Logo
Logo
×

শেষ পাতা

এনবিআর দুই ভাগ

খসড়া অধ্যাদেশে কাস্টমসের মতামত প্রতিফলিত হয়নি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

খসড়া অধ্যাদেশে কাস্টমসের মতামত প্রতিফলিত হয়নি

রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশের খসড়ায় কাস্টমস ক্যাডারের প্রত্যাশা প্রতিফলিত হয়নি। প্রয়োজনীয় সংশোধন ছাড়া এই অধ্যাদেশ কার্যকর হলে তা এনবিআর সংস্কারের মূল লক্ষ্য, উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করবে এবং কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির প্রতিবন্ধক হতে পারে। রোববার বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব বাস্তবায়ন পৃথক্করণে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ভিশন ও পরিকল্পনাকে বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন ধারণ করে ও স্বাগত জানায়। তবে অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, রাজস্ব সংস্কার কেবল পৃথক্করণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা সমীচীন নয়। বরং তা টেকসই করতে রাজস্ব ব্যবস্থার সামগ্রিক শক্তিশালীকরণ, যথাযথ বিনিয়োগ ও উন্নয়নের বিষয়টিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশের খসড়ায় দুই সংগঠনের প্রত্যাশা প্রতিফলিত হয়নি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, খসড়ার ৪(৩) অনুচ্ছেদে ‘উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন যে কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে’ রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব নিযুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। এতে রাজস্ব নীতি প্রণয়নে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যক্ষভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। প্রসঙ্গত, রাজস্ব নীতি বিভাগ গঠনের মূল লক্ষ্য হলো-নীতি ও ব্যবস্থাপনা পৃথক্করণের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও বিশেষায়িত বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে যুগোপযোগী, আধুনিক ও ব্যবসাবান্ধব রাজস্ব নীতি প্রণয়ন। রাজস্ব আহরণের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রাজস্ব নীতি বিভাগের শীর্ষ পদে পদায়ন করা হলে রাজস্ব বিভাগকে পৃথক করার মূল উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তারা দীর্ঘমেয়াদে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), আয়কর, কাস্টমস মূল্যায়ন, পণ্য শ্রেণিবিন্যাস, আমদানি-রপ্তানির কাজ করে দক্ষতা অর্জন করেন। এই দক্ষতা রাজস্ব ব্যবস্থাপনাসহ নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ ও নীতি প্রণয়নের ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতা অনস্বীকার্য। ফলে দীর্ঘদিন মেধা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেও নীতিনির্ধারণী পদে কাজের সুনির্দিষ্টভাবে সুযোগ না থাকলে হতাশাজনিত কারণে কর্মস্পৃহা হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পক্ষান্তরে আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের উপযুক্ত মর্যাদা প্রদান করা হলে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও প্রেরণার উন্নয়ন ঘটবে, যা সামগ্রিকভাবে রাজস্ব প্রশাসনকে বেগবান করবে।

খসড়ার ৫ অনুচ্ছেদে রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, ‘কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিস্থিতি পরিবীক্ষণ’ করবে রাজস্ব নীতি বিভাগ। কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিবীক্ষণের বিধান রাখায় নীতি বিভাগকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের কার্যক্রম তদারকির সুযোগ থেকে যায়। এক বিভাগের কার্যক্রম সমমর্যাদাসম্পন্ন অপর বিভাগ পরিবীক্ষণের বিধান রাখা হলে তা আইনের দৃষ্টিতেও সাংঘর্ষিক বিবেচিত হয়। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের শীর্ষ পদে ২০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের পালাক্রমে নিয়োগের সুপারিশ করে দুই অ্যাসোসিয়েশন। খসড়ার অনুচ্ছেদে ‘রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব/সিনিয়র সচিব হিসাবে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান’-এর বিধান যুক্ত করা হয়েছে। কাস্টমস অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, রাজস্ব ব্যবস্থাপনার পদটিতে কর-রাজস্ব আহরণের বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নয়-এমন কর্মকর্তাদের প্রবেশাধিকার সৃষ্টি হতে পারে, যা কর-রাজস্ব আহরণে দীর্ঘদিনের অর্জিত বিশেষায়িত জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ সীমিত করবে।

খসড়ার ৭(৫) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বর্তমানে এ পদ দুটি আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদস্থ রয়েছেন, যা তাদের নির্ধারিত পদ। কিন্তু খসড়ায় প্রশাসনিক পদগুলোয় আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তা থেকে পূরণের সুযোগ রাখা হয়নি। বিশেষায়িত দক্ষ জনবল সৃষ্টি, বিদ্যমান জনবলের ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও পেশাগত স্বার্থরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক পদগুলোয় সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের জনবল থেকে পূরণ করা বাঞ্ছনীয় বলে কাস্টমস অ্যাসোসিয়েশন মনে করে। সরকার গঠিত রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের শীর্ষ পদ আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দ্বারা পূরণ সময়ের দাবি।

বিভাগ দুটিকে কার্যকর, ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব, গতিশীল এবং অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম হবে। বিশেষ কোনো মহলের প্ররোচনায় অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের জন-আকাঙ্ক্ষাবিরোধী এবং সংস্কারের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থি কোনো উদ্যোগ কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির প্রতিবন্ধক হতে পারে।

এনবিআর

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম