খালেদা-জোবাইদার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা ডিএমপির
সিরাজুল ইসলাম
প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমানের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। পাশাপাশি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং বিশেষ শাখার (এসবি) সদস্যদেরও মোতায়েন করা হবে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রোববার বিকালে ডিএমপি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বিশেষ সভায় র্যাব ও এসবি প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় বিষয়টি উঠে আসে। সভা থেকে খালেদা-জোবাইদার জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে যানজটের বিষয়টি মাথায় রেখে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল এবং সিএনজি অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার গুলশানের এবং জোবাইদা রহমানের ধানমন্ডির বাসায় গাড়িবহর যাওয়ার জন্য ক্যান্টনমেন্টের রাস্তা ব্যবহারের অনুমতি চাওয়া হতে পারে। এছাড়া বিমানবন্দর-এক্সপ্রেসওয়ে এবং এক্সপ্রেসওয়ে-বিমানবন্দর রাস্তায় যানবাহনের চাপ কমাতে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় হালকা যানবাহন প্রবেশের জন্য বিশেষ অনুমতি চাইবে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। বাসভবনের পাশাপাশি বাইরে চলাফেরার ক্ষেত্রেও পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী যুগান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়া এবং জোবাইদা রহমানের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া তো বহু বছর গুলশানেই ছিলেন। চিকিৎসার জন্য কয়েক মাসের জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। দেশে ফিরে তিনি গুলশানে থাকবেন। তাই তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই। এরপরও আগের চেয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হচ্ছে। তিনি যেদিন দেশের বাইরে যান, সেদিন রাস্তায় অনেক যানজট সৃষ্টি হয়েছিল। যেদিন (মঙ্গলবার) আসবেন সেদিন যেন সাধারণ মানুষের ভোগান্তি না হয়, সে বিষয়টি মাথায় রেখে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সাজানো হচ্ছে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, জোবাইদা রহমান অনেকদিন দেশের বাইরে (লন্ডন) আছেন। লন্ডনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিঃসন্দেহেই অনেক ভালো। তিনি দেশে ফেরার পর যেন ন্যূনতম নিরাপত্তাহীনতা বোধ না করেন সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ছক প্রণয়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সকালে (রোববার) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় খালেদা জিয়া এবং জোবাইদা রহমানের নিরাপত্তার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই দিকনির্দেশনার আলোকেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এসএন নজরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়া সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান প্রেক্ষাপটে জোবাইদা রহমান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাদের যে ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া প্রয়োজন সে ধরনের নিরাপত্তাই তারা পাবেন। তাদের জন্য যে নিরাপত্তা ছক তৈরি করা হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থেই আমরা সেটি প্রকাশ করব না। নিরাপত্তার বিষয়টি কনফিডেন্সিয়াল।
খালেদা জিয়া এবং জোবাইদা রহমানের পক্ষ থেকে যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা চাওয়া হয়েছে-সবই দেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, তাদের নিরাপত্তা ভাবনা এবং আমাদের নিরাপত্তা ভাবনার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চাওয়ার চেয়ে কম আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে চাওয়ার চেয়ে বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা আমাদের অ্যাসেসমেন্ট অনুযায়ী সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিচ্ছি।
জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সারওয়ার বলেন, বিমানবন্দরে নামার পর খালেদা জিয়া ও জোবাইদা রহমানের বাসায় পৌঁছা নির্বিঘ্ন করতে আমরা অনেকগুলো পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এসব পরিকল্পনার কথা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মিডিয়াকে জানানো হবে। তিনি বলেন, আমরা যেসব উদ্যোগ নিয়েছি সেগুলো সাধারণ মানুষ এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের মানতে হবে। না হলে সব উদ্যোগ ব্যর্থ হবে। নগরবাসীর যেন কোনো ধরনের দুর্ভোগ না হয় সে বিষয়টি মাথায় রেখে বিএনপির নেতাকর্মীদের রাস্তায় না নেমে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। রাস্তা যাতে বন্ধ না হয় সে ব্যাপারে বাড়তি কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মেট্রোরেল বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর যে এলাকা দিয়ে যাবে সেই রাস্তা যেন ফ্রি থাকে সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সবকিছুই নির্ভর করছে মানুষের চাপের ওপর। তবে আমাদের পক্ষ থেকে যত কৌশল অবলম্বন করা দরকার সবই করা হবে।
খালেদা-জোবাইদার নিরাপত্তার বিষয়ে ডিএমপির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার সফরসঙ্গী হিসাবে থাকছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান, প্রয়াত আরাফত রহমান কোকোর (খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে) স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি, চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেন, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ডা. আমিনুল হক, এপিএস মাসুদুর রহমান এবং দুই গৃহপরিচারিকা।
উল্লেখ্য, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালে কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া। পরে করোনাকালে তাকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়। গত বছর ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতির আদেশে তার মুক্তি নিশ্চিত হয়। বাতিল হয় মামলার রায়। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। তার শারীরিক অবস্থা এখনো পুরোপুরি সুস্থ নয়। লিভার সিরোসিস, কিডনি জটিলতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং আর্থ্রাইটিসসহ নানা অসুস্থতা তার শরীরে বিদ্যমান।
