ব্যাপক ফলনের সম্ভাবনা
তিস্তার সেচ ক্যানেল কৃষকের জন্য আশীর্বাদ
জাহেদুল ইসলাম জাহিদ, ডিমলা
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের সর্ববৃহত সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের সেচ ক্যানেলের মাধ্যমে ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে। তিস্তার সেচ ক্যানেলের মাধ্যমে ৭১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রকল্পের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
এতে চলতি আমন মৌসুমে বৃষ্টির অভাবে খরা মোকাবেলায় তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প কৃষকদের আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে প্রকল্পটি।
শনিবার সরেজমিনে সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকা ঘুরে দেখা যায় প্রথম পর্যায়ে চালু থাকা ৭১০ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এলাকা সেচের পানিতে ভরে উঠেছে। এখন প্রতিদিন ৩৩ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার প্রধান ক্যানেল, ৭৪ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার মেজর সেকেন্ডারি সেচ ক্যানেল, ২১৪ দশমিক ৭০ কিলোমিটার সেকেন্ডারি ক্যানেল ও ৩৮৭ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার টারশিয়ারী ক্যানেলে ১২ ঘণ্টা পরপর ৫ হাজার কিউসেক করে পানি পাচ্ছে কৃষক।
তবে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাব এবং কোথাও কোথাও অনাবৃষ্টির কারণে কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারছে না। পাশাপাশি রোপণকৃত আমনের চারাগুলো পানির অভাবে বিনষ্ট হতে বসেছে। সেখানে তিস্তা সেচ প্রকল্পের সেচ প্রবেশ করেছে।
তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প সূত্র বলছেন, অভূতভাবে উজান থেকে পানি আসছে। ব্যারাজ পয়েন্টে পানির উথাল ঢেউ। পানিতে যেমন ভরে উঠছে নদী, তেমনি ৭১০ কিলোমিটারজুড়ে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সব সেচ ক্যানেল পানিতে টইটুম্বুর।
জানা যায়, ক্যানেল সংস্কারের বরাদ্দ পাওয়ার পরও তা সংস্কারের কাজ শেষ করতে না পারায় সৈয়দপুর ও দিনাজপুরের খানসামা, চিরিরবন্দর ও পার্Ÿতীপুর উপজেলা এ সেচ থেকে বঞ্চিত। ওইসব কৃষকরা সেচের জন্য সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডে ধর্ণা দিয়েও সুফল পাচ্ছে না।
রংপুর কৃষি অঞ্চল কার্যালয় সূত্র জানায়, রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলায় চলতি ২০১৮-১৯ মৌসুমে পাঁচ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৪ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাত ৩৭ হাজার ৬৬২ হেক্টরে , উফশীজাত ৫ লাখ ২৬ হাজার ৮০৫ হেক্টরে ও স্থানীয় জাত ২৯ হাজার ৭১৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে নীলফামারীতে ১ লাখ ১২ হাজার ৩৫৮ হেক্টর, রংপুরে ১ লাখ ৬৪ হাজার ১৫৯ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৮৪ হাজার ৮৪৫ হেক্টর, গাইবান্ধায় ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৪৯ হেক্টর ও কুড়িগ্রামে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৭৩ হেক্টরসহ মোট পাঁচ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৪ হেক্টরে।
কৃষি বিভাগ মতে রোপা আমনের চারা লাগানোর শেষ সময় রয়েছে আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত। তবে যারা আগাম ব্রিধান-৩৩, বিনা-৭ সহ স্বল্প মেয়াদি রোপা আমন ধান আবাদ করছে তাদের সেচের মাধ্যমে চারা রোপণে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
তিস্তা সেচ ক্যানেল এসওয়ানটি পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, তিস্তার সেচ ক্যানেলের পানির কারণে আমন ধানের ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনবে। এলাকায় ব্যাপক ফসল উৎপাদন হওয়ার আশা করেন তিনি। তবে সেচ ক্যানেল সংস্কার না করার কারণে প্রচুর পানি থাকলেও কৃষকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ক্যানেলে ময়লা আবর্জনা ও ঝোপ-ঝাড়ের কারণে পানি আসতে বিড়ম্বনা হচ্ছে।
তিস্তা ব্যারাজের পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, বৃষ্টির অভাবে খরা দেখা দিলে কৃষকরা এ প্রকল্পের মাধ্যমে সেচ পাবেন। যাতে আমন ধান তারা পরিপূর্ণভাবে আবাদ করতে পারেন। বর্তমানে অনাবৃষ্টির কবলে পড়েছে কৃষক। তাই এই মৌসুমে ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হচ্ছে।
