ভাঙনে উদ্বাস্তু উপকূলবাসী
একের পর এক বাড়ি বদল করে খাস জমিতেও ঠাঁই মিলছে না
যুগান্তর ডেস্ক
২০ অক্টোবর ২০১৫, ০০:০০:০০ |
শিপুফরাজী ও আবদুল্লাহ জুয়েল, ভোলা থেকে
ভোলার দ্বীপ উপজেলা মনপুরার চর কলাতলীতে নিঃস্ব মানুষদের ঠাঁই মিলছে না। ভাঙনকবলিত আন্দিরপাড়, রামনেওয়াজ, সাকুচিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ অতি কষ্টে দিন যাপন করছেন। এক জীবনে ১৪ বার পর্যন্ত বাড়ি বদল করেছেন। তবুও আসেনি স্থিতিশীলতা। নানামুখী দুর্যোগে বিপন্ন উদ্বাস্তু মানুষ এখন আর কোথাও স্থান পাচ্ছেন না। যাদের কিছু অর্থকড়ি আছে, তারা জমি কিনে অন্যত্র বাড়ি করতে পারলেও যাদের সেই সামর্থ্যটুকু নেই, তারা পড়ে আছেন এখানেই। নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের বহু মানুষ সব হারিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছে এখানে সেখানে। বিশেষজ্ঞরা এদের জলবায়ু স্থানচ্যুত বলে চিহ্নিত করেছেন। অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্লাইমেট রিফিউজিস (এসিআর) এবং ইয়াং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ইপসা) পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে ইতিমধ্যে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্থানচ্যুত হয়েছে। মনপুরার এ উদ্বাস্তু মানুষ তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। মনপুরা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব আন্দিরপাড় এলাকার বহু মানুষ গত কয়েক বছরে বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। মেঘনার ভাঙনে এলাকাটির হাঁটা-চলার রাস্তা, হাটবাজার, পুরনো গাছপালা, বাঁধানো পুকুর, স্বজনদের কবরস্থান সবই এখন নদীগর্ভে বিলীন। মনপুরার একটি বড় এলাকা বাইরে রেখে তৈরি হচ্ছে নতুন বেড়িবাঁধ। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও কিছু অসহায় উদ্বাস্তু মানুষ বসবাস করছেন আন্দিরপাড়ে। আন্দিরপাড় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন। বয়স ৭০ পেরিয়েছে। সম্পদশালী গৃহস্থ ছিলেন। মাছের ব্যবসায় জীবিকা নির্বাহ করতেন। বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া এ মানুষটিকে এখন দিনের রোজগার দিনেই করতে হয়। আন্দিরপাড়ের মেঘনার ভাঙনকিনারে ছোট্ট দোকান দিয়েছেন। এতেই কোনোমতে তার সংসার চলে। চরের খাসজমি নেয়ার মতো টাকা না থাকায় সে আশা বাদ দিয়েছেন তিনি। আন্দিরপাড় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুর রহমান বাড়িঘর হারিয়ে এখন নৌকায় জীবন কাটাচ্ছেন। খাওয়া-দাওয়া, ঘুমানো, মাছধরা সবই নৌকায়। পরিবারের অন্য সদস্যদের দূরে বেড়িবাঁধের ধারে ছোট্ট ঝুপড়িতে থাকার জায়গা করে দিয়েছেন। চরে খাসজমির জন্য অনেক চেষ্টা করলেও মেলেনি। পরিবার-পরিজন নিয়ে আগামী দিনে কোথায় স্থান হবে জানেন না তিনি। মনপুরা ইউনিয়নের রামনেওয়াজ ঘাটের হোটেল ব্যবসায়ী ১৪ বার ঘর বদল করেছেন। একই ঘরে তার পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকা আর হোটেলের ব্যবসা। প্রতিবার ঘর বদল করতে তার খরচ হয় ৪০-৫০ হাজার টাকা। ধার-দেনা করে জমি কিনে জীবিকার প্রয়োজনে এ ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন তিনি। স্থানীয় সূত্র বলছে, গত কয়েক বছরে আন্দিরপাড় ও রামনেওয়াজ এলাকা থেকে অন্তত হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু মানুষ এলাকায় আছে। অনেকে আবার জীবিকার তাগিদে অন্যত্র ছুটেছে। এ এলাকাটি ভেঙে মেঘনার বুকে চর কলাতলী জেগে উঠলেও সেখানে ঠাঁই মিলছে না অনেকেরই। এ তালিকায় কাঞ্চন মাঝি, জাহেদ মাঝি, খালেক ব্যাপারী, মহিউদ্দিন মাঝি, জাহাঙ্গীর ব্যাপারী, হিরন মিস্ত্রিসহ অনেকের নামই রয়েছে।
মনপুরার কলাতলী গ্রাম ভেঙে গিয়ে মেঘনার বুকে জেগেছে চর কলাতলী। এ চর ঘুরে দেখা গেছে, চরের জমি নিয়ে এখানে রয়েছে নানামুখী রাজনীতি। বিভিন্ন কৌশলে অনেকে বেশি জমি দখল করে আছেন আবার কেউ মোটেও পাচ্ছেন না। প্রভাবশালীদের দখলদারিত্বও রয়েছে চরের কোথাও কোথাও। এখানকার জমি বেচাকেনা হয়; কিন্তু কোনো কাগজপত্র নেই। চর কলাতলীর আবাসন বাজার, মনির বাজার ও কবীর বাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানালেন, চরের জমিতে নিঃস্ব মানুষদের অধিকার সবার আগে। কিন্তু সে অধিকার এখানে মিলছে সামান্যই। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে চর কলাতলী ও পার্শ্ববর্তী ঢালচরে এসে নিঃস্ব মানুষ ঘর বাঁধে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য চরের বাসিন্দারা জমি বন্দোবস্তের জোরালো দাবি জানালেন।
ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, ২০১২ সালে চর খালেক নামে কলাতলীর চরের ১ হাজার ২০০ একর জমির ম্যাপ ভোলা জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে অনুমোদন পায়। ২০১৩ সালে কাজীর চরের আরও ১ হাজার ৫৫০ একর জমির ম্যাপ অনুমোদিত হয়। চর কলাতলী-১ ও চর কলাতলী-২ নামে আরও ২ হাজার ৪০০ একর জমির ম্যাপ অনুমোদনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও জমি বন্দোবস্তের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। চরের জমি বন্দোবস্ত না হওয়ায় একটি কুচক্রী মহল এর সুযোগ নিচ্ছে। অথচ প্রশাসন একটু উদ্যোগী হয়ে খাসজমি বন্দোবস্ত দিলে সরকার চর থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে পারত।
ভোলার দ্বীপ উপজেলা মনপুরার চর কলাতলীতে নিঃস্ব মানুষদের ঠাঁই মিলছে না। ভাঙনকবলিত আন্দিরপাড়, রামনেওয়াজ, সাকুচিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ অতি কষ্টে দিন যাপন করছেন। এক জীবনে ১৪ বার পর্যন্ত বাড়ি বদল করেছেন। তবুও আসেনি স্থিতিশীলতা। নানামুখী দুর্যোগে বিপন্ন উদ্বাস্তু মানুষ এখন আর কোথাও স্থান পাচ্ছেন না। যাদের কিছু অর্থকড়ি আছে, তারা জমি কিনে অন্যত্র বাড়ি করতে পারলেও যাদের সেই সামর্থ্যটুকু নেই, তারা পড়ে আছেন এখানেই। নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের বহু মানুষ সব হারিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছে এখানে সেখানে। বিশেষজ্ঞরা এদের জলবায়ু স্থানচ্যুত বলে চিহ্নিত করেছেন। অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্লাইমেট রিফিউজিস (এসিআর) এবং ইয়াং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ইপসা) পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে ইতিমধ্যে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্থানচ্যুত হয়েছে। মনপুরার এ উদ্বাস্তু মানুষ তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। মনপুরা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব আন্দিরপাড় এলাকার বহু মানুষ গত কয়েক বছরে বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। মেঘনার ভাঙনে এলাকাটির হাঁটা-চলার রাস্তা, হাটবাজার, পুরনো গাছপালা, বাঁধানো পুকুর, স্বজনদের কবরস্থান সবই এখন নদীগর্ভে বিলীন। মনপুরার একটি বড় এলাকা বাইরে রেখে তৈরি হচ্ছে নতুন বেড়িবাঁধ। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও কিছু অসহায় উদ্বাস্তু মানুষ বসবাস করছেন আন্দিরপাড়ে। আন্দিরপাড় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন। বয়স ৭০ পেরিয়েছে। সম্পদশালী গৃহস্থ ছিলেন। মাছের ব্যবসায় জীবিকা নির্বাহ করতেন। বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া এ মানুষটিকে এখন দিনের রোজগার দিনেই করতে হয়। আন্দিরপাড়ের মেঘনার ভাঙনকিনারে ছোট্ট দোকান দিয়েছেন। এতেই কোনোমতে তার সংসার চলে। চরের খাসজমি নেয়ার মতো টাকা না থাকায় সে আশা বাদ দিয়েছেন তিনি। আন্দিরপাড় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুর রহমান বাড়িঘর হারিয়ে এখন নৌকায় জীবন কাটাচ্ছেন। খাওয়া-দাওয়া, ঘুমানো, মাছধরা সবই নৌকায়। পরিবারের অন্য সদস্যদের দূরে বেড়িবাঁধের ধারে ছোট্ট ঝুপড়িতে থাকার জায়গা করে দিয়েছেন। চরে খাসজমির জন্য অনেক চেষ্টা করলেও মেলেনি। পরিবার-পরিজন নিয়ে আগামী দিনে কোথায় স্থান হবে জানেন না তিনি। মনপুরা ইউনিয়নের রামনেওয়াজ ঘাটের হোটেল ব্যবসায়ী ১৪ বার ঘর বদল করেছেন। একই ঘরে তার পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকা আর হোটেলের ব্যবসা। প্রতিবার ঘর বদল করতে তার খরচ হয় ৪০-৫০ হাজার টাকা। ধার-দেনা করে জমি কিনে জীবিকার প্রয়োজনে এ ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন তিনি। স্থানীয় সূত্র বলছে, গত কয়েক বছরে আন্দিরপাড় ও রামনেওয়াজ এলাকা থেকে অন্তত হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু মানুষ এলাকায় আছে। অনেকে আবার জীবিকার তাগিদে অন্যত্র ছুটেছে। এ এলাকাটি ভেঙে মেঘনার বুকে চর কলাতলী জেগে উঠলেও সেখানে ঠাঁই মিলছে না অনেকেরই। এ তালিকায় কাঞ্চন মাঝি, জাহেদ মাঝি, খালেক ব্যাপারী, মহিউদ্দিন মাঝি, জাহাঙ্গীর ব্যাপারী, হিরন মিস্ত্রিসহ অনেকের নামই রয়েছে।
মনপুরার কলাতলী গ্রাম ভেঙে গিয়ে মেঘনার বুকে জেগেছে চর কলাতলী। এ চর ঘুরে দেখা গেছে, চরের জমি নিয়ে এখানে রয়েছে নানামুখী রাজনীতি। বিভিন্ন কৌশলে অনেকে বেশি জমি দখল করে আছেন আবার কেউ মোটেও পাচ্ছেন না। প্রভাবশালীদের দখলদারিত্বও রয়েছে চরের কোথাও কোথাও। এখানকার জমি বেচাকেনা হয়; কিন্তু কোনো কাগজপত্র নেই। চর কলাতলীর আবাসন বাজার, মনির বাজার ও কবীর বাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানালেন, চরের জমিতে নিঃস্ব মানুষদের অধিকার সবার আগে। কিন্তু সে অধিকার এখানে মিলছে সামান্যই। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে চর কলাতলী ও পার্শ্ববর্তী ঢালচরে এসে নিঃস্ব মানুষ ঘর বাঁধে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য চরের বাসিন্দারা জমি বন্দোবস্তের জোরালো দাবি জানালেন।
ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, ২০১২ সালে চর খালেক নামে কলাতলীর চরের ১ হাজার ২০০ একর জমির ম্যাপ ভোলা জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে অনুমোদন পায়। ২০১৩ সালে কাজীর চরের আরও ১ হাজার ৫৫০ একর জমির ম্যাপ অনুমোদিত হয়। চর কলাতলী-১ ও চর কলাতলী-২ নামে আরও ২ হাজার ৪০০ একর জমির ম্যাপ অনুমোদনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও জমি বন্দোবস্তের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। চরের জমি বন্দোবস্ত না হওয়ায় একটি কুচক্রী মহল এর সুযোগ নিচ্ছে। অথচ প্রশাসন একটু উদ্যোগী হয়ে খাসজমি বন্দোবস্ত দিলে সরকার চর থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে পারত।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ভাঙনে উদ্বাস্তু উপকূলবাসী
একের পর এক বাড়ি বদল করে খাস জমিতেও ঠাঁই মিলছে না
যুগান্তর ডেস্ক
২০ অক্টোবর ২০১৫, ১২:০০ এএম |
শিপুফরাজী ও আবদুল্লাহ জুয়েল, ভোলা থেকে
ভোলার দ্বীপ উপজেলা মনপুরার চর কলাতলীতে নিঃস্ব মানুষদের ঠাঁই মিলছে না। ভাঙনকবলিত আন্দিরপাড়, রামনেওয়াজ, সাকুচিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ অতি কষ্টে দিন যাপন করছেন। এক জীবনে ১৪ বার পর্যন্ত বাড়ি বদল করেছেন। তবুও আসেনি স্থিতিশীলতা। নানামুখী দুর্যোগে বিপন্ন উদ্বাস্তু মানুষ এখন আর কোথাও স্থান পাচ্ছেন না। যাদের কিছু অর্থকড়ি আছে, তারা জমি কিনে অন্যত্র বাড়ি করতে পারলেও যাদের সেই সামর্থ্যটুকু নেই, তারা পড়ে আছেন এখানেই। নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের বহু মানুষ সব হারিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছে এখানে সেখানে। বিশেষজ্ঞরা এদের জলবায়ু স্থানচ্যুত বলে চিহ্নিত করেছেন। অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্লাইমেট রিফিউজিস (এসিআর) এবং ইয়াং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ইপসা) পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে ইতিমধ্যে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্থানচ্যুত হয়েছে। মনপুরার এ উদ্বাস্তু মানুষ তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। মনপুরা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব আন্দিরপাড় এলাকার বহু মানুষ গত কয়েক বছরে বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। মেঘনার ভাঙনে এলাকাটির হাঁটা-চলার রাস্তা, হাটবাজার, পুরনো গাছপালা, বাঁধানো পুকুর, স্বজনদের কবরস্থান সবই এখন নদীগর্ভে বিলীন। মনপুরার একটি বড় এলাকা বাইরে রেখে তৈরি হচ্ছে নতুন বেড়িবাঁধ। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও কিছু অসহায় উদ্বাস্তু মানুষ বসবাস করছেন আন্দিরপাড়ে। আন্দিরপাড় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন। বয়স ৭০ পেরিয়েছে। সম্পদশালী গৃহস্থ ছিলেন। মাছের ব্যবসায় জীবিকা নির্বাহ করতেন। বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া এ মানুষটিকে এখন দিনের রোজগার দিনেই করতে হয়। আন্দিরপাড়ের মেঘনার ভাঙনকিনারে ছোট্ট দোকান দিয়েছেন। এতেই কোনোমতে তার সংসার চলে। চরের খাসজমি নেয়ার মতো টাকা না থাকায় সে আশা বাদ দিয়েছেন তিনি। আন্দিরপাড় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুর রহমান বাড়িঘর হারিয়ে এখন নৌকায় জীবন কাটাচ্ছেন। খাওয়া-দাওয়া, ঘুমানো, মাছধরা সবই নৌকায়। পরিবারের অন্য সদস্যদের দূরে বেড়িবাঁধের ধারে ছোট্ট ঝুপড়িতে থাকার জায়গা করে দিয়েছেন। চরে খাসজমির জন্য অনেক চেষ্টা করলেও মেলেনি। পরিবার-পরিজন নিয়ে আগামী দিনে কোথায় স্থান হবে জানেন না তিনি। মনপুরা ইউনিয়নের রামনেওয়াজ ঘাটের হোটেল ব্যবসায়ী ১৪ বার ঘর বদল করেছেন। একই ঘরে তার পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকা আর হোটেলের ব্যবসা। প্রতিবার ঘর বদল করতে তার খরচ হয় ৪০-৫০ হাজার টাকা। ধার-দেনা করে জমি কিনে জীবিকার প্রয়োজনে এ ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন তিনি। স্থানীয় সূত্র বলছে, গত কয়েক বছরে আন্দিরপাড় ও রামনেওয়াজ এলাকা থেকে অন্তত হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু মানুষ এলাকায় আছে। অনেকে আবার জীবিকার তাগিদে অন্যত্র ছুটেছে। এ এলাকাটি ভেঙে মেঘনার বুকে চর কলাতলী জেগে উঠলেও সেখানে ঠাঁই মিলছে না অনেকেরই। এ তালিকায় কাঞ্চন মাঝি, জাহেদ মাঝি, খালেক ব্যাপারী, মহিউদ্দিন মাঝি, জাহাঙ্গীর ব্যাপারী, হিরন মিস্ত্রিসহ অনেকের নামই রয়েছে।
মনপুরার কলাতলী গ্রাম ভেঙে গিয়ে মেঘনার বুকে জেগেছে চর কলাতলী। এ চর ঘুরে দেখা গেছে, চরের জমি নিয়ে এখানে রয়েছে নানামুখী রাজনীতি। বিভিন্ন কৌশলে অনেকে বেশি জমি দখল করে আছেন আবার কেউ মোটেও পাচ্ছেন না। প্রভাবশালীদের দখলদারিত্বও রয়েছে চরের কোথাও কোথাও। এখানকার জমি বেচাকেনা হয়; কিন্তু কোনো কাগজপত্র নেই। চর কলাতলীর আবাসন বাজার, মনির বাজার ও কবীর বাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানালেন, চরের জমিতে নিঃস্ব মানুষদের অধিকার সবার আগে। কিন্তু সে অধিকার এখানে মিলছে সামান্যই। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে চর কলাতলী ও পার্শ্ববর্তী ঢালচরে এসে নিঃস্ব মানুষ ঘর বাঁধে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য চরের বাসিন্দারা জমি বন্দোবস্তের জোরালো দাবি জানালেন।
ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, ২০১২ সালে চর খালেক নামে কলাতলীর চরের ১ হাজার ২০০ একর জমির ম্যাপ ভোলা জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে অনুমোদন পায়। ২০১৩ সালে কাজীর চরের আরও ১ হাজার ৫৫০ একর জমির ম্যাপ অনুমোদিত হয়। চর কলাতলী-১ ও চর কলাতলী-২ নামে আরও ২ হাজার ৪০০ একর জমির ম্যাপ অনুমোদনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও জমি বন্দোবস্তের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। চরের জমি বন্দোবস্ত না হওয়ায় একটি কুচক্রী মহল এর সুযোগ নিচ্ছে। অথচ প্রশাসন একটু উদ্যোগী হয়ে খাসজমি বন্দোবস্ত দিলে সরকার চর থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে পারত।
ভোলার দ্বীপ উপজেলা মনপুরার চর কলাতলীতে নিঃস্ব মানুষদের ঠাঁই মিলছে না। ভাঙনকবলিত আন্দিরপাড়, রামনেওয়াজ, সাকুচিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ অতি কষ্টে দিন যাপন করছেন। এক জীবনে ১৪ বার পর্যন্ত বাড়ি বদল করেছেন। তবুও আসেনি স্থিতিশীলতা। নানামুখী দুর্যোগে বিপন্ন উদ্বাস্তু মানুষ এখন আর কোথাও স্থান পাচ্ছেন না। যাদের কিছু অর্থকড়ি আছে, তারা জমি কিনে অন্যত্র বাড়ি করতে পারলেও যাদের সেই সামর্থ্যটুকু নেই, তারা পড়ে আছেন এখানেই। নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের বহু মানুষ সব হারিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছে এখানে সেখানে। বিশেষজ্ঞরা এদের জলবায়ু স্থানচ্যুত বলে চিহ্নিত করেছেন। অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্লাইমেট রিফিউজিস (এসিআর) এবং ইয়াং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ইপসা) পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে ইতিমধ্যে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্থানচ্যুত হয়েছে। মনপুরার এ উদ্বাস্তু মানুষ তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। মনপুরা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব আন্দিরপাড় এলাকার বহু মানুষ গত কয়েক বছরে বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। মেঘনার ভাঙনে এলাকাটির হাঁটা-চলার রাস্তা, হাটবাজার, পুরনো গাছপালা, বাঁধানো পুকুর, স্বজনদের কবরস্থান সবই এখন নদীগর্ভে বিলীন। মনপুরার একটি বড় এলাকা বাইরে রেখে তৈরি হচ্ছে নতুন বেড়িবাঁধ। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও কিছু অসহায় উদ্বাস্তু মানুষ বসবাস করছেন আন্দিরপাড়ে। আন্দিরপাড় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন। বয়স ৭০ পেরিয়েছে। সম্পদশালী গৃহস্থ ছিলেন। মাছের ব্যবসায় জীবিকা নির্বাহ করতেন। বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া এ মানুষটিকে এখন দিনের রোজগার দিনেই করতে হয়। আন্দিরপাড়ের মেঘনার ভাঙনকিনারে ছোট্ট দোকান দিয়েছেন। এতেই কোনোমতে তার সংসার চলে। চরের খাসজমি নেয়ার মতো টাকা না থাকায় সে আশা বাদ দিয়েছেন তিনি। আন্দিরপাড় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুর রহমান বাড়িঘর হারিয়ে এখন নৌকায় জীবন কাটাচ্ছেন। খাওয়া-দাওয়া, ঘুমানো, মাছধরা সবই নৌকায়। পরিবারের অন্য সদস্যদের দূরে বেড়িবাঁধের ধারে ছোট্ট ঝুপড়িতে থাকার জায়গা করে দিয়েছেন। চরে খাসজমির জন্য অনেক চেষ্টা করলেও মেলেনি। পরিবার-পরিজন নিয়ে আগামী দিনে কোথায় স্থান হবে জানেন না তিনি। মনপুরা ইউনিয়নের রামনেওয়াজ ঘাটের হোটেল ব্যবসায়ী ১৪ বার ঘর বদল করেছেন। একই ঘরে তার পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকা আর হোটেলের ব্যবসা। প্রতিবার ঘর বদল করতে তার খরচ হয় ৪০-৫০ হাজার টাকা। ধার-দেনা করে জমি কিনে জীবিকার প্রয়োজনে এ ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন তিনি। স্থানীয় সূত্র বলছে, গত কয়েক বছরে আন্দিরপাড় ও রামনেওয়াজ এলাকা থেকে অন্তত হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু মানুষ এলাকায় আছে। অনেকে আবার জীবিকার তাগিদে অন্যত্র ছুটেছে। এ এলাকাটি ভেঙে মেঘনার বুকে চর কলাতলী জেগে উঠলেও সেখানে ঠাঁই মিলছে না অনেকেরই। এ তালিকায় কাঞ্চন মাঝি, জাহেদ মাঝি, খালেক ব্যাপারী, মহিউদ্দিন মাঝি, জাহাঙ্গীর ব্যাপারী, হিরন মিস্ত্রিসহ অনেকের নামই রয়েছে।
মনপুরার কলাতলী গ্রাম ভেঙে গিয়ে মেঘনার বুকে জেগেছে চর কলাতলী। এ চর ঘুরে দেখা গেছে, চরের জমি নিয়ে এখানে রয়েছে নানামুখী রাজনীতি। বিভিন্ন কৌশলে অনেকে বেশি জমি দখল করে আছেন আবার কেউ মোটেও পাচ্ছেন না। প্রভাবশালীদের দখলদারিত্বও রয়েছে চরের কোথাও কোথাও। এখানকার জমি বেচাকেনা হয়; কিন্তু কোনো কাগজপত্র নেই। চর কলাতলীর আবাসন বাজার, মনির বাজার ও কবীর বাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানালেন, চরের জমিতে নিঃস্ব মানুষদের অধিকার সবার আগে। কিন্তু সে অধিকার এখানে মিলছে সামান্যই। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে চর কলাতলী ও পার্শ্ববর্তী ঢালচরে এসে নিঃস্ব মানুষ ঘর বাঁধে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য চরের বাসিন্দারা জমি বন্দোবস্তের জোরালো দাবি জানালেন।
ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, ২০১২ সালে চর খালেক নামে কলাতলীর চরের ১ হাজার ২০০ একর জমির ম্যাপ ভোলা জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে অনুমোদন পায়। ২০১৩ সালে কাজীর চরের আরও ১ হাজার ৫৫০ একর জমির ম্যাপ অনুমোদিত হয়। চর কলাতলী-১ ও চর কলাতলী-২ নামে আরও ২ হাজার ৪০০ একর জমির ম্যাপ অনুমোদনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও জমি বন্দোবস্তের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। চরের জমি বন্দোবস্ত না হওয়ায় একটি কুচক্রী মহল এর সুযোগ নিচ্ছে। অথচ প্রশাসন একটু উদ্যোগী হয়ে খাসজমি বন্দোবস্ত দিলে সরকার চর থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে পারত।