Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ইআরএফ সেমিনারে গভর্নর

২০ কোটি টাকার বেশি সব ঋণ যাচাই করা হবে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

২০ কোটি টাকার বেশি সব ঋণ যাচাই করা হবে

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ২০ কোটি টাকার বেশি সব ঋণ নতুন করে যাচাই করা হবে। এসব ঋণের জামানত ঠিক আছে কিনা, তা দেখা হবে। না থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যাংক পরিচালকদের জবাবদিহি করতে হবে।

বৃহস্পতিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ব্যাংকিং খাত সংস্কার : চ্যালেঞ্জ উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এসব কথা বলেন। ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালার সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা দরকার। ভালো নেতা দরকার। এজন্য সরকারের কাছে আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকার এই আইন পাস করে দিলে সব করা যাবে।

তিনি আরও বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে গভর্নর নিয়োগ দেওয়া হলে ‘ইয়েস ম্যান’ পাওয়া যাবে। তবে ব্যাংক খাতের সুশাসনের জন্য তা ইফেক্টিভ হবে না। বিশ্বের উন্নত দেশের মতো গভর্নরকে মন্ত্রী পদমর্যাদা দিলে তখন তিনি একটি অবস্থান নিতে পারেন। এজন্য প্রস্তাবিত বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডারের সংশোধনী কার্যকর করা খুব জরুরি।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে একটা ফোনেই গভর্নরকে বাদ দেওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রে এরকম ব্যবস্থা থাকলে এতদিনে ফেডের চেয়ারম্যান ৫০ বার বাদ পড়তেন। কেননা, ট্রাম্প ৫০ বার তাকে ফায়ার করার কথা বলেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চাইলেই যেন বাদ না দেওয়া যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে। এমনভাবে সিলেক্ট করতে হবে যেন তাকে চাইলেই যে কোনো কিছু করানো না যায়।

গভর্নর আরও বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক থেকে কোনো ধরনের ধার করা হবে না। নিজেদের সক্ষমতার আলোকে রিজার্ভ বাড়ানো হবে। আমরা চাপ সৃষ্টি করে ডলার কিনছি না। বাজারভিত্তিক নিলামের মাধ্যমেই ডলার কেনা হচ্ছে। অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ৩৪-৩৫ বিলিয়ন ডলারে নেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।

গভর্নর বলেন, আমরা একটি খারাপ অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে উন্নতির পথে যাচ্ছি। ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফেরানো এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব হয়েছে। ব্যালেন্স অব পেমেন্ট বা ডলার নিয়ে এখন কোনো উদ্বেগ নেই। তিনি স্বীকার করে বলেন, ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে। অনেক ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি আছে, খেলাপি ঋণের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। আমার ধারণা ছিল খেলাপি ঋণ ২৫-২৭ শতাংশ হবে, কিন্তু বাস্তবে তা প্রায় ৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আমরা কোনো তথ্য লুকাব না। যা সত্য, সেটাই প্রকাশ করব। আশা করি এখন এটি কমবে।

ব্যাংক সংস্কারের অংশ হিসাবে পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগের কথাও জানান তিনি। আমানতকারীদের আশ্বস্ত করে গভর্নর বলেন, একীভূত ব্যাংকগুলোর আমানত নিরাপদ থাকবে। আমানত বিমার আওতায় দুই লাখ টাকা পর্যন্ত সুরক্ষা দেওয়া হবে। নতুন ব্যাংক ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে সেখানে লোকসানের কোনো সম্ভাবনা নেই। এছাড়া এসব ব্যাংকের এখন নানা আইনি জটিলতা দূর করা হচ্ছে। নাম, সাইনবোর্ড দ্রুতই পরিবর্তন করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আরও বলেন, পাঁচ ব্যাংক একীভূত করার পাশাপাশি ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সব সাধারণ আমানতকারী পুরো টাকা ফেরত পাবেন। প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারী একটি অংশ ফেরত পাবে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, একসময় ব্যাংকিং খাত উদ্যোক্তা তৈরিতে বড় ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে নীতিগত দুর্বলতা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ দেওয়ার কারণে খাতটি ধ্বংসের মুখে পড়ে। বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় বাজেটের সমান বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, আগে প্রকৃত চিত্র আড়াল করা হতো বলে খেলাপি ঋণের হার কম দেখাত। এখন নিয়ম অনুযায়ী হিসাব করায় হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। সংকট উত্তরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া ব্যাংক রেজুলেশন অ্যাক্টসহ বিভিন্ন পদক্ষেপকে ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংকিং খাত ঘুরে দাঁড়াতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে। অতীতে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের কারণে খাতটি আজ এই অবস্থায় পৌঁছেছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে ব্যাংকিং খাত নিয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার থাকা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দখলের মাধ্যমে ব্যাংক খাত ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এজন্য এখন খেলাপি ঋণ ৩৬ শতাংশে পৌঁছে গেছে। এখন যে সংস্কার হচ্ছে, তা রাজনৈতিক সরকার কতটা এগিয়ে নেবে তা দেখার বিষয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম