Logo
Logo
×

শেষ পাতা

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ব্যাখ্যা

স্বচ্ছ-যোগ্য কর কাঠামোর লক্ষ্যে এনবিআর সংস্কার

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

স্বচ্ছ-যোগ্য কর কাঠামোর লক্ষ্যে এনবিআর সংস্কার

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠন কেবল আমলাতান্ত্রিক রদবদল নয়। একটি স্বচ্ছ ও আরও যোগ্য কর ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য এটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। নবগঠিত দুই বিভাগ শক্তিশালী নীতি নির্ধারণ ও স্বচ্ছ কর প্রশাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিকদের চাহিদা পূরণ ও আশা বাস্তবায়নের সক্ষম হবে। মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে এনবিআর বিলুপ্তের ব্যাখ্যায় এসব কথা বলা হয়েছে।

পৃথকীকরণের যৌক্তিকতার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ স্থাপন করা হবে। এ সিদ্ধান্তের লক্ষ্য হল- দক্ষতা উন্নত করা, স্বার্থের দ্বন্দ্ব কমানো এবং দেশের কর ভিত্তি সম্প্রসারণ করা, কর প্রশাসন থেকে কর নীতি নির্ধারণকে পৃথক করা। কারণ পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় আগে প্রতিষ্ঠিত এনবিআর তার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৭.৪ শতাংশ, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। জনগণের উন্নয়ন আকাক্সক্ষা অর্জনের জন্য, বাংলাদেশকে অবশ্যই কর-জিডিপি অনুপাত কমপক্ষে ১০ শতাংশ এ উন্নীত করতে হবে। এ লক্ষে অর্জনে এনবিআর পুনর্গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, নীতি নির্ধারণ এবং প্রয়োগ- দুটো এক ছাদের নীচে থাকার ফলে কর নীতির সঙ্গে আপোস এবং ব্যাপক অনিয়মের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থায় কর আদায়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা কোন জবাবদিহিতা কাঠামোর অধীন নন। প্রায়শই জনস্বার্থের বিপরীতে কর ফাঁকিবাজদের সঙ্গে আলোচনা করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে আদায়কারীরা কর ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চান না। কর আদায়কারীদের কর্মক্ষমতা বস্তুনিষ্ঠভাবে পরিমাপ করার জন্য কোনও ব্যবস্থা এবং প্রক্রিয়া নেই।

এছাড়া এনবিআরের বর্তমান কাঠামো নীতি প্রণয়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ে পর্যাপ্ত মনোযোগ দিতে পারছে না। ফলশ্রুতিতে কর জাল সংকীর্ণ রয়ে গেছে এবং রাজস্ব আদায় সম্ভাবনার চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। দুর্বল শাসনের কারণে এনবিআর ধারাবাহিকভাবে আইন বাস্তবায়ন করতে পারছে না, বিনিয়োগকারীদের কাঙ্ক্ষিত সুবিধা দিতে পারছে না। এবং পদ্ধতিগত শাসন সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছে। যার ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে এবং আইনের শাসন দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও রয়েছে। বিদ্যমান কাঠামোয় অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রধান এনবিআরের নেতৃত্ব দেয়ায় বিভ্রান্তি এবং অদক্ষতা তৈরি করছে, কার্যকর কর নীতি নকশা এবং প্রদানকে ব্যাহত করছে।

রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ গঠনের মাধ্যমে এনবিআর সংস্কার কীভাবে সাহায্য করবে তাও ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, একটি স্পষ্ট, আরও জবাবদিহিমূলক কাঠামোর মাধ্যমে সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য নতুন কাঠামোটি ডিজাইন করা হয়েছে। দুই বিভাগের দায়িত্ব স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রণয়ন, হার নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কর চুক্তি পরিচালনার জন্য দায়ী থাকবে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রয়োগ, নিরীক্ষার তত্ত্বাবধান করবে। এটি কর কাঠামো স্বার্থের দ্বন্দ্ব হ্রাস করার মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করবে।

এ পৃথকীকরণের ফলে করজাল সম্প্রসারিত হবে, পরোক্ষ কর নির্ভরতা কমবে, প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়বে। এছাড়া একটি নিবেদিত নীতি ইউনিট কেবল স্বল্পমেয়াদী রাজস্ব লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত নীতির পরিবর্তে প্রমাণ-ভিত্তিক, ভবিষ্যতমুখী কর কৌশল তৈরি করতে ভূমিকা রাখতে পারবে। সর্বোপরি এই সংস্কার বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হবে। কেননা স্বচ্ছ, পূর্বাভাসযোগ্য নীতি কাঠামো এবং পেশাদার কর প্রশাসন বিনিয়োগ আকর্ষণে এবং বেসরকারি খাত থেকে অভিযোগ কমাতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিন দিনের কলম বিরতি: এদিকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশে আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের মতামত প্রতিফলিত না হওয়ায় ৩ দিনের কলম বিরতি কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ক্ষুব্ধ আয়কর ও কাস্টমস কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার বিকালে আগারগাওয়ে এনবিআর ভবন প্রাঙ্গনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি তুলে কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুন্ডু বলেন, আগামী ১৪, ১৫ ও ১৭ মে-এই তিন দিন এনবিআরের অধীনস্ত সকল দপ্তরের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলম বিরতি পালন কর্মসূচি পালন করবেন। ১৪ মে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত এবং ১৫ ও ১৭ মে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কলম বিরত কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রী সেবা, বাজেট ও রপ্তানি কার্যক্রম চালু থাকবে। পরবর্তী কর্মসূচি আগামী ১৭ মে বিকাল ৩টায় ঘোষণা করা হবে।

কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, এ অধ্যাদেশটি হয়েছে বর্তমান সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে। এনবিআর সংস্কারের জন্য সরকার একটি পরামর্শক কমিটি করেছিল। সেই কমিটিতে দেশের যোগ্য ব্যক্তিদের সরকার অন্তর্ভুক্ত করেছে। কিন্তু কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেটি প্রকাশ করা হয়নি। অংশিজনদের সঙ্গে ভালমন্দ নিয়ে আলোচনা হয়নি। দুই ক্যাডারের মতামতকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে অনেকটা গোপনীয়ভাবে এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।

আয়কর ক্যাডারের যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা শারমীন সুস্মিতা বলেন, যে ফরম্যাটে অধ্যাদেশটি জারি হয়েছে সেখানে কাস্টমস ও ট্যাক্স সার্ভিসের কর্মকর্তাদের চাওয়া বা ইচ্ছার প্রতিফলন হয়নি।

প্রধান উপদেষ্টা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম