেই। শুধুমাত্র মনের জোরেই রোগমুক্তি হয়। তবে হোমিওপ্যাথি যে একটি আরোগ্য বিধান; তা আমি নিজেই উপলব্ধি করেছি। তার একটি ঘটনা সম্পর্কে না বললেই নয়।

বেশ কয়েক বছর আগে মাঝে-মধ্যেই কোমরের ব্যথায় ভুগতাম। কোমর সোজা করতে পারতাম না। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি; পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করিয়েছি। ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী অনেক ব্যথার ওষুধ খেয়েছি। ওষুধ খেলে ভালো থাকি; বন্ধ করলে যা তাই। যৌবনকালেই এ অবস্থা; বৃদ্ধ বয়সে কী হবে- চিন্তাটা পেয়ে বসেছিল তখন। ওই সময় একজন বৃদ্ধ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসককে চিনতাম; ভালো সম্পর্কও ছিল তার সঙ্গে। মাঝে মধ্যে আড্ডাও দিতাম তার সঙ্গে। একদিন কোমরের ব্যথার বিষয়টি তাকে জানালাম। তিনি আমাকে দুই ফোটা ওষুধ আমার জিহ্বার দিয়ে বললেন- আর দুদিন কষ্ট করো। তখন হোমিওপ্যাথির ওপর আমার কোনো আস্থা ছিল না। তবু তার অনুরোধ ফেলতে পারিনি।

পরদিন সকালে কোমরের ব্যথা এত বেড়ে গেল যে বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারলাম না। বিকালের দিকে কোনোরকমে ওই বৃদ্ধ চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে তার সঙ্গে খুব রাগারাগি করলাম। তখন তিনি আমাকে আরও দুই ফোটা ওষুধ দিলেন (পরে জেনেছিলাম পরের ওষুধটা ছিল শুধু স্পিরিট। ওই মুহূর্তে আমাকে শান্ত রাখার কৌশল)। দুই দিন পর কোমর ব্যথার বিষয়টি ভুলেই গেলাম; সেই সঙ্গে ভুলে গেলাম সেই বৃদ্ধ চিকিৎসককেও। কারণ আমার কোমরে আর কোনো ব্যথা নেই। এ পর্যন্ত আর সেই ব্যথা হয়নি। অসুখ না থাকলে কেউ চিকিৎসকের খবর রাখে না- সেটাই প্রমাণিত হলো।

এ ঘটনার বেশ কয়েক বছর পর ওই বৃদ্ধ চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা। তখন তার ও তার দেওয়া সেই দুই ফোটা ওষুধের গুণের কথা মনে পড়ল। জানলাম, ভালো চিকিৎসক হলেও তিনি পসার জমাতে পারেননি। কেন পারেননি তা জানি না; তবে তার দুই ফোটা ওষুধে আমি কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়েছি। কষ্টভোগের শিকার না হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজনও পড়ে না বলে তাকেও আর মনে রাখিনি আমি।

এখন হোমিও চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর আস্থা ফিরেছে। অনেক চিন্তা-ভাবনাও করেছি এ পদ্ধতি নিয়ে; কথা বলেছি এ পদ্ধতির পক্ষে-বিপক্ষের অনেকের সঙ্গে।

সম্প্রতি একটি হোমিও কলেজের প্রভাষক ডা. জাকির হোসেন নামে এক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা হয়। কথায় কথায় তিনি জানান, হোমিওপ্যাথিতে ওষুধ অনেক আছে; চিকিৎসক কম।

তিনি বলেন, হোমিওপ্যাথি মূলত এমন একটি বিধান যা ‘সদৃশ সদৃশকে আরোগ্য’ করে। লক্ষণ মিলিয়ে সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করলে হোমিওতে রোগ নির্মূল করা সম্ভব। অবশ্য ক্রনিক রোগ নির্মূলে সময় বেশি লাগে বলে রোগীরা অধৈর্য হয়ে পড়েন। বিষয়টি যারা বোঝেন- তারা ধৈর্য ধরে চিকিৎসা নেন। আবার অনেকে মাঝপথে চিকিৎসা ছেড়ে দিয়ে হোমিও বিধানের বদনাম করেন।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন