জাতীয় সংসদ নির্বাচন
ঋণখেলাপিদের ঠেকাতে জোর প্রস্তুতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঋণখেলাপিদের প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম, ঠিকানাসহ পূর্ণাঙ্গ পরিচিতি সংগ্রহ করে তাদের নামে-বেনামে বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ধরনের খেলাপি ঋণ আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। খেলাপি ঋণ থাকলে তা আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ তথ্য ভান্ডার ক্রেডিট ইসফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) জানাতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ১২ অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত কোনো ঋণখেলাপি জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না। বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঋণ নিয়ে খেলাপি হলে তিনি ঋণখেলাপি মুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত আর নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে এই বিধান করা হয়। প্রথমে ছিল শুধু ব্যাংকগুলোর ঋণখেলাপিরা অংশ নিতে পারবেন না। ২০০৮ সালে ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণখেলাপি ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না।
বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বনিম্ন ১ টাকা পর্যন্ত ঋণের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবিতে রয়েছে। এগুলো খেলাপি হলে সে তথ্যও সিআইবিতে সংরক্ষণ করা হয়। বর্তমানে সিআইবি পুরোপুরি অনলাইন হয়ে গেছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন অনলাইনে সিআইবির সঙ্গে যুক্ত। ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো প্রার্থী ঋণ খেলাপি হলে তা বোতাম টিপেই বের করা সম্ভব।
ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের সিআইবিও ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তায় এ খাতের জন্য আলাদা একটি সিআইবি কাজ করছে। তবে এখনও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণখেলাপিদের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। আর ক্ষুদ্রঋণের গ্রাহকরা সাধারণ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন না। তারা সাধারণ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। পরে এ খাতের ঋণখেলাপিদেরকেও নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হবে।
আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ঋণখেলাপিদের প্রার্থী হওয়া ঠকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যেই জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবিতে একাধিক বৈঠক করে তারা সিআইবিকে হালনাগাদ করেছে। শুধু ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন এমন গ্রাহকদের নামই শুধু সিআইবিতে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ব্যাংকের কোনো ফি বা চার্জ পরিশোধ না করার কারণে কোনো গ্রাহককে খেলাপি করা হচ্ছে না। এ ধরনের গ্রাহকদের নির্বাচন করতে কোনো বাধা নেই।
আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী প্রার্থীদের আংশিক তালিকা প্রকাশ করেছে। এছাড়া আরও যারা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন তাদের বিভিন্নজনের নামও গণমাধ্যমে এসেছে। এসব নাম দেখে তাদের পূর্ণাঙ্গ পরিচিতি সংরক্ষণ করার জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই পরিচিতি অনুযায়ী প্রতিটি ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিকে তাদের প্রতিটি শাখায় ঋণের তথ্য অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ নামে, কোম্পানির নামে, স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বা বেনামে কোনো ঋণ রয়েছে কিনা। ওইসব ঋণের মধ্যে কোনো ঋণ বা ঋণের কিস্তি বা কিস্তির অংশবিশেষ খেলাপি কিনা তা শনাক্ত করতে বলা হয়েছে। খেলাপি হলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে বলা হয়েছে।
এদিকে সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায়ও গভর্নর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদেরকে (এমডি) সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা সংগ্রহ করে তাদের নামে কোনো খেলাপি ঋণ রয়েছে তা অনুসন্ধান করার নির্দেশনা দিয়েছেন। কোনো ঋণখেলাপি যাতে আইনের ফাঁক গলিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন। এ জন্য প্রতিটি শাখাকে সতর্ক করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় ঋণখেলাপি প্রার্থী থাকলে তার বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার সামনে আপত্তি তুলতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে প্রার্থিতা বাতিল না হলে ধাপে ধাপে নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত শুনানিতে লেগে থাকতে হবে। প্রয়োজনে ঋণখেলাপিদের প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে নিজেরাই আপিল করতে পারবেন।
আইন অনুযায়ী, সরাসরি ঋণখেলাপি ছাড়াও প্রার্থীর নামে অন্য কোনো কোম্পানির কমপক্ষে ২০ শতাংশ শেয়ার থাকলে এবং ওই কোম্পানি খেলাপি হলে প্রার্থীও ঋণ খেলাপি হিসাবে গণ্য হবেন। প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীল কোনো ব্যক্তি ঋণখেলাপি হলেও খেলাপি বলে গণ্য হবেন। নির্ভরশীল ব্যক্তি বলতে, নিজস্ব আয় নেই এমন পিতা, মাতা, স্ত্রী বা স্বামী, সন্তান, প্রার্থীর আয়ের ওপর নির্ভরশীল ভাই বা বোন বা অন্য কোনো ব্যক্তিকে বুঝাবে।
আদালতের নির্দেশনা নিয়ে যেসব ব্যক্তি ঋণখেলাপি থেকে এখনো মুক্ত রয়েছেন তাদের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনে দক্ষ আইনজীবী নিয়োগ করতে হবে।
