খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি, অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের ভয়াবহ চিত্র ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে। সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গেল ডিসেম্বর থেকে মার্চ-এই তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। আর গত বছরের মার্চের তুলনায় চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এক বছরে বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। খাতসংশ্লিষ্টরা এর কারণ হিসাবে বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি ও নিয়মনীতি কঠোরভাবে প্রয়োগের ফলে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র একে একে সামনে আসছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে লুটপাটের ঋণ এখন খেলাপি হচ্ছে। এ কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে বেপরোয়া গতিতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস্তব পরিস্থিতি স্পষ্ট হওয়ায় এখন ব্যাংক খাতের ঝুঁকি আরও ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছে। তাদের মতে, এটাই শেষ নয়, খেলাপি ঋণ ধীরে ধীরে ৬-৭ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছে যাবে। কারণ বকেয়া ঋণের পরিমাণ ইতোমধ্যেই বেড়ে ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এগুলোও এখন খেলাপি হবে। তারা আরও বলছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে যে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, নিয়মনীতি সঠিকভাবে পরিপালন না করার কারণে এখন তা খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। ফলে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।
খেলাপি ঋণের এ চিত্র যে খুবই হতাশার ও আশঙ্কাজনক, তা বলাই বাহুল্য। অনেক আগে থেকেই ঋণের অর্থ আদায়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে আসছিলাম আমরা। ব্যাংক খাতকে পুনরায় শক্তিশালী করতে এসব খেলাপি ঋণের অর্থ আদায়ে কঠোর ও কৌশলী পদক্ষেপের যে বিকল্প নেই, সেদিকেও বারবার দৃষ্টিপাত করা হয়েছে। আমাদের মতে, প্রয়োজনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এদের শাস্তির আওতায় আনা না হলে ঋণের অর্থ লোপাটের এ সংস্কৃতির পরিবর্তন করা সহজ হবে না। দেরি যা হওয়ার হয়েছে, খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে এবং দেশে-বিদেশে পাচার করা লোপাটকৃত অর্থ আদায়ে এখন থেকেই সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।
