সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন
সচিবালয়ের সব সংগঠনের প্রতিবাদ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে। এখন রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হলেই তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। তবে অধ্যাদেশের খসড়ায় কী আছে বা আইনে কী কী পরিবর্তন আনা হয়েছে, সে বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে কিছু বলা হয়নি।
তবে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপনের আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যে খসড়া তৈরি করেছিল, তাতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সহজেই শাস্তি, এমনকি চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সুযোগও রাখা হয়েছে। সেই খসড়া অনুযায়ী, চার ধরনের অপরাধ ও তিন ধরনের শাস্তিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মূলত ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ ১৯৭৯ যুক্ত করা হয়েছে। সরকারি চাকরি আইনের সঙ্গে অধ্যাদেশটি যুক্ত করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করেছিল। জানা গেছে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন পাওয়া অধ্যাদেশে সংক্ষিপ্ত তদন্তে সরকারি কর্মকর্তাদের অব্যাহতি দেওয়া যাবে। এজন্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলো এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ : ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ সংশোধন করে ১৯৭৯ সালের বিশেষ আইনের বিধান যুক্ত করার প্রতিবাদ জানিয়েছে সচিবালয়ের একাধিক কর্মচারী সংগঠন। সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের দুই অংশ এবং আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনও লিখিত বিবৃতি দিয়েছে।
সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বাদিউল কবীর ও মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ জানিয়েছেন, ১৯৭৯ সালের বিশেষ বিধানের প্রস্তাবিত ধারাগুলো সংযোজন করা হলে দেশে সংকটের উদ্ভব ঘটবে।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের (একাংশ) সভাপতি নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় নেতৃবৃন্দ জানান, এ অধ্যাদেশ সংশোধনের পূর্বে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। গোপনে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং (আইনি মতামত) নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এজন্য দেশের সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এ অধ্যাদেশ জারি হলে দেশ ও জাতির সেবার ক্ষেত্রে কর্মচারীদের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা সংকুচিত হবে। কতিপয় স্বার্থবাদী কর্মকর্তার অধীনে থাকা কর্মচারীরা ব্যক্তিগত দাসত্বে পরিণত হবে। ক্ষমতার অপব্যবহার বেশি হবে। বিভিন্ন কারণে অপছন্দের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মক্ষেত্রে নাজেহাল হবে। চাকরি হারানোর সুযোগ তৈরি হবে। ভয়-ভীতির কারণে সরকারি কাজের পরিবেশ বিঘ্নিত হবে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা ব্যক্তিতন্ত্রে পরিণত হবে।
এ অবস্থায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যেই সচিবালয়ে কর্মচারীরা সংগঠিত হতে থাকেন। এ অধ্যাদেশ প্রণয়নের প্রতিবাদে তারা মিছিল সহকারে ১, ২ ও ৩ ভবন প্রদক্ষিণ করে নতুন ২০ তলা ভবনের নিচে সমবেত হয়ে স্লোগান, মিছিল করেন এবং নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।
