Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

বাজেটে টার্গেট মধ্যবিত্ত

জনগণের কল্যাণ সাধনে গুরুত্ব দিতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাজেটে টার্গেট মধ্যবিত্ত

আসন্ন জাতীয় বাজেটে আয়কর আদায়ে মধ্যবিত্তকে টার্গেট করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। যারা প্রথমবার রিটার্ন জমা দেবেন, তাদের জন্য সুখবর থাকলেও মধ্যবিত্ত শ্রেণির করহার দ্বিগুণ করা হচ্ছে। বিদ্যমান কর কাঠামো অনুযায়ী ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা। আয়করের বর্তমান স্ল্যাব অনুযায়ী, সাড়ে ৩ লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকার মধ্যে বার্ষিক আয় থাকলে করদাতাদের ৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। আগামী বাজেটে আয়করের স্ল্যাবে আনা হচ্ছে পরিবর্তন। সাধারণ করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হলেও পরবর্তী স্ল্যাব করা হচ্ছে ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। আর এই স্ল্যাবে করহার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হচ্ছে ১০ শতাংশ, অর্থাৎ দ্বিগুণ। দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এটি সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণির আয়। কাজেই স্ল্যাবে পরিবর্তন এবং করহার বাড়ানোর ফলে মধ্যবিত্তের ওপর নিশ্চিতভাবেই করের বোঝা বাড়বে। এছাড়া সরকারি ট্রেজারি বন্ডের উৎসে কর দ্বিগুণ করা হচ্ছে। অনেক মধ্যবিত্ত নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য এ বন্ড কিনে থাকেন।

আমাদের দেশের সবচেয়ে সচেতন শ্রেণি হলো মধ্যবিত্ত। এই শ্রেণিটি অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বড় ধরনের অবদান রাখে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, প্রতিবছর বাজেটে প্রাপ্য গুরুত্ব তারা পায় না। মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রধান সমস্যা হলো, তাদের আয় বাড়ে সীমিত হারে, অথচ ব্যয় বেড়ে চলে লাগামহীনভাবে। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, চিকিৎসা ও শিক্ষার খরচ, বাড়িভাড়া-সবকিছুই তাদের সংসারে চাপ বাড়িয়ে দেয়। অথচ কর কাঠামোতে স্বস্তির পরিবর্তে অনেক সময় তাদের ওপর করের চাপ বেড়ে যায়। ফলে তাদের প্রকৃত আয় হ্রাস পায় এবং সঞ্চয়ের সুযোগ কমে যায়। তাই আসন্ন বাজেটে মধ্যবিত্তের জন্য করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর পাশাপাশি বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষায় কর ছাড় বা বিশেষ সহায়তা চালু করা যেতে পারে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিত্যপণ্যের ওপর ভর্তুকি বাড়ানো উচিত। মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য সহজ শর্তে গৃহঋণ ও শিক্ষা ঋণের সুযোগ তৈরি করাও জরুরি।

বাজেট যেন শুধু সরকারের আয়-ব্যয়ের একটি পরিকল্পনা না হয়, বরং তা যেন হয় জনমানুষের জীবনে স্বস্তি ফেরানোর একটি রূপরেখা। একটি দেশের মানুষ আগামী বছরটায় কেমন জীবন কাটাবে, বাজেটকে হতে হয় সেই জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। জাতীয় বাজেটের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধন। মধ্যবিত্তকে স্বস্তি দিলে কেবল একটি শ্রেণিই নয়, গোটা অর্থনীতিই প্রাণ পাবে। তাই মধ্যবিত্তের চাওয়া-পাওয়ার বিবেচনায় একটি মানবিক বাজেট প্রণয়ন সময়ের দাবি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম