ঋণ এখন গুরুত্বপূর্ণ নয় : গভর্নর
আইএমএফের সঙ্গে ঐকমত্যে বাধা ‘সময়’
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আইএমএফের সঙ্গে এখন পর্যন্ত বিনিময় হার ও রাজস্ব সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে একমত হওয়া সম্ভব হয়নি। তবে একমত হতে আপত্তি নেই। সময়টা নিয়ে হচ্ছে আপত্তি। এখন বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বিনিময় হারকে স্থিতিশীল রাখতে হবে। রাজস্ব ইস্যুতে কমবেশি একমত হওয়া গেছে। তবে আইএমএফ চাচ্ছে এখনই তা করতে। যেটি দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আইএমএফের ঋণ খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রয়েছে, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে অংশ নিয়ে সাইডলাইনে আইএমএফের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে গভর্নর শুক্রবার গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে এসব কথা বলেন। ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে অংশ নিতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল সেখানে অবস্থান করছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও রয়েছেন। তারা মূল বৈঠকের পাশাপাশি সাইডলাইনে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ওপর আরোপিত বাড়তি শুল্ক এবং আইএমএফের সঙ্গে ঋণের কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে আলোচনা করছে।
আইএমএফের সঙ্গে দুই দফা বৈঠকের পর গভর্নর বলেছেন, এখন পর্যন্ত আইএমএফের সঙ্গে ঋণের কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে আলোচনায় ঐকমত্যে পৌঁছা সম্ভব হয়নি। তবে ঐকমত্য থেকে খুব বেশি দূরে সেটিও বলা যাবে না। আলোচনা চলছে। আশা করি একটি সমঝোতা হয়ে যাবে। তবে তিনি এটিও বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আইএমএফের ঋণ পাওয়া খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা বাজারও স্থিতিশীল। রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরে ১০ শতাংশের উপরে থাকবে।
গভর্নর বলেন, বাংলাদেশের লক্ষ্য দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার স্বাধীনভাবে বাস্তবায়ন করা। এ খাতে আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা নেওয়া হবে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক কারিগরিকভাবে সহায়তা করছে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতের পুনর্গঠন এবং সংস্কার নিজেদেরই করতে হবে। নিজেদের প্রয়োজনেই ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারের বাজার সংস্কার করতে হবে। আইএমএফ একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ঋণের শর্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যদি মনে হয় এই ঋণ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সহায়ক, তাহলে আমরা ওই ঋণ গ্রহণ করব।
আইএমএফ ঋণ সহায়তার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে গভর্নর বলেন, বৈদেশিক খাতে ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে যে অর্থ সহায়তা দেয়, তা না পেলেও কোনো সমস্যা হবে না। কারণ এখন ডলারের কোনো সংকট নেই, রিজার্ভও ভালো অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, আইএমএফের সঙ্গে আমাদের দুই ধরনের সম্পর্ক রয়েছে। একটি কারিগরিক সহায়তা ও অপরটি আর্থিক সহায়তা। সংস্কারের ক্ষেত্রে আইএমএফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখবে বলে আশা করছি। তবে তাদের কিছু বিষয় আছে সেগুলো মানা না হলে তারা অর্থ সহায়তা দেয় না।
গভর্নর বলেন, দেশের অর্থনীতির স্বার্থের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ কোনো শর্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশে এখনো শ্রীলংকা বা পাকিস্তানের মতো পরিস্থিতি হয়নি।
