একীভূত ৫ ব্যাংকের টাকা ফেরত শুরু এ সপ্তাহে
জমা টাকা উত্তোলন করা যাবে নিজ নিজ শাখা থেকে
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ইসলামি ব্যাংকের আমানতকারীরা আংশিক টাকা ফেরত পাবেন। চলতি সপ্তাহ থেকে এই টাকা ফেরত দেওয়া শুরু হতে পারে। টাকা পাওয়া যাবে নিজ নিজ শাখায়। এর জন্য কোনো গ্রাহককে বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আসতে হবে না।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান যুগান্তরকে বলেন, চলতি সপ্তাহে কিছু টাকা ফেরত দেওয়া শুরু হতে পারে। সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ বলা যাবে না। কারণ তারিখ বললে অতিরিক্ত ভিড় করবেন গ্রাহকরা। তাই তারিখ ঘোষণা ছাড়াই টাকা দেওয়া শুরু করব। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, গত কয়েক দিন সেনাকল্যাণ ভবনের সামনে টাকার জন্য ভিড় করছেন গ্রাহকরা। তাদের বলব, টাকার জন্য কাউকে বাংলাদেশ ব্যাংক বা সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে আসতে হবে না। তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ রাখবেন এবং টাকাও শাখা থেকে তুলবেন।
জানা গেছে, একজন আমানতকারী এখন সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত তুলতে পারবেন। দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় আমানত বিমা তহবিল থেকে এই টাকা দেওয়া হবে।
সমস্যাগ্রস্ত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ‘সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংক পিএলসি’ নামে নতুন ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। ব্যাংকটি সমস্যাগ্রস্ত ওই পাঁচ ইসলামি ব্যাংককে অধিগ্রহণ করবে।
কী প্রক্রিয়ায় গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে ও কারা কারা এই টাকা ফেরত পাবেন, তা নিয়ে একটি স্কিম প্রণয়নের কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। টাকা ফেরতের আগে এই স্কিম প্রকাশ করা হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, যেসব গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আছে, তারা চাইলে পুরো টাকা উঠিয়ে নিতে পারবেন। যাদের হিসাবে দুই লাখ টাকার বেশি আছে, তারা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পাবেন। বাকি টাকার বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সব গ্রাহকের আমানতের বাকি টাকার ওপর মুনাফার হার নতুন করে নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এর মানে হলো, ৫ ব্যাংকে থাকা ৭৫ লাখ আমানতকারী সবাই সব টাকা ফেরত পাবেন না। আপাতত দুই লাখ টাকা পর্যন্ত পেলেও পরে চাইলে পুরো টাকা তুলতে পারবেন গ্রাহকরা। মূলত ছোট গ্রাহকদের আতঙ্ক ও অতীব জরুরি প্রয়োজন মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, একজন নাগরিকের এক ব্যাংকে একাধিক হিসাব থাকলেও শুধু একটি হিসাবের বিপরীতে টাকা পাবেন। এজন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে তার নামে হিসাব থাকতে হবে। যাদের হিসাব বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে খোলা হয়েছে, শুধু তারাই টাকা পাবেন। একজন নাগরিকের পাঁচ ব্যাংকের পাঁচটি হিসাব থাকলে প্রতিটির বিপরীতে টাকা পাবেন। সংশ্লিষ্ট আমানতের বিপরীতে ঋণ থাকলে টাকা পাবেন না। ঋণ সমন্বয় করার পর টাকা ফেরতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। বাকি টাকার ওপর সুদের হার নতুন করে নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাথমিক হিসাব করে দেখেছে, গ্রাহকদের এই টাকা দিতে সব মিলিয়ে ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ঠিক করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২০ হাজার কোটি এবং আমানত বিমা তহবিল থেকে দেওয়া হবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। অনুমোদিত মূলধন ঠিক করা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা।
ইতোমধ্যে সরকারের মূলধনের ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। বাকি টাকা মূলধন হিসাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেওয়া হবে। একীভূত ব্যাংকটির ভিত্তি শক্তিশালী করার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে থাকবে ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ শীর্ষ পর্যায়ে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও সৎ কর্মকর্তা নিয়োগ, ব্যাংকটির পরিচালনার নীতিমালা আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করে গ্রাহক আস্থা তৈরি করা হবে। রাজধানীর মতিঝিলের সেনাকল্যাণ ভবনে নতুন ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যাংকটিতে চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ দিয়েছে সরকার। পর্ষদের সবাই সরকারের সাবেক ও বর্তমান আমলা। সামনে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে পর্ষদকে আরও যোগ্য করে গড়ে তোলা হবে বলে জানা গেছে।

