মন্দা শেয়ারবাজারে যুদ্ধের প্রভাব
ডিএসইর বাজারমূলধন কমল ১০ হাজার কোটি টাকা
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এমনিতেই শেয়ারবাজারে চরম মন্দা চলছিল। এরপর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের খবরে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। অর্থাৎ মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক প্রায় ১৫০ পয়েন্ট কমেছে। এর ফলে একদিনে ডিএসইর বাজারমূলধন কমেছে ১০ হাজার কোটি টাকা। শেয়ারবাজারের ওপর এটি বড় ধরনের ধাক্কা। তবে বাজারসংশ্লিষ্ট অন্য একটি সূত্র বলছে ভিন্ন কথা। সূত্রটির মতে, বুধবারের পতনের জন্য যুদ্ধ পরিস্থিতি পুরোপুরি দায়ী নয়। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আগামী ১১ মে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নেয়নি। কারণ বাজারে খবর ছড়িয়েছে রাশেদ মাকসুদকে অপসারণ করা হচ্ছে। কিন্তু তিনি উপস্থিত থাকছেন সেই বৈঠকে।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার পাকিস্তানে হামলা চালায় ভারত। ফলে দুই দেশের যুদ্ধ শুরু হয়। এর প্রভাবে বুধবার ঢাকার শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। লেনদেন শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে সূচক ৭০ পয়েন্ট পড়ে যায়। দিনের শেষ সময় পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। এ সময়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির ব্যাপক চাপ দেখা গেছে। দিনশেষে বুধবার ডিএসইতে ৩৯৯টি কোম্পানির ২৪ কোটি ৩০ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ৫১৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ৯টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ৩৮৫টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
দিনশেষে ডিএসইর ব্রডসূচক আগের দিনের চেয়ে ১৪৯ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৮০২-এ নেমে এসেছে, যা ৩ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ পুরো বাজারের সবগুলো কোম্পানির শেয়ারের দাম গড়ে ৩ শতাংশ কমেছে। ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক ৪০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৯৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এর ফলে প্রভাব পড়েছে বাজারমূলধনে। মঙ্গলবার ডিএসইর বাজারমূলধন ছিল ৬ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। বুধবার একদিনে ১০ হাজার কোটি টাকা কমে ৬ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। যে কোনো বিবেচনায় তা অস্বাভাবিক।
জানতে চাইলে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বুধবারের দরপতন অস্বাভাবিক। আমার ধারণা ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তবে বিনিয়োগকারীরা যখন বুঝতে পারবে, ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের সম্পর্ক নেই, তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক : এদিকে শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী ১১ মে রোববার দুপুর ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় বৈঠকটি হবে। এতে উপস্থিত থাকবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক এবং বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে এক ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের খবর শুনলেই সূচক বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীদের বিবেচনায় চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি যোগ্য নন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে তিনি উপস্থিত থাকবেন এই বিষয়টি বিনিয়োগকারীরা ভালোভাবে নেয়নি। বাজারে এর প্রতিফলন দেখা গেছে।
