Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সাংবাদিকদের অর্থ উপদেষ্টা

আইএমএফের সব শর্ত মেনে ঋণ চাই না

Icon

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আইএমএফের সব শর্ত মেনে ঋণ চাই না

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দীন।

আইএমএফের ঋণ নিয়ে একটি কঠিন সিদ্ধান্তের দিকে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার-এমন আভাস মিলছে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দীন আহমেদের বক্তব্যে। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি বজায় রাখার ব্যাপারে বাংলাদেশ কঠিন সিদ্ধান্ত নেবে। আর কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি আইএমএফের হাতে নয়, বরং বাংলাদেশের হাতে। তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত নেব আমাদের মতো করে। এতে আইএমএফ কিস্তি দিলে দেবে, না দিলে নিজেদের মতো করে বাজেট করব।’ তিনি বলেন, আইএমএফের সব শর্ত মেনে আমরা ঋণ নিতে চাই না।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। এর একদিন আগে অর্থাৎ সোমবার বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফিরেছেন অর্থ উপদেষ্টা। মঙ্গলবার তিনি প্রথম অফিস করেন। বসন্তকালীন বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থ সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার প্রমুখ যোগ দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে ২১ এপ্রিল শুরু হয়ে ২৬ এপ্রিল শেষ হয় এ বৈঠক। সেখানে বৈঠকের ফাঁকে আইএমএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সাইডলাইনে বৈঠক হয়।

তার আগে আইএমএফের চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির পর্যালোচনা করতে সংস্থার একটি মিশন ২ সপ্তাহের জন্য ঢাকা ঘুরে গেছে। কিন্তু ঢাকা বা ওয়াশিংটন কোথাও আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচি থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়া নিয়ে ইতিবাচক বার্তা পাওয়া যায়নি।

অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইএমএফের সব শর্ত মেনে আমরা ঋণ নিতে চাই না। কারণ, বাংলাদেশ এখন আর আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয়।’

বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার শর্ত রয়েছে আইএমএফের-একথা উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তারা বলেছে, বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে। আমরা বলেছি, বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তা পুরোপুরি বাজারে ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তখন বিনিময় হার পাকিস্তান বা শ্রীলংকার মতো হয়ে যেতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, বাজেটে সহায়তার অর্থ ৫ বছরের মধ্যে ফেরত দিতে হয়। আমরা সতর্ক আছি। আইএমএফ টাকা দিলেই আমরা নেব না। আমরা তো ঋণের বোঝা নিতে চাই না। যদি ঋণ নিতে থাকি, টাকার বিনিময় হার কমে গেলে যেখানে ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধ করার কথা, কিন্তু পরে সেটি ৫ বিলিয়ন ডলার হয়ে যাবে। আমরা এসব বিষয় চিন্তাভাবনা করছি।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সংস্থাটি থেকে অর্থ না নিয়েই দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি বর্তমানে স্থিতিশীল পর্যায়ে আছে। আর বর্তমান সরকার আসার পর কিন্তু আইএমএফ থেকে কোনো টাকা পাওয়া যায়নি।

তাদের বলেছি, তোমাদের টাকা ছাড়াই আমরা সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে পেরেছি।

ড. সালেহউদ্দীন বলেন, প্রকল্প সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংক, এডিবি পাইপলাইনে আছে। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে এক মিলিয়ন ডলার চেয়েছি। এনডিবি ও ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে সহায়তা চেয়েছি।

৯ মাস ধরে আইএমএফের টাকা পাওয়া যাচ্ছে না-এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা একটা শক্ত পদক্ষেপ নেব। ইন্দোনেশিয়ায় টাকা দিতে পারেনি। ফলে সংস্থাটির অনেকের চাকরি চলে গেছে। মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছেন। ফলে আইএমএফের অনেকের চাকরি চলে গেছে। আমরা যদি না নেই, দেখবেন ওখানে কয়জনের চাকরি যায়।

ঋণের শর্ত প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দু-একটা ইস্যু আছে যেটা মেজর না। কিছু শর্ত আছে যেগুলোর সব আমরা পরিপালন করতে চাই না। আমরা সেসব বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে আর্গুমেন্ট করেছি। তারা বলেছে, এটি করো সেই করো, আমরা সে পথে হাঁটব না।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দীন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম