Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

স্থায়ী কমিটির সংবাদ সম্মেলন

নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় হতাশ বিএনপি

উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতি অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর * কালবিলম্ব না করে ইশরাককে শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নিন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় হতাশ বিএনপি

ছবি: সংগৃহীত

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পরেও সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না আসায় হতাশ বিএনপি। অপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের আগে উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিকে অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর বলেছে দলটি। মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। 

লিখিত বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল কোনো সময়েই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি এবং এখনো চায় না। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে আসছে। যেহেতু, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই একই সঙ্গে চলতে পারে। পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির এবং ব্যক্তির অর্থাৎ দল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার আলোচনার প্রসঙ্গে তার প্রেস সচিবের মাধ্যমে সরকারের যে বক্তব্য পাওয়া গিয়েছে তাতে সুস্পষ্ট রোডম্যাপের ঘোষণা না থাকায় বিএনপি হতাশ হয়েছে। 

নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বরই উপযুক্ত সময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি শুধু কয়েকদিন নয়, আগের থেকেই বলছি। ডিসেম্বরকে মনে করছি নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময়। এখনো সেই কথার মধ্যেই আছি। ডিসেম্বরের পরে সবাই জানেন, রোজা চলে আসবে, তারপরে বর্ষা চলে আসবে। তারপরে এসএসসি-এইচএসসির মতো বড় বড় পাবলিক পরীক্ষা আছে। ওই মাসগুলো কিন্তু নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয়। অতীতে যত নির্বাচন হয়েছে শুধু একটি নির্বাচন বাধ্যবাধকতা থাকাতে জুনে হয়েছিল। এছাড়া সব নির্বাচনই ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি এ সময়টাতেই হয়েছে।

মোশাররফ হোসেন বলেন, জুলাই-ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাই আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বরের মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। এই সর্বোচ্চ জনআকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসাবে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

সোমবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। এরপর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে দলের প্রতিক্রিয়া জানাতে জাতীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতি অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর : মোশাররফ হোসেন বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্ব পালনে আমরা প্রথম থেকে এখনো সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করে আসছি। সরকার পরিচালনায় নিরপেক্ষতার ঘাটতি ও দুর্বলতার কারণে জনমনে সংশয় ও সন্দেহের উদয় হওয়া স্বাভাবিক। বিভিন্ন মহলের অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি-দাওয়া ও এখতিয়ারবহির্ভূত বক্তব্য সরকারের স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার যে অভিযোগ সরকারের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হয়েছে, সেটা মূলত সরকারের নিজস্ব অর্জন। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে সরকারের ওপর দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হচ্ছে।’ আমরা বলতে চাই, শিগগিরই একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমেই পরাজিত শক্তির ইন্ধন এবং বিদেশি ষড়যন্ত্র বন্ধ করা সম্ভব। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রদান করা জরুরি, এর কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এ দেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদবিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে অতি শিগগিরই রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা জরুরি। এই লক্ষ্যে আমরা সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছি। সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কোনো কর্মকাণ্ডকে আমরা সব সময়ে নিরুৎসাহিত করি এবং প্রতিরোধ করার অঙ্গীকারবদ্ধ। অথচ উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে কোনো কোনো মহল তাদের ওপরে অর্পিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তুলছে মর্মে একটি বিমূর্ত অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।

নির্বাচন বিলম্বে কিছু ওসিলা বের করা হচ্ছে : খন্দকার মোশাররফ বলেন, এই সরকার আসার আগেই আমরা ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জনগণের সামনে তুলে ধরেছি। ওয়াদা করেছি, জনগণ যদি আমাদের ক্ষমতায় বসায় তাহলে ৩১ দফার কর্মসূচির ভিত্তিতে সংস্কার করব। সংস্কার তো আমরাও চাচ্ছি। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। ইচ্ছা করলে ওমুক দিন, ওমুক সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষ করা যাবে এটা কেউ বলতে পারে না। ঠিক একইভাবে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য কিছু ওসিলা বের করা হচ্ছে। যেমন একটা ওসিলা হলো বিচার শেষ করতে হবে। আমরাও তো বিচার চাই। স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য কি করেনি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, কেউ বাকি নেই যারা আমরা মিথ্যা মামলার আসামি ছিলাম না, জেলে যায়নি। এরপরে কেন প্রশ্ন আসে যে, আমরা তাদের বিচার চাইব না?

প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, বিএনপি সবচাইতে বেশি তাদের বিচার চায়। তবে আমরা এটা বিশ্বাস করি, বিচার হতে হবে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার মধ্যে। স্বাধীন বিচারও চাইব, আবার ওমুক দিনের মধ্যে এই বিচার করতে হবে-এটা তো সাংঘর্ষিক।

বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ দাবি : খন্দকার মোশাররফ বলেন, জুলাই ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সব শ্রেণিপেশার শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না হয়, যাতে ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করা যায়, সেজন্য সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা এবং চরিত্র বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ চেয়েছি। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই এদেশের জনগণ রক্ত দিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে। অথচ সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে জনমনে এ বিষয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। 

কালবিলম্ব না করে ইশরাককে শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করুন : আদালতের রায় মেনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, ইশরাক হোসেনের পক্ষে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন হয়েছে। অথচ সরকার শপথ গ্রহণের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা আশা করি, কালবিলম্ব না করে সরকার তার শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেবে।

ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার দাবি করে তিনি বলেন, দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের মধ্যে রাখতে, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে সরকার ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, এই প্রত্যাশা সবার।

সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।



বিএনপি স্থায়ী কমিটি নির্বাচন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম