পাচার করা অর্থ দেশে ফেরানো
উদ্ধার করা সম্পদ থেকে এজেন্ট কমিশন পাবে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিদেশে পাচার করা টাকা দেশে ফেরানোর ক্ষেত্রে টাস্কফোর্সের ক্ষমতা আরও বাড়ানা হচ্ছে। টাস্কফোর্স পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন হলে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও মামলা করতে পারবে। একই সঙ্গে টাকা ফেরানোর কাজে সহায়তা করতে ও মামলা পরিচালনায় এজেন্ট নিয়োগ করা যাবে। এজেন্টকে বাংলাদেশ সরকার থেকে নগদ কোনো অর্থ দেওয়া হবে না, উদ্ধার করা টাকা থেকে তাদের নির্ধারিত হারে কমিশন দেওয়া হবে। কমিশনের হার কত হবে তা এজেন্ট নিয়োগের সময় চুক্তিতে উল্লেখ থাকবে। তবে সাধারণত উদ্ধার অর্থ থেকে ১০ শতাংশ কমিশন দেওয়া হয় এজেন্টকে। টাস্কফোর্সের কাছে অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তথ্য দিতে পারবে। এক্ষেত্রে তথ্য প্রদানকারীর নিরাপত্তার স্বার্থে নাম-পরিচয় গোপন রাখা হবে। জনস্বার্থ আইনে তাকে সুরক্ষা দেওয়া হবে। খসড়ায় বলা হয়, উদ্ধার করা অর্থের মালিকানা থাকবে সরকারের হাতে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস আলাদা একটি হিসাবের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে উদ্ধার করা সম্পদ ব্যবস্থাপনা করবে।
এসব বিধান সংযোজন করে প্রচলিত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। তারা এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে খড়সা চূড়ান্ত করে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠিয়েছে। এবার নিয়ে তৃতীয় দফায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধন হচ্ছে। ২০১২ সালে প্রণীত আইনটি ২০২৯ ও ২০২৩ সালে সংশোধন করা হয়েছে।
পাচার করা অর্থ ফেরানোর বিষয়ে আগে প্রধান কাজটি করত আহ্বায়ক কমিটি। এর আহ্বায়ক ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। ২৯ সেপ্টেম্বর আহ্বায়ক কমিটি পরিবর্তন করে ৯ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এই প্রথমবারের মতো টাস্কফোর্সের প্রধান করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে। পাশাপাশি টাস্কফোর্সের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এবার সদস্য সংখ্যা আরও ৭ জন বাড়িয়ে ১৬ জন করা হচ্ছে। প্রয়োজনে টাস্কফোর্স সদস্য সংখ্যা আরও বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে আইনের খসড়ায়।
খসড়ায় বলা হয়, টাস্কফোর্স দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ দ্রুত সময়ে শনাক্ত করতে তদন্তকারী সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে। অর্থ উদ্ধারে তদন্তকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করবে। পাচারকারীদের অর্থ সম্পদ চিহ্নিত ও শনাক্ত করতে টাস্কফোর্সের কাছে যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাচারকারীদের বিষয়ে তথ্য দিতে পারবে। নিরাপত্তার স্বার্থে তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে এবং জনস্বার্থ আইনে তথ্য প্রদানকারীকে সুরক্ষা দেওয়া হবে।
বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধারে সম্পদ ক্রোক, বাজেয়াপ্তকরণ, ফ্রিজ, প্রয়োজনে মামলা দায়েরে সহায়তা করবে টাস্কফোর্স। মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে বাধাগুলো চিহ্নিত করে তা দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেবে। অর্থ উদ্ধারে বিদেশে আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ ও ক্ষেত্রমতে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে অর্থ সম্পদ উদ্ধারে সহযোগিতা করবে। তদন্তকারী দলের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ অভ্যন্তরীণ সমন্বয় সাধন করবে।
টাস্কফোর্স উদ্ধার করা অর্থ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার জন্য সহায়তা করবে। টাস্কফোর্সের কাজের সুবিধার্থে কোনো প্রতিষ্ঠানকে সহায়তার জন্য অনুরোধ করতে পারবে। উক্ত কর্তৃপক্ষ সহায়তা প্রদান করবে। ট্রাস্কফোর্স বিদেশে আইনি প্রতিষ্ঠান, ল-ফার্ম আইনজীবী বা এজেন্ট বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করতে পারবে। এক্ষেত্রে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের মতামত নিতে হবে। নিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠান বিদেশে মামলা পরিচালনায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে। মামলা পরিচালনার জন্য এজেন্টকে সরকার থেকে কোনো নগদ অর্থ দেওয়া হবে না। উদ্ধার করা সম্পদ থেকে এজেন্টকে দেওয়া হবে নির্ধারিত হারে কমিশন।
