বাড়ছে সরকারের দায়
রাজস্ব আয় বাড়াতে জোর দিতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসনামলে বাজেটের আকার অব্যাহতভাবে বাড়লেও সে তুলনায় বাড়েনি রাজস্ব আহরণ। ঘাটতি পূরণে তখন সরকারের ঋণনির্ভরতা বেড়েছিল। তখন ঋণ হিসাবে নেওয়া অর্থের নয়ছয়ও হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় সরকারের ঋণের দায় (গত মার্চ পর্যন্ত) ১৯ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ছুঁয়েছে।
অর্থ বিভাগের ধারণা, চলতি অর্থবছর (২০২৪-২৫) শেষে অর্থাৎ জুন পর্যন্ত এটি সাড়ে ১৯ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করতে পারে। সরকারের এ ঋণনির্ভরতা অব্যাহত থাকলে নতুন অর্থবছরে (২০২৫-২৬) সরকারের মোট ঋণের স্থিতি প্রায় ২২ লাখ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়াবে। এমন পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে।
এলডিসি উত্তরণ মোকাবিলায় ঋণ ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য বাজেটের ঘাটতি কমিয়ে ঋণের লাগাম টানতে হবে। ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ঋণের পরিমাণ এবং উন্নয়নের লক্ষ্যের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে। এ সময় বাংলাদেশকে তুলনামূলক বেশি সুদ ও কঠিন শর্তে সমন্বিত ঋণ নিতে হবে। নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলায় দক্ষ আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য ঋণ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ উদ্বেগ প্রকাশ করে যুগান্তরকে বলেছেন, ‘আমাদের সম্পদ সীমিত। কাজেই নতুন বাজেটে ঘাটতি কমানোর চষ্টা করছি।’ তিনি আরও বলেছেন, আমরা রাজস্ব বাড়ানোর দিকে জোর দিচ্ছি। সংশ্লিষ্টদের মতে, কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়ছে না রাজস্ব আহরণ। বস্তুত রাজনৈতিক পরিবেশ, অর্থনৈতিক সংকট, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরছে না। এদিকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও কিছুটা স্থবিরতা বিরাজ করছে। রাজস্ব আহরণে এর প্রভাব পড়ছে। আয় কম হওয়ায় সরকারকে ঋণের ওপর বেশি নির্ভর করতে হচ্ছে। এদিকে আগের ঋণ ও সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে আবার ঋণ করতে হচ্ছে। ঋণ করে ঋণ পরিশোধের মতো বিষয়কে দুষ্টচক্র বলে উল্লেখ করেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেছেন, এ দুষ্টচক্র থেকে বের হওয়ার চেষ্টা চলছে।
সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নিলে বেসরকারি বিনিয়োগে এর প্রভাব পড়ে। বিদেশি ঋণের নেতিবাচক দিক বহুল আলোচিত। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে দেশি-বিদেশি ঋণের অর্থ উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের উদ্যোগ নিতে হবে।
