Logo
Logo
×

শেষ পাতা

পরামর্শক সভায় অর্থ উপদেষ্টা

বাস্তবায়নযোগ্য বাস্তবসম্মত বাজেট করা হবে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাস্তবায়নযোগ্য বাস্তবসম্মত বাজেট করা হবে

ছবি: সংগৃহীত

এবার বাস্তবায়নযোগ্য ও বাস্তবসম্মত বাজেট করা হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের মতো বাজেটে ব্যয়ের মচ্ছব থাকবে না। বাজেটে ব্যবসা সহজীকরণের পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালনার প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার চেষ্টা থাকবে। একই সঙ্গে পরবর্তী সরকারের জন্য রূপরেখাও থাকবে। বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে আগামী অর্থবছরের বাজেটসংক্রান্ত পরামর্শক সভায় এ আভাস দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সভায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনও একই ইঙ্গিত দেন।

এনবিআর ও এফবিসিসিআই যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। এফবিসিসিআই প্রশাসক হাফিজুর রহমান সভা সঞ্চলনা করেন। 

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এবার বাস্তবায়নযোগ্য ও বাস্তবসম্মত বাজেট করা হবে। শপিং লিস্ট বা উইশ লিস্টের ভিত্তিতে বাজেট করা হবে না, যেমনটা চিরাচরিত। আমরা যেটা বলব, সেটা করার চেষ্টা করব। 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঋণ পেতে শক্ত নেগোসিয়েশনের মধ্যে আছি। আজ একটি সংস্থার সঙ্গে আলোচনা হবে। তবে আইএমএফের ঋণের ব্যাপারে আমরা খুব একটা চিন্তিত নই। ইতোমধ্যে সামষ্টিক অর্থনীতিতে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তাছাড়া বিশ্বব্যাংক ও ওপেকের সঙ্গে ঋণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা বেশ ইতিবাচক। 

তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে বহির্বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি বেশ ভালো। কিন্তু আমরা নিজেরাই মাঝে মধ্যে নেতিবাচক বলি। তখন বিদেশিদের বোঝাতে কষ্ট হয়। আলোচনায় অসুবিধা হয়। কর অব্যাহতির যুগ চলে গেছে মন্তব্য করে সালেহউদ্দিন বলেন, রাজস্ব আয় বাড়ানো নিয়ে চ্যালেঞ্জ আছে। কারণ রাজস্ব আয় বাড়ানো না গেলে সরকার চালানো যাবে না, ব্যবসায়ীদেরও প্রণোদনা দেওয়া যাবে না।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ফ্যাসিস্ট আমলে ব্যয়ের মহোৎসবভিত্তিক বাজেট হতো। যার প্রয়োজন ছিল না। সব মন্ত্রণালয়ে একই অবস্থা। অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবতার ভিত্তিতে বাজেট করবে। লক্ষ্যভিত্তিক বাজেট তৈরি করবে। যার মাধ্যমে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি আরও বলেন, এক কোটির বেশি টিআইএনধারী আছে। এর মধ্যে ৪০ লাখ রিটার্ন দেয়। যারা রিটার্ন জমা দেয়, তাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ আবার শূন্য রিটার্ন দেয়। ব্যবসায়ীরা কখনো নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জরিপ চালিয়ে দেখেছে তার কত জন কর্মী শূন্য রিটার্ন দিয়েছে। কখনো জানতে চেয়েছে কেন শূন্য রিটার্ন দিচ্ছে। দায়টা সরকারের ওপর চাপানো খুব সহজ। 

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, সবাই কর অব্যাহতি চায়। অথচ রাষ্ট্র চালাতে রাজস্বের দরকার আছে। এনবিআরকে প্রতিবছর অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের দায় দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কর ন্যায্যতা তৈরি করতে না পারলে সমাজে দুর্বৃত্তায়ন হয়। দুর্বৃত্তরা ক্ষমতায় আসে। তারা ক্ষমতায় এসে এমন অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে যেটা অতীতে আমরা দেখেছি। বিগত সংসদে ব্যবসায়ীরা প্রতিনিধিত্ব করে যেভাবে সাংবিধানিক রূপ দিয়েছে। তাই মাঝে মাঝে ব্যবসায়ী পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, এখন বিনিয়োগের চেয়ে বড় ইস্যু হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। বেসরকারি খাতের সহায়তা ছাড়া কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব নয়। আমরা চেষ্টা করছি সরকারকে ব্যবসা করা থেকে সরিয়ে আনতে। ব্যবসায়ীরাই ব্যবসা করবেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের কর কাঠামোয় সমস্যা আছে। কারণ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, যাদের মার্কেট বেশি, তাদের ট্যাক্স শেয়ার কিন্তু বেশি নয়। আবার কোথাও ফিনিশড গুডসের চেয়ে কাঁচামালের শুল্ক বেশি আছে। 

এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, সরকার চালানোর জন্য রাজস্ব প্রয়োজন। সেই রাজস্ব কোন জায়গা থেকে আসে, তার ওপর নির্ভর করে আমরা কতটুকু সভ্য হয়েছি। আমাদের রাজস্বের এখনো দুই-তৃতীয়াংশ গরিবরাই দেন, এটাই বাস্তবতা। অথচ উন্নত দেশে উলটো চিত্র, তাদের রাজস্বের বেশিরভাগই আসে প্রত্যক্ষ কর বা আয়কর থেকে। তিনি আরও বলেন, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের একটি হার হওয়ার উচিত। কর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য এটি প্রয়োজন। করপোরেট কর কমানো হয়েছে। এটি আর কমানো সম্ভব নয়। এবারের বাজেটে ব্যবসা সহজীকরণে এনবিআর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালনার প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার চেষ্টা থাকবে। 

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের এখানে আইনের শাসন নেই, সুশাসনের সিরিয়াস ইস্যু আছে। এজন্য যারা কর ফাঁকি দেয়, তারা সহজে পার পেয়ে যেতে পারে। এনবিআরেরও রাজস্ব ফাঁকি বন্ধের চেষ্টার অভাব আছে। এটা বন্ধ করতে হলে ব্যবসায়ী ও এনবিআর উভয়কেই এগিয়ে আসতে হবে। 

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান বলেন, বাংলাদেশের গড় ট্যারিফ ৫৮ শতাংশ, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় সমস্যা সৃষ্টি করছে। তাছাড়া অনেক পণ্যে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করা আছে, যা টাকা পাচারের ক্ষেত্র তৈরি করছে। এটা প্রত্যাহার করলে অপবাণিজ্যের পথ বন্ধ হবে। 

ব্যবসায়ীরা যা বললেন : সভায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত চেম্বার সভাপতি এবং খাতভিত্তিক অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা অংশ নেন। বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রপ্তানিমুখী ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত হলেও চালানের জন্য রাস্তায় ট্রাক আটকে রাখা হয়। চালানের বিধান বিলুপ্ত করার দাবি জানান তিনি। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিশেয়নের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। জ্বালানি আমদানিতে ৬ শতাংশ শুল্ক-কর রয়েছে। এটি প্রত্যাহার করে গ্যাসের দাম কমানো সম্ভব। তিনি আরও বলেন, এক সময় টেক্সটাইল মিলের যন্ত্রাংশ আমদানিতে বিটিএমএ সনদ ইস্যু করতে পারত। এ নিয়ে তখন কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু এটি এনবিআরে নিয়ে যাওয়ার পর হয়রানি শুরু হয়েছে। ৩০ হাজার টাকা শুল্কের জন্য ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হয়। সেই গ্যারান্টি তুলতে আবার ৫০ হাজার টাকা ঘুস দিতে হয়। পোশাক শিল্পের মতো টেক্সটাইল শিল্পের করপোরেট কর ১২ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দেন তিনি। 

মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করে গত দুই বছরেও গ্যাস ও বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। আমরা বিদেশিদের বিনিয়োগের জন্য ডাকছি। অথচ নিজের দেশের উদ্যোক্তারা জ্বালানি সংকটে ভুগছেন। এটা অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। কারণ বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিনিয়োগের জন্য আবশ্যক। হয়রানি কমাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আদলে দেশি বিনিয়োগকারীদের ওয়ানস্টপ সার্ভিস দেওয়ার দাবি জানান স্টিল ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাসুদুর রহমান। লালমনিরহাট চেম্বারের সভাপতি বলেন, দুই মাসে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫-১৬ শতাংশ হয়েছে। এটা দুঃখজনক। ব্যবসায়ীরা এত মুনাফা করতে পারে না।


অর্থ উপদেষ্টা বাজেট

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম