আলজাজিরাকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস
জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা বলছে না, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যেতে দাও। কেউ এখনই নির্বাচন চায়নি। আমরা এমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হইনি যেখানে লোকরা বলছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হস্তান্তর করো।
কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আলজাজিরার বৈশ্বিক নেতাদের সাক্ষাৎকারমূলক অনুষ্ঠান ‘টক টু আলজাজিরা’য় তিনি এসব কথা বলেছেন। রোববার ‘মুহাম্মদ ইউনূস : রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে এই সাক্ষাৎকার আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। আলজাজিরার উপস্থাপকের প্রশ্ন ছিল, শেখ হাসিনার পতনের পরের ‘মধুচন্দ্রিমা’ পর্ব সম্ভবত শেষ হয়েছে, এখন কিছু বড় চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব অন্তর্বর্তী সরকারকে দিতে হবে। জবাবে ড. ইউনূস বলেন, মানুষ অধৈর্য হয়ে ওঠেনি। মানুষ এখনো মনে করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো সমাধান। এখন পর্যন্ত দেশে এমন কোনো সংকট দেখা দেয়নি, যেখানে কেউ এখনই নির্বাচন চায়নি বা আমাদের সরিয়ে দিতে বলেনি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে ইউনূস বলেন, সরকার একটি অর্থবহ নির্বাচন দিতে চায়। যদি সংস্কারের তালিকা ছোট হয়, তবে ডিসেম্বরেই নির্বাচন সম্ভব। আর যদি তা দীর্ঘ হয়, তাহলে হয়তো আমরা জুন পর্যন্ত যাব। কিন্তু জুনের পরে আর যাব না। প্রধান উপদেষ্টার বিশ্বাস, আগামী নির্বাচন হবে দেশের ইতিহাসে সেরা নির্বাচন।
আওয়ামী লীগ সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে কিনা-এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটি আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করে। দলটি এখনো এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেয়নি। তবে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও এখানে বিবেচ্য। আবার অন্য দলগুলো হয়তো দাবি করতে পারে যে, আওয়ামী লীগ বর্তমান আইনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতি, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন ড. ইউনূস।
ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয় তুলে ধরে ইউনূস বলেন, আমি স্পষ্টভাবে বলেছি, ভারত যদি শেখ হাসিনাকে রাখতে চায়, তাহলে সম্ভবত বিষয়টি আমরা মেটাতে পারব না। কিন্তু সেখানে থেকে তার কথা বলা উচিত নয়। কারণ এটা আমাদের জন্য অনেক সমস্যার সৃষ্টি করছে। তিনি বাংলাদেশের মানুষকে উসকানি দিতে বক্তব্য দিচ্ছেন এবং এর ফলে আমাদের ভুগতে হচ্ছে।
মোদি উত্তরে কী বলেছিলেন, সেই প্রশ্নে ইউনূস বলেন, যদি আমি ঠিকঠাক মনে করতে পারি, তিনি বলেছিলেন, ভারতে সোশ্যাল মিডিয়া সবার জন্য উন্মুক্ত, এটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।
শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে বিচারের মুখোমুখি করতে সরকার কী করছে জানতে চাইলে ইউনূস বলেন, ইতোমধ্যে ভারত সরকারকে চিঠি পাঠানো হয়েছে, যাতে তারা তাকে ফেরত পাঠায়। তবে এখনো তারা কোনো সাড়া দেয়নি। মামলার আইনি প্রক্রিয়া যখন শুরু হবে, আদালত তখন নোটিশ পাঠাবে।
ভারতের আগে চীন সফরে গিয়ে ইউনূস কোনো বার্তা দিতে চেয়েছেন কি না, সেই প্রশ্ন করেন আলজাজিরার উপস্থাপক। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি সেখানেই যাচ্ছেন যেখানে তিনি যেতে চান। আমি ভারতে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি। তাই চীনে গিয়েছি এবং এখন মালয়েশিয়া যাব।
ভারত এড়িয়ে চলছে কি না, বিকল্প হিসাবে ইউনূস পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করছেন কি না-এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটা হয়তো ‘সাময়িক’ ব্যাপার। এটা এমন একটা বিষয়, যা আমাদের একসঙ্গে সমাধান করতে হবে। আমি এটাকে চূড়ান্ত কিছু ভাবছি না।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে ইউনূস বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গেও তার সরকারের খুব ভালো, শক্তিশালী ও উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে।
বেইজিং ও ওয়াশিংটন ডিসির মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বাংলাদেশ বাধ্য হচ্ছে কি না-এমন প্রশ্নে ইউনূস বলেন, এটা বেছে নেওয়ার বিষয় নয়, তারা সবাই আমাদের বন্ধু। যুক্তরাষ্ট্র ভালো বন্ধু, চীন ভালো বন্ধু, ভারত ভালো বন্ধু।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত পেতে বিদেশি সরকারগুলো বাংলাদেশকে সহায়তা করছে বলেও সাক্ষাৎকারে তথ্য দেন প্রধান উপদেষ্টা।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা, জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি এবং এই লোকরা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্যও কাজ করছি। আমাদের চিন্তা হলো, কীভাবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া তৈরি করা যায়, যাতে রোহিঙ্গারা তাদের নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে এবং নিরাপদ পুনর্বাসন করতে পারে।
