Logo
Logo
×

শেষ পাতা

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন

কাতারের জোরালো ভূমিকার আহ্বান ড. ইউনূসের

Icon

বাসস

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কাতারের জোরালো ভূমিকার আহ্বান ড. ইউনূসের

ছবি: সংগৃহীত

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে ওআইসিকে সক্রিয় করতে কাতারের প্রতি জোরালো ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কাতারের দোহায় আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বুধবার এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন শুরু করতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য কাতার তাদের কূটনৈতিক প্রভাব কাজে লাগাতে পারে। আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক ও ভূকৌশলগত বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে কাতার জোরালোভাবে তাদের সংহতি প্রকাশ করে এ সংকট সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া ওআইসি দেশগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তহবিল সংগ্রহ জোরদার ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে মতপ্রকাশের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

‘বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তুচ্যুত জনগণের সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ-রোহিঙ্গা ইস্যু’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

মানবতা, স্থিতিশীলতা ও ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করতে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আসুন আমরা নিশ্চিত করি, আজকের আলোচনা শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে একটি অর্থবহ অংশীদারত্বের সূচনা করে, যা রোহিঙ্গা সংকটকে আমাদের যৌথ মানবিক অগ্রাধিকারগুলোর শীর্ষে রাখে এবং একটি স্থায়ী সমাধানের দিকে একযোগে কাজ করে।’ তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে এবং রোহিঙ্গাদের হতাশ করে তুলছে। ক্যাম্পগুলোতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বৃদ্ধি এবং অবৈধ অভিবাসনের চেষ্টা তাদের হতাশার স্পষ্ট চিহ্ন। এ সমস্যা আরও দীর্ঘস্থায়ী হলে এটি পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং উন্নয়নমূলক উদ্যোগগুলোও হুমকির মুখে পড়তে পারে। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে উদ্ভূত নানা সংঘাতের কারণে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ধীরে ধীরে রোহিঙ্গা সংকট থেকে সরে যাচ্ছে। তিনি জানান, এ বছর সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন’ আয়োজন করবে। এ সম্মেলনে কাতারের উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ।

রোহিঙ্গাদের আস্থা ফেরাতে এবং রাখাইন রাজ্যে তাদের প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমার ও এর কর্মকর্তাদের অপরাধের জন্য দায়ী করা-একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বর্তমান সংকটের একমাত্র সমাধান হিসাবে টেকসই প্রত্যাবাসনকেই বিবেচনা করে।

স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে স্পেসএক্সের গ্লোবাল এনগেজমেন্ট বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার সাক্ষাৎ করেছেন। বুধবার কাতারের দোহায় আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশে স্পেসএক্স স্যাটেলাইট পরিষেবা চালুর ব্যাপারে চূড়ান্ত পর্বের সহযোগিতা নিয়ে তারা আলোচনা করেন। বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহের কথা জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে এটি একটি বড় খবর। মানুষ দিন গুনছে। এ অংশীদারত্ব পুরোপুরি শুরু হবে একটি প্রযুক্তিগত রোলআউটের মাধ্যমে এবং কয়েকটি চূড়ান্ত বিষয়ের সমাধান হলে।

দুই দশক ধরে ইলন মাস্কের সঙ্গে কাজ করা ড্রেয়ার জানান, আমরা প্রায় শেষ রেখায় পৌঁছে গেছি। টিমকে নির্দেশ দিয়েছি-মে মাসের মধ্যে প্রযুক্তিগত উৎক্ষেপণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে।

রোহিঙ্গা সংকট বৈশ্বিক আলোচনায় ফিরেছে-প্রেস সচিব : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট বিশেষ করে বাংলাদেশে যে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রিত, একটা মানবিক সংকট। এ সংকট এক সময় বড় ধরনের আঞ্চলিক সংকট তৈরি করতে পারে এবং যা নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ বিষয়গুলো বৈশ্বিক আলোচনা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিল। কিন্তু অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে রোহিঙ্গা ইস্যু বৈশ্বিক আলোচনায় ফিরে এসেছে। বুধবার আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বছর জাতিসংঘ সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। তার অনুরোধে জাতিসংঘ একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলাদা সম্মেলন হবে। ১৭০টি দেশ সেখানে অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দোহার আর্থনা সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যাটি এখন কী পর্যায়ে রয়েছে, আমাদের এখন কী করণীয় ইত্যাদি তুলে ধরা হয়।

ড. ইউনূস কাতার রোহিঙ্গা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম