নকশার ব্যত্যয়ে নির্মাণাধীন ৩৩৮২ ভবন ভাঙা হবে: রাজউক চেয়ারম্যান
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে ঢাকায় নির্মাণাধীন ৩ হাজার ৩৮২টি ভবনের অবৈধ অংশ চিহ্নিত করে ভাঙা হবে। কাজগুলো শুরুও হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সোমবার নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত ‘সমস্যার নগরী ঢাকা : সমাধান কোন পথে?’ শীর্ষক এক নগর সংলাপে তিনি এসব কথা জানান। রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ওই ভবনগুলোর কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়ে পর্যায়ক্রমে সেগুলোর আংশিক অংশ ভেঙে ফেলা হবে। প্রথম ধাপে সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন, ফৌজদারি মামলা করা, নকশা বাতিল এবং প্রয়োজনে ভবনগুলো সিলগালা করা হবে।
তিনি জানান, রাজউক এলাকায় নির্মাণাধীন ৩ হাজার ৩৮২টি ভবন চিহ্নিত করেছি, যেগুলো নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। এ ভবনগুলোর যেটুকু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে, সেটুকু ভেঙে ফেলব। আমি যতদিন দায়িত্বে আছি, এর মধ্যে এ কাজ চালিয়েই যাব। এগুলো ভেঙে হোক কিংবা অন্যভাবে হোক-তাদের নিয়মের মধ্যে আনব। আমরা নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি।
নগর সরকার কিংবা সব প্রতিষ্ঠানকে এক ছাতার নিচে আনার মতো ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব উল্লেখ করে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ঢাকাকে এক ছাতার নিচে না আনলে যত পরিকল্পনাই করা হোক না কেন, কাজে আসবে না। সব কাজের সিদ্ধান্ত একটি জায়গা থেকে আসতে হবে। সেখানে নগর সরকার হোক কিংবা এক মেয়রের কাছে ক্ষমতা থাকুক, সেটায় সমস্যা নেই। নগরের পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, সেবাসহ সব সেবার বিষয়ে একটি জায়গা থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, এ মুহূর্তে যারা বাড়ি করে ফেলেছে, সেগুলোর ব্যবস্থা পরে নেব। সব কাজ একসঙ্গে করা সম্ভব নয়। তবে নির্মাণাধীন ভবনের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না, সেটা নিশ্চিত করছি। আমাদের নতুন করে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা বেদখল হওয়া প্লটগুলো উদ্ধার করে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করব।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সদস্য খালেদ সাইফুল্লাহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মতিন আব্দুল্লাহ। অনুষ্ঠানে সংগঠনটির প্রকাশনা ‘ঢাকাই’ ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। একই সঙ্গে সংগঠনের উপদেষ্টা হেলিমুল আলম বিপ্লবের ঢাকার খালগুলো নিয়ে প্রকাশিত বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিআইপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, ঢাকাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ করতে গিয়ে সমস্যায় জর্জরিত করে ফেলেছি। ঢাকা শহরের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। ঢাকার ড্যাপের পরিকল্পনায় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৩৫ লাখ মানুষের জন্য ঢাকাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলা। এক্ষেত্রে জোনভিত্তিক পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। সুশাসন, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারলে ঢাকার বাসযোগ্যতা ফেরানো সম্ভব।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যায়নকেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান বলেন, ঢাকা শহরের প্রকৃতি, মায়া, ব্যবস্থাপনায় ঢাকা থাকার কথা। কিন্তু এখন জলজট, বায়ুদূষণ, শব্দ ও শিসাদূষণে ঢাকা। আর কতদিন এই অপরিকল্পিত নগরের সমস্যাগুলো নিয়ে আমাদের শিশুদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে? শহরের অর্ধেক মানুষ ঘুমাতে পারেন না আমিনবাজার ও মাতুয়াইলের ল্যান্ডফিলের পোড়ানো বর্জ্যরে দূষিত ধোঁয়ার কারণে। শব্দদূষণ ৮০ শতাংশ হয় যানবাহনের কারণে। ঢাকা শহর এখন তাপের শহর হয়ে গেছে। এ শহরে আড়াই কোটি মানুষকে নিয়ে পরিকল্পনা করা যাবে না। যদি সমস্যার সমাধান করতে না পারি, তাহলে সূচকে তলানি থেকে ওপরে উঠতে পারবে না।
মূল প্রবন্ধে উপস্থাপনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, দেশের জিডিপির এক-পঞ্চমাংশ আসে ঢাকা থেকে। ঢাকার চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঘনবসতি, যানজট, দূষণ, জলাবদ্ধতা প্রভৃতি। এর অন্যতম কারণগুলা হচ্ছে-ঢাকার ওপেন স্পেস ও খালগুলো দখল করা, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ভবন গড়ে তোলা। কোনো মন্ত্রণালয় স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে পারেনি গত আট মাসে। থাইল্যান্ডের ব্যাংকক শহরের মধ্যে বস্তি ছিল। কিন্তু তারা সেই জায়গা থেকে ফিরে এসেছে, তারা কমিউনিটি বেইজড হাউজিং করেছে। তারা পরিবর্তন এনেছে রাজউকের মতো সংস্থার মাধ্যমে। ঢাকায় ৮ ধরনের মহল্লা আছে। সেগুলোয় যদি তিনটি করে উদাহরণ হিসাবে হাউজিং করা যায়, তাহলে অনেকেই এটা দেখে উদ্বুদ্ধ হব। অনুষ্ঠানে সংলাপের আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী-পরিকল্পনাবিদ মো. নুরুল্লাহ, রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম, স্থপতি সুজাউল ইসলাম খান প্রমুখ।
