Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

তুরস্কের ‘রেকর্ড’ যুদ্ধবিমান চুক্তি: ইন্দোনেশিয়ায় রপ্তানি হবে ৪৮টি ‘কান’ ফাইটার জেট

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৫, ০১:১৪ পিএম

তুরস্কের ‘রেকর্ড’ যুদ্ধবিমান চুক্তি: ইন্দোনেশিয়ায় রপ্তানি হবে ৪৮টি ‘কান’ ফাইটার জেট

তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ‘কান’ যুদ্ধ জাহাজ। ছবি: সংগৃহীত

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান জানিয়েছেন, তার দেশ নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ‘কান’ নামের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ইন্দোনেশিয়ায় রপ্তানি করবে।  এই চুক্তির মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া হবে ‘কান’ যুদ্ধবিমানের প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রেতা।

বুধবার (১১ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে ডেইলি সাবাহ।

এরদোগান বলেন, ভ্রাতৃপ্রতিম ও মিত্র দেশ ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ৪৮টি ‘কান’ যুদ্ধবিমান তুরস্কে তৈরি হয়ে ইন্দোনেশিয়ায় রপ্তানি করা হবে। 

তিনি আরও জানান, এই চুক্তিতে ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় সক্ষমতাও কাজে লাগানো হবে।

যদিও এরদোগান আর্থিক পরিমাণ জানাননি, তুরস্কের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এই চুক্তির মূল্য প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এই চুক্তির আওতায় আগামী দশ বছর ধরে ধাপে ধাপে বিমান সরবরাহ এবং প্রযুক্তি স্থানান্তর করা হবে। তুরস্কের সরকারি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি ও সম্প্রচারমাধ্যম টিআরটি হাবার জানিয়েছে, এই প্রকল্পে ইন্দোনেশিয়াকে প্রযুক্তি হস্তান্তরও করা হবে।

‘কান’ যুদ্ধবিমান সম্পর্কে

‘কান’ হচ্ছে তুরস্কের তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের একটি উন্নত যুদ্ধবিমান, যার উন্নয়ন শুরু হয়েছিল এক দশক আগে। এটি ২০২৩ সালে প্রথমবার জনসমক্ষে আসে এবং ২০২৪ সালের শুরুর দিকে প্রথম পরীক্ষামূলক উড়াল সম্পন্ন করে। ধারাবাহিক উৎপাদন শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে ২০২৮ সালে।

এই যুদ্ধবিমান শত্রুর লক্ষ্যবস্তুকে অতি নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। এটি ভেতরের অস্ত্র বহনকারী কক্ষ, নতুন প্রজন্মের অস্ত্র, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও নিউরাল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তিসহ সুপারসনিক গতিতে উড়তে পারবে।

তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পে অগ্রগতি

এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে জাকার্তায় অনুষ্ঠিত এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বৃহত্তম প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী ‘ইন্দো ডিফেন্স ২০২৫’-এর সময়।

এরদোগান বলেন, এই চুক্তি আমাদের জাতীয় ও স্থানীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের অগ্রগতির নিদর্শন।

তিনি ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোকেও এই চুক্তি সফল করার জন্য ধন্যবাদ জানান।

এরদোগান ফেব্রুয়ারি মাসে এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়া যান এবং এপ্রিল মাসে প্রাবোও তুরস্ক সফর করেন। ওই সফরে ইন্দোনেশিয়া ‘কান’ প্রকল্পে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করে।

যৌথ উৎপাদন ও প্রযুক্তি বিনিময়

তুর্কি বিমান মহাকাশ শিল্প সংস্থা (টিএআই), যারা এই যুদ্ধবিমান নির্মাণ করেছে, জানিয়েছে তারা ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে বিমান উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য চুক্তি করেছে।

তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প বিভাগের প্রধান হালুক গোরগুন বলেন, আমাদের শতবর্ষব্যাপী বিমানযাত্রায় এখন আমরা বন্ধুদেশগুলোর সঙ্গে আমাদের নিজস্ব পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ভাগ করে নেওয়ার গর্ব অনুভব করছি।

এই প্রকল্প যৌথ উৎপাদন, প্রযুক্তি বিনিময় এবং কৌশলগত সহযোগিতার এক বাস্তব উদাহরণ হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ক

তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারিত হচ্ছে। এর আগেও তারা যৌথভাবে ইন্দোনেশিয়ায় একটি ড্রোন কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পাকিস্তান ও আজারবাইজানও ‘কান’ যুদ্ধবিমান কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তুরস্ক এই প্রকল্পে মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ বহুবার প্রকাশ করেছে।

টিএআই-এর মহাব্যবস্থাপক মেহমেত দেমিরওলু বলেন, তুরস্ক এখন তার বন্ধু ও মিত্রদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে উঠছে।

ভবিষ্যতের লক্ষ্য

২০১৬ সালে তুরস্কের জাতীয় যুদ্ধবিমান প্রকল্প শুরু হয়। ‘কান’ যুদ্ধবিমান তৈরি করা হয়েছে এয়ার ফোর্সের পুরনো এফ-১৬ বিমানের বিকল্প হিসেবে, যেগুলো ২০৩০ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে।

‘কান’ যুদ্ধবিমানের প্রাথমিক সংস্করণে ব্যবহৃত হবে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানির এফ-১১০ ইঞ্জিন, যেটি এফ-১৬ বিমানে ব্যবহৃত হয়। তবে ধারাবাহিক উৎপাদনে তুরস্ক নিজের তৈরি ইঞ্জিন ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে।

রপ্তানিতে নতুন রেকর্ড

২০২৪ সালে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বেশি।

এরদোগান বলেন, আমরা আমাদের প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করতে সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও এই পথে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাব।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম