খোলা ড্রেনে শিশুর মৃত্যু— কার দায় এড়ানোর সুযোগ আছে?
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:১৮ পিএম
-680279417a597-6803a29a7d5ce.jpg)
চট্টগ্রামে খোলা ড্রেনে পড়ে ছয় মাসের একটি শিশুর মৃত্যু—এ এক বেদনাদায়ক, নির্মম এবং লজ্জাজনক ঘটনা। একটি প্রাণ হারাল, যে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য মাত্র ছয় মাস সময় পেয়েছিল। তার কিছুমাত্র দায় কি আমাদের কারও নেই? এই প্রশ্ন উঠবেই, উঠতেই থাকবে।
গতকাল রাতে কাপাসগোলা নবাব হোটেলের সামনে একটি রিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খোলা ড্রেনে পড়ে যায়। রিকশায় ছিলেন এক মা ও তার শিশু। মা আহত হলেও বাচ্চাটি পানির স্রোতে ভেসে যায়। রাতভর খোঁজার পর, ১৪ ঘণ্টা পরে শিশুটির নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। শুধুই একটি দুর্ঘটনা বলে কি এই মৃত্যু মেনে নেওয়া যায়?
আমরা কী ধরনের নগর ব্যবস্থাপনায় বাস করছি, যেখানে ২০২৫ সালের বাংলাদেশে একজন শিশু শহরের মাঝখানে ড্রেনে পড়ে প্রাণ হারায়? উন্নয়নের গল্প আমাদের চারপাশে গর্জে ওঠে—মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, স্মার্ট নগরী, ক্যামেরায় ঘেরা সিসিটিভি—কিন্তু একটি খোলা নালা বন্ধ করতে আমরা পারি না। পারি না নিরাপদ পথচলার ব্যবস্থা করতে।
এই মৃত্যু কি শুধুই দুঃখজনক? নাকি এটি উদাসিনতা, অব্যবস্থাপনা এবং চরম দায়িত্বহীনতার ফল? চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কেউ কি জবাবদিহির আওতায় এসেছেন? কে দেখবে এই অবহেলার হিসাব? যারা প্রতিদিন ‘উন্নয়নের রোডম্যাপ’ তৈরি করেন, তারা কি একটি শিশুর মৃত্যুর দায় কাঁধে নিচ্ছেন?
আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার? তারা কোথায়? শিশুটির মৃত্যুর পর কোনো তৎপরতা কি দেখা গেছে? কোনো শোকবার্তা, তদন্তের ঘোষণা কিংবা ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ? নাকি এই মৃত্যু শুধু পরিসংখ্যানের আরেকটি সংখ্যা হয়েই থাকবে?
আমরা প্রতিবারই একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর হাহাকার করি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দোষ দিই, শোক প্রকাশ করি। কিন্তু আমরা কি পরিবর্তনের জন্য চাপ তৈরি করি? দায়িত্বশীলদের জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড় করাই?
এই মৃত্যু আমাদের সবার ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। এবং যতদিন না আমরা সম্মিলিতভাবে এ ধরনের মৃত্যুকে প্রতিরোধে সোচ্চার হই, ততদিন এই ড্রেনগুলো শুধু নর্দমা নয়, মৃত্যুকূপ হিসেবেই দাঁড়িয়ে থাকবে।
এই প্রশ্নগুলো ভুলে গেলে চলবে না—এই মৃত্যু কীভাবে ঘটল, কেন ঘটল, আর এর দায়ভার কাদের? নইলে আগামীকাল আরেকটি রিকশা উল্টে যাবে, আরেকটি শিশু হারিয়ে যাবে, আর আমরা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে জিজ্ঞেস করব—এই মৃত্যুর দায় কার?
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী