অর্থ পাচারের মামলা পরিচালনা
১০ কোটি ডলার ফান্ড সংগ্রহের লক্ষ্য
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পাচারের অর্থ উদ্ধারে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মামলা পরিচালনার খরচ বাবদ ১০ কোটি ডলারের লিটিগেশন ফান্ড (এলএফ) সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের মধ্যেই এ ফান্ড সংগ্রহ করতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই ফান্ড পাচারকারীদের অর্থ উদ্ধারে সরকারের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ৩০টি মামলায় ব্যয় হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মামলা পরিচালনায় অর্থায়নকারী বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠকে এ সংক্রান্ত রোডম্যাপ তুলে ধরেছেন।
এতে গভর্নর আশা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যের মতো আন্যান্য দেশও বাংলাদেশকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে উৎসাহিত হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া ২৬ কোটি পাউন্ডের সম্পদ জব্দ করেছে যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে টাকা পাচার হয়েছে সেইসব দেশও এ ধারা অনুসরণ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পাচার করা অর্থ উদ্ধারে যুক্তরাজ্যের মতো সিঙ্গাপুরকেও সহযোগিতার আহ্বান জানান গভর্নর। শনিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ১০ থেকে ১৩ জুন লন্ডন সফর করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসাবে এই সফর হলেও গভর্নর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলাদাভাবে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিকভাবে অর্থ উদ্ধারে মামলা পরিচালনার খরচ বহনের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা অর্থায়ন করে। তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে আলোচ্য বৈঠকে ওমনি ব্রিজওয়ে ও বেঞ্চওয়ার্ক ক্যাপিটালেরও মতো বৈশ্বিক সবচেয়ে বড় লিটিগেশন ফান্ড জোগানদাতা সংস্থা ছাড়াও আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা আলভারেজ অ্যান্ড মার্সাল ও ইউনিটস গ্লোবালের মতো খ্যাতিমান সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বিদেশে পাচার করা সম্পদ উদ্ধারে মামলা পরিচালনার জন্য আইনি ও তদন্ত সংস্থাগুলোর কাজে অর্থায়ন করতে যে খরচের প্রয়োজন হয় তা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে সংগ্রহ করা হয়। এসব অর্থ খরচ করার পর সংস্থাগুলো যে টাকা উদ্ধার করতে পারবে তা থেকে একটি অংশ (সাধারণত ১০ শতাংশ) সম্পদ উদ্ধারে কাজ করা সংস্থাগুলোকে দেওয়া হয়। সেটিই হচ্ছে লিটিগেশন ফান্ড। সংস্থাগুলোর সঙ্গে চুক্তির আলোকে এই ফান্ডের অর্থ হস্তান্তর করা হয়। বৈঠকে গভর্নর জানান, ২০২৫ সালের মধ্যে অন্তত ৩০টি মামলার জন্য ১০ কোটি ডলার লিটিগেশন ফান্ড সংগ্রহ করাই বৈঠকের মূল লক্ষ্য।
এছাড়া লন্ডনের ক্রাইম এজেন্সির সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে আরও কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য দেন। এসব সম্পদও জব্দ করার অনুরোধ জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গভর্নর ডিএলএ পাইপারনামে শীর্ষস্থানীয় বৈশ্বিক আইন সংস্থা আয়োজিত অ্যাসেট রিকভারি রাউন্ড টেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে দ্রুত এনডিএ (গোপনীয়তা চুক্তি) স্বাক্ষর করে তাদের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান এবং সম্পদ চিহ্নিত করণ ও পুনরুদ্ধারের জন্য আইনি পদক্ষেপ শুরুর প্রয়োজনীয়তায় জোর দেন। খেলাপি ঋণ আদায় সম্ভব হলে ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার সংকট অনেকটা কমে যাবে।
গোলটেবিল বৈঠকে গভর্নর বলেন, পাচার করা সম্পদ উদ্ধারে বিভিন্ন দেশের নানা ধরনের আইন অনুযায়ী তথ্য সরবরাহ করতে হয়। এ জন্য যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরে আলাদা সংস্থা রয়েছে। বাংলাদেশেও এ ধরনের একটি নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে বলে জানান। এর মাধ্যমে সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যাবে এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের বিরুদ্ধে তা আরও স্থিতিশীল করা সম্ভব হবে বলে মত দেন তিনি।
১১ জুন গভর্নর ও দুদক চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুল মোমেন যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) পরিদর্শন করেন। সেখানে তারা ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি করাপশন কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের (আইএসিসিসি) প্রধান ড্যানিয়েল মারফিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় গভর্নর বাংলাদেশের সম্পদ পুনরুদ্ধার টাস্কফোর্সের সঙ্গে আইএসিসিসির চলমান সহযোগিতা এবং ১১টি অগ্রাধিকার মামলায় গঠিত যৌথ তদন্ত দলের (জেইটি) জন্য তাদের কারিগরি সহায়তার প্রশংসা করেন।
গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে ১৭ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ এবং গত মাসে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমানের ছেলে শাফান এফ রহমানও তার ভাতিজা শাহরিয়ার রহমানের ৯ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দের জন্যও এনসিএকে ধন্যবাদ জানান। দুই দফায় যুক্তরাজ্যের ওই সংস্থাটি ২৬ কোটি পাউন্ডের সম্পদ জব্দ করেছে। গভর্নর আশা প্রকাশ করে বলেন, ভবিষ্যতে এনসিএ ও আইএসিসিসির সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে উঠবে বাংলাদেশের। যুক্তরাজ্যে ২৬ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দের পদক্ষেপ অর্থ পাচারের অন্যান্য গন্তব্য দেশগুলোকেও বাংলাদেশকে সহায়তায় উৎসাহী করবে। লন্ডন সফরকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বিশ্বের বৃহত্তম সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাক রকের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির উন্নতি সম্পর্কে তাদের অবহিত করেন এবং ব্যাংক ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান। এছাড়াও গভর্নর লন্ডনের লর্ড মেয়র এবং নেতৃস্থানীয় ফিনটেক কোম্পানিগুলোর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।
