উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত
দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে জনগণকে জানিয়ে পদক্ষেপ
পদত্যাগ করছেন না ড. মুহাম্মদ ইউনূস: মূল লক্ষ্য-নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার এগিয়ে নেওয়া * পরাজিত শক্তির ইন্ধন এবং বিদেশি ষড়যন্ত্র আছে * স্বৈরাচারের আগমন চিরতরে প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশকে স্থিতিশীল রাখতে-নির্বাচন, বিচার ও সংস্কারের কাজ এগিয়ে নিতে চায় সরকার। কিন্তু সরকারের দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এখতিয়ারবহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচি দিয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করছে কেউ কেউ। তবে পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রে দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হলে, সরকার সব কারণ জনসম্মুখে তুলে ধরে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। এক্ষেত্রে স্বৈরাচারের আগমন চিরতরে প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন। শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) সভাশেষে উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে একনেকের বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না। তিনি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব শেষ করে বিদায় নেবেন। অন্যদিকে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনটি রাজনৈতিক দল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)। এছাড়া আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে আজ বিকালে যমুনায় ডেকেছেন তিনি। সরকারের একটি সূত্র যুগান্তরকে জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষ হলে আজ অথবা আগামীকালের মধ্যে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে পুরো পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি এবং রাজনৈতিক দলের নানা ইস্যুতে রাজপথ উত্তপ্ত হওয়াসহ বেশ কিছু কারণে গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পদত্যাগ চিন্তার বিষয়টি উত্থাপন করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে তাকে পদত্যাগ না করার অনুরোধ জানানো হয়। সবার অনুরোধে শেষ পর্যন্ত তিনি সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। উপদেষ্টা পরিষদের ওই বৈঠকের দুই দিন পর শনিবার একনেকের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়-একনেকের সভা শেষে শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের এক অনির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর অর্পিত তিনটি প্রধান দায়িত্ব (নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার) বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এসব দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এখতিয়ারবহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচি দিয়ে যেভাবে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে তোলা হচ্ছে। জনমনে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় ওই বৈঠকে। দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এ দেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করে উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য শুনবে এবং সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করবে। শত বাধার মধ্যেও গোষ্ঠীস্বার্থকে উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার তার ওপর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে সরকারের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সব কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে। কিন্তু সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।
জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রতীপ চাকমা যুগান্তরকে বলেন, ‘কাজ করার স্পেস থাকতে হবে। যদি কাজ করতেই না পারি তাহলে থাকার দরকার নেই। কথায় কথায় রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে কাজ করতে পারছি না। তিনি বলেন, আমাদেরও সম্মান আছে। কেউ যদি কাজ করতে না দেয় এবং বলে চলে যান, তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত আছি।’
এদিকে অনির্ধারিত বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অবশ্যই থাকছেন। তিনি পদত্যাগ করবেন না। চলে যাবেন এ কথা তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেননি। পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, আমরা যেসব কাজ করছি এবং এসব কাজ করতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে আমরা সবাই নিজ নিজ স্থানের প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করেছি বৈঠকে। এখন সেগুলো সমাধান করে আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করব। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব অনেক বড়। স্বইচ্ছায় কেউ এ দায়িত্ব নেইনি। দায়িত্ব ছেড়ে যাচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, আমরা একটি বড় পরিসরে জাতীয় নির্বাচনের কথা বলেছি। এর মাধ্যমে সুশাসিত একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যেতে চাচ্ছি। এজন্য রাজনৈতিক দল, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ সবার সহযোগিতা চাচ্ছি। সবাই মিলে দেশটাকে এগিয়ে নিতে চাই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন দল থেকে আমিসহ অন্য কয়েকজন উপদেষ্টার পদত্যাগের কথা বলা হয়েছে। আমি জানতে চেয়েছি আমার পদত্যাগের দাবি কি দলীয় সিদ্ধান্ত? তখন আমাকে জানানো হয়েছে না, এটা কোনো দলীয় সিদ্ধান্ত নয়। কেননা এই সরকার তো গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর সমর্থনেই দায়িত্বে এসেছে। এটিই সরকারের ভিত্তি। তাহলে কেন পদত্যাগের কথা উঠবে। এরপরও বিতর্ক থাকলে আমরা যে কোনো সময় পদত্যাগ করতে পারি। সেটা কোনো সমস্যা নয়। বৈঠকে সব উপদেষ্টাই উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা ২২ মিনিট পর্যন্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রেজোয়ানা হাসান যুগান্তরকে বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ নিয়ে এখনো আলোচনা করিনি। আমরা আলোচনা করেছি সংস্কার, জুলাই অভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে। এছাড়া উপদেষ্টারা জনগণকে কোন ধরনের কথা বলবে সেটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এর বাইরে কিছু বলতে পারছি না।
