অপসংস্কৃতি তরুণদের যেভাবে ধ্বংস করছে
জীবন ও সংস্কৃতি একে অপরের পরিপূরক। সংস্কৃতি ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ। কোনো ব্যক্তি, কোনো সমাজ কিংবা কোনো জনগোষ্ঠীই তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে অস্বীকার করতে পারে না। সংস্কৃতিই একটি জাতির পরিচয়। সংস্কৃতিই একটি জাতিসত্তার অস্তিত্বের কারণ।
বেঁচে থাকার জন্য মানুষের নৈমিত্তিক প্রচেষ্টা হলো সংস্কৃতি। অপরদিকে অপসংস্কৃতি হলো এর বিপরীত। অপসংস্কৃতি মানুষের জন্য অভিশাপ স্বরূপ। এটি মানুষের জীবনকে কলুষিত করে এবং জীবনের সৌন্দর্যের বিকাশকে স্তব্ধ করে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করে।
বলা যায়, সংস্কৃতি মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আজ বিশ্বের দিকে দিকে চলছে শিক্ষা ও সংস্কৃতির যুদ্ধ। কোনো সংস্কৃতি যখন ভালো কার্যকলাপে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে এবং নৈতিকতা বিবর্জিত হয় তখন তা অপসংস্কৃতি বলে চিহ্নিত হয়। এ অপসংস্কৃতির প্রভাবে জাতি তার নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলে এবং তরুণ সমাজ হয় বিপথগামী। চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছদ, জীবন নির্বাহের যাবতীয় রীতিনীতি অপসংস্কৃতির কারণে অধঃপতন ঘটছে।
অপসংস্কৃতি সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে আমাদের জানা প্রয়োজন সংস্কৃতি কী? সংস্কৃতি কাকে বলে? সংস্কৃতি বলতে আমরা কী বুঝি? প্রথমে সংস্কৃতি সর্ম্পকে আলোচনা করি। পরে মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। শাব্দিক অর্থে সংস্কৃতি হচ্ছে- সংস্কৃতি ইংরেজি শব্দ ‘Culture’ শব্দের বাংলা রূপ। সংস্কৃতির আরো খাঁটি বাংলা হচ্ছে ‘কৃষ্টি’। আর এই কৃষ্টি শব্দের অর্থ ‘কর্ষণ, বা ‘চাষ’।
ষোলো শতকের শেষের দিকে ফ্রান্সিস বেকন সর্বপ্রথম ইংরেজি সাহিত্যে ‘Culture’ শব্দটি ব্যবহার করেন। ঊনিশ শতকের মাঝামাঝিতে ওয়াল্ড ইমার্ঘন ‘Culture’ কে পূর্ণ রূপে ব্যাখ্যা করেন। সাধারণ অর্থে সংস্কৃতি বলতে আমরা নাচ, গান নাটক, নৃত্য, আবৃত্তি, কৌতুক ইত্যাদিকে বুঝি। একটা জাতির দীর্ঘদিনের জীবনাচরণের ভেতর দিয়ে যে মানবিক মূল্যবোধ সুন্দরের পথে কল্যাণের পথে এগিয়ে চলে তাই সংস্কৃতি। সংস্কৃতি স্থবির নয়। এগিয়ে চলাই তার ধর্ম।
সংস্কৃতিকে কোন নির্দিষ্ট ছকে বাঁধা যায় না। সংস্কৃতির নিজস্ব স্বকীয়তা আছে। দেশ-কাল-জাতি ভেদে সংস্কৃতি ভিন্ন রকম হয়। সংস্কৃতির মূল কথা হলো সুন্দরভাবে বাঁচা। কিন্তু সমাজ বিজ্ঞানে সংস্কৃতি প্রত্যয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। এখানে সংস্কৃতি অর্থ মানুষের যাবতীয় সৃষ্টি বা বংশ, পরম্পরায় উত্তরাধিকার সূত্রে মানব সমাজে বর্তায় এবং বিদ্যমান থাকে।
অনেকই বলছেন ‘সংস্কৃতি হচ্ছে সেই সমষ্টি যা সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষের অর্জিত জ্ঞান, বিশ্বাস, শিল্পকলা, নৈতিকতা, আইন, রীতিনীতি এবং অন্য যে কোনো দাতা ও অভ্যাসের জটিল সমষ্টি।’ সমাজবিজ্ঞানী রসের মতে, ‘সকল বস্তু ও অবস্তুর কৌশল হচ্ছে সংস্কৃতি।’ কালমার্কস বলেন, ‘অর্থনৈতিক ভিত্তির বিশেষ কাঠামোই হচ্ছে সংস্কৃতি।’ ম্যাথিউ আর নল্ডের মতে, ‘সংস্কৃতি হচ্ছে খাঁটি হওয়া বা মার্জিত হওয়া বা রুচিশীল হওয়া।’
আর অপসংস্কৃতি বলতে আমরা সংস্কৃতির ঠিক উল্টোটাকে বুঝি। সংস্কৃতির বিকৃত রূপ হচ্ছে অপসংস্কৃতি। সংস্কৃতির কাজ জীবনকে বিকশিত করা, চিত্তকে আনন্দিত করা, মানুষকে প্রেমবান করা। আর অপসংস্কৃতি মানুষের জীবনকে কলুষময় করে। চেতনাকে নষ্ট করে। জীবনকে নাশ করে। স্থায়ীভাবে মনোমুগ্ধকর, আকর্ষণীয়, মোহনীয় ও হৃদয়গ্রাহী হলেও এ থেকে কোন ফল পাওয়া যায় না। অপসংস্কৃতি মানুষকে খারাপ কাজের দিকে টেনে নেয়।
আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করি তা যদি দেশকে ভালোবাসতে না শেখায়, জীবনকে প্রেমময় না করে, মানুষের প্রতি দরদি না করে, তাহলে সে শিক্ষা হলো অপশিক্ষা আর অপশিক্ষার পথ ধরে অপসংস্কৃতি আমাদের সমাজে শিকড় গাড়ে। আমাদের সমাজের অভ্যান্তরে যে অপসংস্কৃতি হিংস্র থাবা বিস্তার করে আছে তা সহজেই অনুমেয়। বর্তমানে আমরা আমাদের রীতিনীতি, দেশের মূল্যবোধ বিসর্জন দিতে শুরু করেছি।
আমাদের সমাজের রগে রগে যে অপসংস্কৃতি প্রবেশ করছে তা আজকের তরুণ-তরুণীদের পোশাক-আশাক, আচার-আচরণ, চাল-চলন দেখলেই বুঝা যায়। তারা দেশীয় আবহাওয়ায় বড় হয়ে দেশী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিসর্জন দিয়ে বিদেশি জীবনবোধের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছে। পাশ্চাত্যের অনুগামী হয়ে ডিসকো নাচ, গান, অশ্লীল ছায়াছবি ও নীল ছবির দর্শনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। এসব নাচ, গান আর পোশাক আশাকের সাথে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির কোনো মিল নেই।
সংস্কৃতি যেখানে মানুষকে সুন্দরের পথ দেখায়, সেখানে অপসংস্কৃতি মানুষকে অসুন্দর করে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। অপসংস্কৃতি স্থায়ী নয় তা ক্ষণিকের জন্য উত্তেজক। কোন জাতি বা দেশের ভেতর একবার অপসংস্কৃতি ঢুকলে তা অপসারণ করা খুবই কঠিন। অপসংস্কৃতি বিবেকের দরজায় তালা লাগায়। মানুষকে তার মা, মাটি ও দেশ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।
আমরা অনেকে বিদেশি সংস্কৃতিকে অপসংস্কৃতি বলে থাকি। আসলে কিন্তু তা নয়। কাজেই বিদেশি সংস্কৃতি মানেই অপসংস্কৃতি নয়, যদি তা আমাদের জীবনকে বিপথে পরিচালিত না করে। যে সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে বিপথে পরিচালিত করে সেটাই হলো অপসংস্কৃতি। সেটা দেশি বা বিদেশি হোক।
একটি দেশের ভবিষ্যত হলো সেই দেশের তরুণ সমাজ। অপসংস্কৃতির হিংস্র ছোবলে এ তরুণ সমাজ যদি বিপথগ্রামী হয়, তাহলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঢেকে যাবে। আমাদের দেশের তরুণ সমাজ সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির সয়লাবে ভেসে যাচ্ছে। আমাদের সমাজের তরুণ-তরুণীদের ওপর অপসংস্কৃতির কু-প্রভাব অতি গভীরও ব্যাপক।
আজ আমাদের সমাজের তরুণ-তরুণীরা সিনেমার যৌন সুরসুরিমূলক সস্তা কাহিনী, নাচ-গান, পোশাক-আশাক অন্ধভাবে অনুকরণ করতে গিয়ে অপসংস্কৃতির শিকার হচ্ছে। বর্তমানে টেলিভিশন, সিনেমা, ভিডিও, ভিসিডিতে যেসব ছবি প্রদর্শন করা হচ্ছে তার অধিকাংশই আমাদের মনমানসিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অথচ এসব অশ্লীল ছবি আমাদের কোমলমতি তরুণ-তরুণীদের কাছে অতি প্রিয় হয়ে গেছে। আমাদের তরুণ সমাজ আজ এসব অপসংস্কৃতির স্রোতে গা-ভাসিয়ে দিচ্ছে।
তাই তরুণ সমাজকে অপসংস্কৃতির হাত থেকে বাঁচাতে হলে অচিরেই আমাদের সমাজ থেকে অপসংস্কৃতির প্রভাব দূর করতে হবে এবং শিক্ষিত সমাজকে সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। বিদেশি কোন সংস্কৃতি গ্রহণ করার পূর্বে দেখতে হবে তা আমাদের জীবন গঠনে কতটুকু সহায়ক। যদি সহায়ক হয় তাহলে আমদানি করবে অন্যথায় বর্জন করবে। বর্তমানে যে সিনেমা হলগুলোতে অশ্লীল ছবি প্রদর্শন করা হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। আমাদের তরুণ সমাজ যেহেতু জাতির কর্ণদ্বার, সেহেতু তারা অপসংস্কৃতি গ্রহণ করার পূর্বেই তাদের সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান দিতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
অপসংস্কৃতি তরুণদের যেভাবে ধ্বংস করছে
হাসান আল বান্না
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:২২:২৭ | অনলাইন সংস্করণ
জীবন ও সংস্কৃতি একে অপরের পরিপূরক। সংস্কৃতি ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ। কোনো ব্যক্তি, কোনো সমাজ কিংবা কোনো জনগোষ্ঠীই তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে অস্বীকার করতে পারে না। সংস্কৃতিই একটি জাতির পরিচয়। সংস্কৃতিই একটি জাতিসত্তার অস্তিত্বের কারণ।
বেঁচে থাকার জন্য মানুষের নৈমিত্তিক প্রচেষ্টা হলো সংস্কৃতি। অপরদিকে অপসংস্কৃতি হলো এর বিপরীত। অপসংস্কৃতি মানুষের জন্য অভিশাপ স্বরূপ। এটি মানুষের জীবনকে কলুষিত করে এবং জীবনের সৌন্দর্যের বিকাশকে স্তব্ধ করে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করে।
বলা যায়, সংস্কৃতি মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আজ বিশ্বের দিকে দিকে চলছে শিক্ষা ও সংস্কৃতির যুদ্ধ। কোনো সংস্কৃতি যখন ভালো কার্যকলাপে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে এবং নৈতিকতা বিবর্জিত হয় তখন তা অপসংস্কৃতি বলে চিহ্নিত হয়। এ অপসংস্কৃতির প্রভাবে জাতি তার নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলে এবং তরুণ সমাজ হয় বিপথগামী। চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছদ, জীবন নির্বাহের যাবতীয় রীতিনীতি অপসংস্কৃতির কারণে অধঃপতন ঘটছে।
অপসংস্কৃতি সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে আমাদের জানা প্রয়োজন সংস্কৃতি কী? সংস্কৃতি কাকে বলে? সংস্কৃতি বলতে আমরা কী বুঝি? প্রথমে সংস্কৃতি সর্ম্পকে আলোচনা করি। পরে মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। শাব্দিক অর্থে সংস্কৃতি হচ্ছে- সংস্কৃতি ইংরেজি শব্দ ‘Culture’ শব্দের বাংলা রূপ। সংস্কৃতির আরো খাঁটি বাংলা হচ্ছে ‘কৃষ্টি’। আর এই কৃষ্টি শব্দের অর্থ ‘কর্ষণ, বা ‘চাষ’।
ষোলো শতকের শেষের দিকে ফ্রান্সিস বেকন সর্বপ্রথম ইংরেজি সাহিত্যে ‘Culture’ শব্দটি ব্যবহার করেন। ঊনিশ শতকের মাঝামাঝিতে ওয়াল্ড ইমার্ঘন ‘Culture’ কে পূর্ণ রূপে ব্যাখ্যা করেন। সাধারণ অর্থে সংস্কৃতি বলতে আমরা নাচ, গান নাটক, নৃত্য, আবৃত্তি, কৌতুক ইত্যাদিকে বুঝি। একটা জাতির দীর্ঘদিনের জীবনাচরণের ভেতর দিয়ে যে মানবিক মূল্যবোধ সুন্দরের পথে কল্যাণের পথে এগিয়ে চলে তাই সংস্কৃতি। সংস্কৃতি স্থবির নয়। এগিয়ে চলাই তার ধর্ম।
সংস্কৃতিকে কোন নির্দিষ্ট ছকে বাঁধা যায় না। সংস্কৃতির নিজস্ব স্বকীয়তা আছে। দেশ-কাল-জাতি ভেদে সংস্কৃতি ভিন্ন রকম হয়। সংস্কৃতির মূল কথা হলো সুন্দরভাবে বাঁচা। কিন্তু সমাজ বিজ্ঞানে সংস্কৃতি প্রত্যয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। এখানে সংস্কৃতি অর্থ মানুষের যাবতীয় সৃষ্টি বা বংশ, পরম্পরায় উত্তরাধিকার সূত্রে মানব সমাজে বর্তায় এবং বিদ্যমান থাকে।
অনেকই বলছেন ‘সংস্কৃতি হচ্ছে সেই সমষ্টি যা সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষের অর্জিত জ্ঞান, বিশ্বাস, শিল্পকলা, নৈতিকতা, আইন, রীতিনীতি এবং অন্য যে কোনো দাতা ও অভ্যাসের জটিল সমষ্টি।’ সমাজবিজ্ঞানী রসের মতে, ‘সকল বস্তু ও অবস্তুর কৌশল হচ্ছে সংস্কৃতি।’ কালমার্কস বলেন, ‘অর্থনৈতিক ভিত্তির বিশেষ কাঠামোই হচ্ছে সংস্কৃতি।’ ম্যাথিউ আর নল্ডের মতে, ‘সংস্কৃতি হচ্ছে খাঁটি হওয়া বা মার্জিত হওয়া বা রুচিশীল হওয়া।’
আর অপসংস্কৃতি বলতে আমরা সংস্কৃতির ঠিক উল্টোটাকে বুঝি। সংস্কৃতির বিকৃত রূপ হচ্ছে অপসংস্কৃতি। সংস্কৃতির কাজ জীবনকে বিকশিত করা, চিত্তকে আনন্দিত করা, মানুষকে প্রেমবান করা। আর অপসংস্কৃতি মানুষের জীবনকে কলুষময় করে। চেতনাকে নষ্ট করে। জীবনকে নাশ করে। স্থায়ীভাবে মনোমুগ্ধকর, আকর্ষণীয়, মোহনীয় ও হৃদয়গ্রাহী হলেও এ থেকে কোন ফল পাওয়া যায় না। অপসংস্কৃতি মানুষকে খারাপ কাজের দিকে টেনে নেয়।
আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করি তা যদি দেশকে ভালোবাসতে না শেখায়, জীবনকে প্রেমময় না করে, মানুষের প্রতি দরদি না করে, তাহলে সে শিক্ষা হলো অপশিক্ষা আর অপশিক্ষার পথ ধরে অপসংস্কৃতি আমাদের সমাজে শিকড় গাড়ে। আমাদের সমাজের অভ্যান্তরে যে অপসংস্কৃতি হিংস্র থাবা বিস্তার করে আছে তা সহজেই অনুমেয়। বর্তমানে আমরা আমাদের রীতিনীতি, দেশের মূল্যবোধ বিসর্জন দিতে শুরু করেছি।
আমাদের সমাজের রগে রগে যে অপসংস্কৃতি প্রবেশ করছে তা আজকের তরুণ-তরুণীদের পোশাক-আশাক, আচার-আচরণ, চাল-চলন দেখলেই বুঝা যায়। তারা দেশীয় আবহাওয়ায় বড় হয়ে দেশী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিসর্জন দিয়ে বিদেশি জীবনবোধের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছে। পাশ্চাত্যের অনুগামী হয়ে ডিসকো নাচ, গান, অশ্লীল ছায়াছবি ও নীল ছবির দর্শনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। এসব নাচ, গান আর পোশাক আশাকের সাথে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির কোনো মিল নেই।
সংস্কৃতি যেখানে মানুষকে সুন্দরের পথ দেখায়, সেখানে অপসংস্কৃতি মানুষকে অসুন্দর করে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। অপসংস্কৃতি স্থায়ী নয় তা ক্ষণিকের জন্য উত্তেজক। কোন জাতি বা দেশের ভেতর একবার অপসংস্কৃতি ঢুকলে তা অপসারণ করা খুবই কঠিন। অপসংস্কৃতি বিবেকের দরজায় তালা লাগায়। মানুষকে তার মা, মাটি ও দেশ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।
আমরা অনেকে বিদেশি সংস্কৃতিকে অপসংস্কৃতি বলে থাকি। আসলে কিন্তু তা নয়। কাজেই বিদেশি সংস্কৃতি মানেই অপসংস্কৃতি নয়, যদি তা আমাদের জীবনকে বিপথে পরিচালিত না করে। যে সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে বিপথে পরিচালিত করে সেটাই হলো অপসংস্কৃতি। সেটা দেশি বা বিদেশি হোক।
একটি দেশের ভবিষ্যত হলো সেই দেশের তরুণ সমাজ। অপসংস্কৃতির হিংস্র ছোবলে এ তরুণ সমাজ যদি বিপথগ্রামী হয়, তাহলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঢেকে যাবে। আমাদের দেশের তরুণ সমাজ সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির সয়লাবে ভেসে যাচ্ছে। আমাদের সমাজের তরুণ-তরুণীদের ওপর অপসংস্কৃতির কু-প্রভাব অতি গভীরও ব্যাপক।
আজ আমাদের সমাজের তরুণ-তরুণীরা সিনেমার যৌন সুরসুরিমূলক সস্তা কাহিনী, নাচ-গান, পোশাক-আশাক অন্ধভাবে অনুকরণ করতে গিয়ে অপসংস্কৃতির শিকার হচ্ছে। বর্তমানে টেলিভিশন, সিনেমা, ভিডিও, ভিসিডিতে যেসব ছবি প্রদর্শন করা হচ্ছে তার অধিকাংশই আমাদের মনমানসিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অথচ এসব অশ্লীল ছবি আমাদের কোমলমতি তরুণ-তরুণীদের কাছে অতি প্রিয় হয়ে গেছে। আমাদের তরুণ সমাজ আজ এসব অপসংস্কৃতির স্রোতে গা-ভাসিয়ে দিচ্ছে।
তাই তরুণ সমাজকে অপসংস্কৃতির হাত থেকে বাঁচাতে হলে অচিরেই আমাদের সমাজ থেকে অপসংস্কৃতির প্রভাব দূর করতে হবে এবং শিক্ষিত সমাজকে সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। বিদেশি কোন সংস্কৃতি গ্রহণ করার পূর্বে দেখতে হবে তা আমাদের জীবন গঠনে কতটুকু সহায়ক। যদি সহায়ক হয় তাহলে আমদানি করবে অন্যথায় বর্জন করবে। বর্তমানে যে সিনেমা হলগুলোতে অশ্লীল ছবি প্রদর্শন করা হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। আমাদের তরুণ সমাজ যেহেতু জাতির কর্ণদ্বার, সেহেতু তারা অপসংস্কৃতি গ্রহণ করার পূর্বেই তাদের সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান দিতে হবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023