Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বিদ্যমান পরিস্থিতি ও খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা কঠোরতার প্রভাব

চাপ বাড়বে ব্যাংক খাতে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চাপ বাড়বে ব্যাংক খাতে

খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আরও কঠোর করার ফলে আগামীতে ব্যাংক খাতে চাপ বা সংকট বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এমনিতেই খেলাপি ঋণ ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করে সংজ্ঞা আরও কঠোর করার ফলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে যাবে। এর বিপরীতে বাড়তি প্রভিশন রাখতে হবে। এছাড়া নতুন নীতিমালায় নিয়মিত ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখার হার আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। এমনিতেই ব্যাংকগুলোয় ৫৬ হাজার কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। এই বৃদ্ধির ফলে মূলধন ঘাটতিও বেড়ে যাবে। এতে বিনিয়োগযোগ্য তহবিল কমে যাবে। সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলো আরও দুর্বল হবে।

সূত্র জানায়, গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। লুটপাটের টাকা পাচার হয়েছে বিদেশে। এতে সার্বিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে ব্যাংক খাত। নয়টি ব্যাংক দখল করে লুটপাট করার ফলে ওইসব ব্যাংক এখন আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এর নেতিবাচক প্রভাব অন্য ব্যাংকগুলোর ওপরও পড়েছে। এতে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত জুন ও সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করেছে। দুই প্রান্তিক মিলে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা বেড়ে মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকায়। যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ১৭ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর সংবাদ সম্মেলনে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন খেলাপি ঋণের হার ২৫ শতাংশও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

আগামীতে তিনটি কারণে খেলাপি ঋণ বাড়বে। এক, আগে খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করা হতো, এখন সব তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। দুই, ব্যাংক খাতে গত ১৫ বছরে যে জাল-জালিয়াতি হয়েছে সেগুলোর সব তথ্য এখনও প্রকাশ হয়নি। এসব তথ্য প্রকাশিত হলে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাবে। তিন, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা কঠোর করার ফলে নিয়মিত ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এসব কারণে আগামীতে খেলাপি ঋণ বাড়বে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রভিশন ঘাটতি ছিল ২৫ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১৯ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা, খেলাপি ঋণ বাড়ায় মার্চে আবার প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, জুনে তা কমে দাঁড়ায় ২৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি ৪০ হাজার ২০৪ কোটি টাকা, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ১৫ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। প্রভিশনের এই ঘাটতি খেলাপি ঋণ ১৭ শতাংশ ধরে। খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে গেলে এ ঘাটতিও বাড়বে।

এদিকে বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিকমানের করেছে। এতে সব ধরনের ঋণ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করা না হলে তিন মাস পর থেকে খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হবে। আগে কৃষি, এসএমই, মেয়াদি ঋণ পরিশোধের শেষ দিন থেকে ছয় মাস পর খেলাপি হতো। খেলাপি করার সময় তিন মাস কমানোর ফলে গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধে সময় কম পাবেন। ফলে তারা খেলাপি হবেন। এতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাবে।

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত বাস্তবায়ন করতে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা কঠোর করা হয়েছে।

ওই নীতিমালায় ব্যাংকগুলোর নিয়মিত ঋণের বিপরীতে প্রভিশনের হার বাড়ানো হয়েছে। আগে এসএমই ও বিশেষ ঋণ কর্মসূচির আওতায় বিতরণ করা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ শতাংশ প্রভিশন রাখার বিধান ছিল। এখন তা বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। মোট ঋণের একটি বড় অংশই এ খাতে বিতরণ করা। ফলে এ খাতে প্রভিশন রাখার হার বাড়ানোর ফলে ব্যাংকগুলোর প্রভিশনের চাহিদা বেড়ে যাবে।

সূত্র জানায়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো ভালো ব্যবসা করতে পারছে না। ঋণ বিতরণও আশানুরূপভাবে বাড়ছে না। আমদানি বাণিজ্যেও চলছে মন্দা। সব মিলে ব্যাংকগুলোর আয় কমে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলোর নিট আয় কমেছে রেকর্ড পরিমাণে। আগামীতে আয় আরও কমে যেতে পারে। কারণ খেলাপি ঋণ বাড়বে। খেলাপি ঋণ বাড়লে আয় কমবে। ব্যাংকগুলে প্রভিশন রাখে আয়ের একটি অংশ থেকে। আয় কমার ফলে ব্যাংকগুলোতে বাড়তি প্রভিশন রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। এতে প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে যাবে। ঋণের বিপরীতে প্রভিশন না রাখতে পারলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। তখন বাধ্য হয়েই ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বাড়বে। আয় কমায় সৃষ্ট অর্থ সংকটের কারণে মূলধনও রাখতে পারবে না। ফলে মূলধন ঘাটতিও বাড়বে। এতে ব্যাংকগুলোর আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। এখনও ব্যাংকগুলোতে মূলধন ঘাটতি রয়েছে। আগামীতে এ ঘাটতি আরও বেড়ে যাবে।

দুর্বল ব্যাংকগুলোতে লুটপাটের কারণে বর্তমানে তারল্য সংকট প্রকট রূপ নিয়েছে। বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের সংকট রয়েছে। আগামীতে ওইসব কারণে বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের সংকট আরও বাড়বে।

খেলাপি ঋণ আওয়ামী লীগ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম