জেলায় জেলায় গৌরীপুরের দুর্নীতিবিরোধী শপথ ও আনন্দ ভ্রমণ
মো. রইছ উদ্দিন, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:১৬ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এত লম্বা ভ্রমণের সব শঙ্কা উড়িয়ে সুস্থভাবে ঘরে ফিরল গৌরীপুরের স্বজনরা। দেশের শীর্ষ জাতীয় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার দেশসেরা পাঠক সংগঠনটি ২০তম জন্মোৎসব ও জাতীয় পর্যটন দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে এ ভ্রমণ কর্মসূচির আয়োজন করে।
এ উপলক্ষ্যে ২৭ সেপ্টেম্বর বিকালে গৌরীপুর ভ্রমণ কর্মসূচির উদ্বোধন ও পর্যটন দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
‘প্রত্ন রত্নে যত্নে গড়ে উঠুক গৌরীপুরে পর্যটন কেন্দ্র’ এ স্লোগানে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবুল (ভিপি বাবুল)।
এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা স্বজনের সভাপতি মো. এমদাদুল হক। সঞ্চালনা করেন সাহিত্য সম্পাদক আমিরুল মোমেনীন। বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মুন্নাফ, লামাপাড়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম শাহজাহান, ডক্টর রেজাউল করিম উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ছাইফুল ইসলাম, গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিজন চন্দ্র সরকার, যুগান্তরের গৌরীপুর প্রতিনিধি মো. রইছ উদ্দিন, উপজেলা স্বজনের সহসভাপতি শামীমা খানম মীনা, স্বজন তাসাদদুল করিম, শামীম আনোয়ার প্রমুখ।
গন্তব্যের উদ্দেশে ছুটে চলার জন্য রাত ৯টা ১৫ মিনিটের মধ্যে স্বজন সমাবেশের কার্যালয়ে উপস্থিত হন ঈশ্বরগঞ্জ সিভিল কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যঅডভোকেট মো. সাইফুল ইসলাম। এরপরই আসেন প্রতিষ্ঠাতা স্বজন শামীমা খানম মিনা আপা, তার সঙ্গে পরিবারের লোকজন সদলবলে হাজির হন। আস্তে আস্তে স্বজন সমাবেশের কার্যালয়টি আনন্দপূর্ণ এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
দীর্ঘদিন তালিকায় থাকারও পরও অনেকেই যেতে পারেননি। বিশেষ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা রতন সরকার, সুবীর কুমার হোম চৌধুরী কাঞ্চন ও পৌর স্বজনের সভাপতি শ্যামল ঘোষের শূন্যতা বারবার হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। তাদের শূন্যতা নিয়েই রাত ১০টায় আরএমজি বাস ছাড়ে।
যার ক্যামেরাবন্দি হতে উৎসুক স্বজনরা, সেই শ্যামশ্রী স্টুডিওর মালিক প্রান্ত সরকার রয়ে যায় গৌরীপুর। তাঁতকুড়া এসে শুরু হয় অপেক্ষা, প্রান্ত এলেও ততক্ষণে বাস বিগড়ে বসে। স্বজনরা নেমে ধাক্কার পর ধাক্কা দিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরু হয় রাত সোয়া ১১টায়।
ভ্রমণে সঙ্গে ছিলেন যুগান্তরের গৌরীপুর প্রতিনিধি মো. রইছ উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল মুন্নাফ, সাবেক পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক অজিত কুমার মোদক, ডৌহাখলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রমজান আলী মুক্তি, ঈশ্বরগঞ্জের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, তার সহযোগী মো. রবিউল ইসলাম, বগুড়া পল্লী একাডেমির অডিটর এসএম আরমান সোহেল ও তার সহধর্মিণী লেতু মন্ডল উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাবেয়া খাতুন, উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের আহ্বায়ক ও ডৌহাখলা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. বিল্লাল হোসেন ফকির মাস্টার, উপজেলা স্বজন সমাবেশের সহসভাপতি ডা. একেএম মাহফুজুল হক, শামীমা খানম মীনা, সাহিত্য সম্পাদক আমিরুল মোমেনীন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক গোপা দাস, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী চন্দন এস, প্রদীপ ঘোষ, অরুন সাহা, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক হারুন অর রশিদ, গৌরীপুর রক্তদান ফাউন্ডেশনের সভাপতি আশিকুর রহমান রাজিব, স্বজন মো. হাসমত আলী, মো. শফিকুল ইসলাম, মাজহারুল ইসলাম, মনোয়ারা বেগম, রিনা বেগম, সানজানা তাসনিম তারিন, ফয়জুন নাহার লিয়া, শাহীন মাহমুদ, মো. ফারুক হোসেন, আফজাল হোসেন আবির, রমজানুর রহমান নাজিম, লিখন আহমেদ প্রমুখ।
ভ্রমণের শুরুতেই সঙ্গে থাকা ডাক্তারবাড়ির সঙ্গে স্বজনদের পরিচয় করিয়ে দেন মেডিকেল টিম প্রধান ডা. একেএম মাহফুজুল হক। লালরঙের বালতিতে বড় হরফে লেখা ছিল ‘ডাক্তারবাড়ি’। সেখানে ছিল ৪৪ ধরনের ওষুধ, প্রেশার মাপার যন্ত্র, জ্বর মাপার যন্ত্র ও ডায়াবেটিকস মাপার যন্ত্র। এগুলোর ব্যবহার ও যে কোনো মুহূর্তে শরীর খারাপ করলে মেডিকেল টিমকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
এটিমে ছিলেন সিএইচসিপি মো. মাহফুজুল হক, গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মো. শফিকুল ইসলাম, মো. হাসমত আলী।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা, ইকবাল আহমেদ নাসের প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ দিয়ে সহযোগিতা করায় স্বজন সমাবেশের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়। সফলভাবে ভ্রমণ সম্পন্ন করার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনায় জন্য মুক্তাগাছায় যাত্রাবিরতী দেন। মোনাজাত পরিচালনা করেন উপজেলা স্বজন সমাবেশের সভাপতি মো. এমদাদুল হক।
পুরো আয়োজনে নেতৃত্বে ছিলেন গৌরীপুর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম। যিনি বাসের প্রথম আসনে বসে যেমনটা সামনের দিকটা সামলানোর চেষ্টা করেছেন, ঠিক তেমনি পেছনের সারথীদেরও নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন।
২৮ সেপ্টেম্বর ভোর ৬টায় স্বজনরা পৌঁছে যান কুষ্টিয়া নগরীতে। যুগান্তরের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি আবু মনি জুবায়েদ রিপনের ব্যবস্থাপনায় হোটেলে ওঠেন স্বজনরা। রিপন ভাইয়ের ব্যবস্থাপনায় হোটেলে সারা রাতের ক্লান্তিটাকে রেখে নাশতার টেবিলে যান স্বজনরা। এরপর ফুরফুরে ভাব আর নতুন সাজসজ্জায় সাড়ে ৯টা ভ্রমণের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন স্বজনরা।
২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় কুষ্টিয়ার পুণ্যভূমি লালন আখড়ায়। ‘যেদিন হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান/ জাতিগোত্র নাহি রবে/ এমন মানব সমাজ কবে গো সৃজন হবে’। ‘ ব্রাহ্মণ চন্ডাল চামার মুচি, এক জলে সব হয় গো শুচি/ দেখে শুনে হয় না রুচি/ যমে তো কাউকে ছাড়বে না।’ অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাণী ছড়িয়ে যে মরমি সাধক মানুষকে তন্ময় করে রেখেছেন যুগ যুগ ধরে, তার আখড়ায় ঘুরে ঘুরে স্বজনরা দেখেছেন, ছবি তুলেছেন। আখড়ায় থাকা বাউল-সন্ন্যাসীদের গাওয়া সাঁইজির গানে নিজেদের তৃপ্ত করেন স্বজনরা।
‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে/ তবে একলা চলরে’ এগিয়ে চলার সাহস-অনুপ্রেরণা যার লেখনি আমাদের নিরন্তর দিয়ে চলেছে, বাংলা সাহিত্যের সব শাখাকে যিনি স্বার্থকতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন, তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর কুষ্টিয়ায় গেলে এ মহামানবের বাড়ি যাবে না তা তো হতেই পারে না। পূর্ব নির্ধারিত সুচি অনুযায়ী দুপুরে স্বজনদের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি দর্শন।
কিন্তু বিধিবাম সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় কুঠিবাড়ির প্রবেশদ্বার বন্ধ। হতাশায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হলো। অবশেষে যুগান্তরের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ও যুগান্তরের কুমারখালী প্রতিনিধি লিপু খন্দকারের আন্তরিক সহায়তায় প্রশাসন সদয় হলে রিক্তহস্তে ফিরতে হয়নি। কবিগুরুর কুঠিবাড়ি দেখার সৌভাগ্য হলো স্বজনদের।
জানা হলো রামলোচন ঠাকুরের উইলসূত্রে রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে এ জমিদারির মালিক হন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি দেখাশোনার জন্য প্রথমে শিলাইদহে আসেন ১৮৮৯ সালের নভেম্বর মাসে। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কৈশোর এবং তার পরবর্তীকালেও মাঝে মাঝে আসতেন।
ফেরার পথে স্বজনদের কণ্ঠে উচ্চারিত হলো-‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে/ তবে একলা চলরে’ ‘প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোহারে/ বাঁধন খুলে দাও/ দাও, দাও, দাও-সহ কবিগুরুর বাণী।
লালন-রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত স্থান দেখার মাঝখানে স্বজনরা উপস্থিত হয়েছিল কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার চাঁপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়া গ্রামে। যে গ্রামকে ধন্য করেছেন বাংলাসাহিত্যের আর এক মহিরুহ মীর মশাররফ হোসেন। কারবালার যুদ্ধের কাহিনি অবলম্বনে রচিত ‘বিষাদ সিন্ধু’ তার সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যকর্ম। তার বাড়ির জায়গায় প্রতিষ্ঠিত স্কুলে কিছু সময় অতিবাহিত করে স্বজনরা। তবে কষ্ট লেগেছে ভগ্নদশা আর অরক্ষিত-অগোছাল কিংবদন্তি এ সাহিত্যিকের নিবাস দেখে। সীমনা প্রাচীর নেই, লাইব্রেরি বা সংগ্রহশালায় পর্যটকদের আকর্ষণে কোনো উদ্যোগ দেখা মেলেনি। কয়েকটি দেওয়াল লিখনের সঙ্গে কিছু ছবি তুলেই বিষণ্ন ভাঙা হৃদয় নিয়ে স্বজনরা বেরিয়ে আসে।
আবার ছুটে চলা। গন্তব্য মেহেরপুর জেলার ঐতিহাসিক মুজিবনগর। মাঝখানে গাংনিতে দুপুরের খাবার খেয়ে বিকালের দিকে আমারা পৌঁছালাম সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা মুজিবনগরের আম্রকাননে। ইতিহাসের সাক্ষী সেই প্রাচীন আমগাছ আর স্মৃতিস্তম্ভের সঙ্গে নিজের স্মৃতিকে অক্ষুণ রাখতে ছবি তুলে রাখে স্বজনরা।
ঐতিহাসিক মুজিবনগরে দাঁড়িয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাতে সবার কণ্ঠে উচ্চারিত হলো ‘আমরা দুর্নীতি করব না, দুর্নীতি সইব, মানব না’ দুর্নীতিমুক্ত সুখীসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’ শপথবাক্য পাঠ করান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম, সঙ্গে ছিলেন গৌরীপুরের কৃতী সন্তান যিনি মুজিবনগরে স্থায়ীনিবাস স্থাপন করেছেন সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা মাইন উদ্দিন। দেশের গান গেয়ে বিমুগ্ধ চিত্তে ফিরে আসে স্বজনরা।
সন্ধ্যায় আবারও স্বজনদের বাস ছাড়ল, গন্তব্য খুলনার দিকে। খুলনা শহরের একটি হোটেলে রাতের খাবার শেষে যুগান্তরের খুলনা প্রতিনিধি আহমদ মুসা রঞ্জুর মাধ্যমে পূর্ব থেকে বুকিং করা হোটেলে রাত্রী যাপন।
স্বজনরা ঘুমিয়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীরকে চাঙ্গা করে সকালের নাশতা সেরে আবারও রওনা হলো। এবার গন্তব্য বাগেরহাট। পুণ্যভূমি ঐতিহাসিক ষাট গম্ভুজ মসজিদ ও খান জাহান আলীর মাজার দর্শন।
প্রথমেই বাস থেকে নেমে খান জাহান আলীর মাজারে প্রবেশপথের মূল ফটকে ছবি তোলার জন্য প্রস্তুত প্রান্ত সরকার। ওর ক্লিক দেওয়ার পরে মাজারের দিকে হাঁটছেন স্বজনরা। মাজারের প্রবেশ গেটে আবারও প্রান্তর ক্লিকে ছবি তোলা হলো। এরপরে স্বজনরা নিজেদের মুঠোফোন নিয়ে ছড়িয়ে পড়লেন চারদিকে। এ মাজার ও মহাত্মা খান জাহান আলী সম্পর্কে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করলো স্বজনরা।
জানা গেলো খান জাহান আলী ১৩৬৯ থেকে ২৫ অক্টোবর ১৪৫৯ এ অঞ্চলে একজন মুসলিম ধর্ম প্রচারক এবং বাগেরহাটের স্থানীয় শাসক ছিলেন তিনি। তিনি উলুঘ খান ও খান-ই-আজম ইত্যাদি নামেও সুপরিচিত ছিলেন। যার পুরো নাম হযরত উলুঘ খানজাহান আলী।
তিনি ১৩৬৯ খ্রিষ্টাব্দে দিলিতে জন্মগ্রহণ করেন। এরপর হর্ন বাজিয়ে বাস ছুটল ষাটগম্ভুজ মসজিদের দিকে। পেছনের সিট থেকে চিৎকার ‘শফিক ভাই আসে নাই, শফিক ভাই আসে নাই।’ আবারও ছুটে যাওয়া হলো মাজারে, মাইকে ঘোষণা দিয়েও শফিক ভাইয়ের সন্ধান মিলল না। তিনি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও নিয়ে ব্যস্ত থাকায় মোবাইলও ছিল অফ। অবশেষে উনাকে খুঁজে পাওয়া গেল, প্রায় ঘণ্টাখানেক বিলম্বে আবারও যাত্রা শুরু।
হাজির হলাম বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী তিনটি স্থাপনার অন্যতম স্থাপনা ষাটগম্ভুজ মসজিদে। গেটে আসতেই টিকিট বিড়ম্বনার শিকার হলাম। স্কুল-কলেজের ছাত্রদের জন্য ১০ টাকা ও অন্যদের জন্য ৩০ টাকা হলেও শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড না থাকায় বাড়তি টাকা দিয়েই ভেতরে প্রবেশ করতে হলো আমাদের।
এ স্থাপনাটিকে ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এ সম্মানজনক স্বীকৃতি প্রদান করে।
ষাটগম্বুজ দেখে এবার যাত্রা শুরু হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থল টুঙ্গিপাড়ায়। এর মাঝেই ফলতিতা বটতলা জামে মসজিদে স্বজনরা জুমার নামাজ আদায় করেন। এর ফাঁকেই ঘুরে দেখা হলো চিংড়ির আড়ত।
ভ্রমণে লাঠিওয়ালাদের সঙ্গে তর্কে জড়াতে হয়েছে আমাদের। পথে পথে চাঁদাবাজির এ ধরন পালটানোর দায়িত্বে যারা, তারা সব সময় আছেন নিশ্চুপ। জেলায় জেলায়, স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ডে গাড়ি অতিক্রমের পরই তাদের দেখা মেলে। খুলনা নগরীতে প্রবেশের পর এ ঝুট-ঝামেলার আবারও সম্মুখীন হই আমরা। ময়মনসিংহ ব্রিজ থেকে পথে পথে এ ধরনের ব্রিজে টোল আদায় আর দীর্ঘ লাইনে আটকে থাকা ছিল স্বজনদের বিড়ম্বনাযুক্ত।
বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে স্বজন সমাবেশের শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ
২৯ সেপ্টেম্বর গৌরীপুরের স্বজনরা পৌঁছে যান জাতির তিা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ এলাকায়। স্বজনরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, কুরআনখানি ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে।
এ সময় স্বজনরা বঙ্গবন্ধুর বাড়ি, পর্যটনকেন্দ্র, গ্রন্থাগার ও বিভিন্ন নিদর্শন ঘুরে দেখেন। ‘বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’ ৭১-এর মূল আলোচনা তুলে ধরেন গৌরীপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম।
এরপর স্বজনরা ছোটেন পদ্মা সেতুর দিকে। ততক্ষণে সূর্যাস্তের লাল রঙের এক অপূর্ব আভা পদ্মার পানিতে মিশে খেলা শুরু করেছে। বাসটি সেতুটি ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সবার দৃষ্টি ছিল পদ্মা সেতুতে। চমৎকারভাবে সুসজ্জিত টোলবক্সের টোল দিয়ে স্বজনরা এগিয়ে গেল। প্রায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুঠোফোনে আমাদের সঙ্গে ছিলেন স্বজন সমাবেশের বিভাগীয় প্রধান ইমন চৌধুরী।
এ ভ্রমণের মৌখিক অনুমতি ও শুভকামনা জানানোর জন্য দৈনিক যুগান্তরের সুযোগ্য সম্পাদক সাইফুল আলমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
এরপর পদ্মারপাড়ে এক হোটেলে তাজা ইলিশ মাছ কেটে রান্না-বান্না শেষে রাতের ভ‚রিভোজ সম্পন্ন হয়। সবশেষে ঢাকার রঙিন বাতি আর এলিভেটেড এক্সপ্রেস হয়ে নীড়ের টানে ঘরে ফেরে স্বজনরা। লম্বা ভ্রমণের ক্লান্ত দেহ বাসের সিটে হেলিয়ে দিয়ে মধ্যরাতে সুস্থভাবে সবাই ফিরেন গৌরীপুরে। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া, সবাই সুস্থভাবে বাড়ি ফিরেছেন।
