Logo
Logo
×

রাজনীতি

বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আলোকবর্তিকায় গণতন্ত্রের অভিযাত্রা: শহীদ জিয়া থেকে তারেক রহমান

Icon

মাহদী আমিন

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ০৩:২১ পিএম

বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আলোকবর্তিকায় গণতন্ত্রের অভিযাত্রা: শহীদ জিয়া থেকে তারেক রহমান

মাহদী আমিন। ছবি: যুগান্তর

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান — নিছক একটি নাম নয়, নিছক কোনো ব্যক্তি নন। তিনি একটি জাতির জাগরণের ধ্বনি, একটি আত্মপরিচয়ের প্রতীক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের প্রজ্জ্বলিত আলোকবর্তিকা — যার দীপ্ত আলো আজও জাতির পথ দেখায়।

২৬ মার্চ ১৯৭১ — বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্ম হয়। মেজর জিয়া যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, তখনই রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য নিঃসৃত হয় স্বাধীন বাংলাদেশির প্রথম গর্জন। তার সেই সাহসী ঘোষণাটি না এলে, হয়তো স্বাধীন বাংলাদেশ পেতে আমাদের আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হতো।

বাকশালের একদলীয় স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের দ্বার উন্মোচন করেন। গণতন্ত্রের সেই আকাঙ্ক্ষা আজও জাতির হৃদয়ে জাগ্রত— শহীদ জিয়ার হাতে প্রজ্জ্বলিত আলোকশিখায়।

বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ— শুধু একটি রাজনৈতিক মতবাদ নয়; এটি একটি অনুভব, একটি আত্মপরিচয়, একটি সংগ্রামের ভাষা। যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান; যেখানে রয়েছে মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং একটি সাম্যের রাষ্ট্র গঠনের সংকল্প। এই মহান আদর্শের পথিকৃৎ ছিলেন শহীদ জিয়া


বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ— শুধু একটি রাজনৈতিক মতবাদ নয়; এটি একটি অনুভব, একটি আত্মপরিচয়, একটি সংগ্রামের ভাষা। যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান; যেখানে রয়েছে মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং একটি সাম্যের রাষ্ট্র গঠনের সংকল্প। এই মহান আদর্শের পথিকৃৎ ছিলেন শহীদ জিয়া।

তাঁর হাত ধরেই গঠিত হয় দেশের সবচেয়ে বৃহৎ ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল — বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। এতকাল পেরিয়ে গেলেও, আজও তাঁর দল বিএনপি রাষ্ট্রপরিচালনায় যে নীতিমালা গ্রহণ করেছিল, তার ভিত্তিতেই বহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতির কাঙ্ক্ষিত সত্তা।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মুসলিম আত্মপরিচয় ও জাতীয় স্থিতিশীলতাকে একই সুতোয় গেঁথে একটি ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের ভিত্তি নির্মাণ করেন। ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে সংবিধান সংস্কার করে তিনি রাষ্ট্রকে দেন একটি নৈতিক পরিচয়, যা জাতির ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে গভীরভাবে সংগতিপূর্ণ। 

স্বাধীনতা-পরবর্তী সংকটকালে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব শুধু দেশকে স্থিতিশীলতা দেয়নি, বরং পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নেন। 

পররাষ্ট্র নীতিতে শহীদ জিয়া ছিলেন বাস্তববাদী, দূরদর্শী ও আত্মনির্ভরশীল। তাঁর কূটনৈতিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্ব, বিশেষ করে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা, জাতিসংঘ, পশ্চিমা বিশ্ব এবং সার্কভুক্ত অঞ্চলের সঙ্গে গড়ে তোলে শক্তিশালী ও সম্মানজনক সম্পর্ক।

নারীর ক্ষমতায়নে শহীদ জিয়ার অবদান চিরস্মরণীয়। গার্মেন্টস শিল্পের মাধ্যমে কর্মজীবী নারীদের জন্য তিনি খুলে দেন নতুন দিগন্ত। আর তরুণদের জন্য বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির যে দ্বার তিনি উন্মুক্ত করেন, তা আজও জাতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড হয়ে আছে।

কৃষি ও শিল্পে বিপ্লব, খাল খনন ও বৃক্ষরোপণ, শিক্ষা ও প্রশাসন সংস্কার, আইনের শাসন ও বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা, সরকারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ, এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংবিধানিক সংস্কারে গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন — প্রতিটি ক্ষেত্রে শহীদ জিয়া রেখে গেছেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত, এক অমোচনীয় চিহ্ন। মাত্র চার বছরে তিনি বাংলাদেশকে এগিয়ে দিয়েছিলেন চার দশকের চেয়েও বেশি — যা আজও ইতিহাসের উজ্জ্বলতম অধ্যায়।

শহীদ জিয়ার শাহাদাত ছিল না কোনো সাধারণ মৃত্যু। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র তাঁকে থামাতে চেয়েছিল — কারণ তাঁর হৃদয়ে ছিল অপরিসীম দেশপ্রেম, যা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় তিনি অকাতরে উৎসর্গ করেছিলেন।

তিনি নেই, কিন্তু তাঁর আদর্শ বেঁচে আছে — আমাদের চিন্তায়, আমাদের চেতনায়, আমাদের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষায়।

শহীদ জিয়ার সেই আদর্শ ধারণ করেই দেশনেত্রী খালেদা জিয়া বিএনপিকে পরিচালনা করেন। শহীদ জিয়া যেমন ছিলেন দেশের প্রথম সত্যিকারের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি, তেমনি দেশের প্রথম নির্বাচিত ও জনসম্পৃক্ত প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন আপোষহীন এই নেত্রী। আজও তিনি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক — মাদার অব ডেমোক্রেসি।

গণমানুষের নেতা তারেক রহমান, শহীদ জিয়ার সন্তান, সেই জাতীয়তাবাদের আলোকবর্তিকা আজও বহন করে চলেছেন। ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার, মামলা-গ্রেফতার, নিপীড়ন কিংবা আঘাত — কোনো কিছুই তাঁকে দমাতে পারেনি। বরং তিনি হয়ে উঠেছেন ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে জাতির আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। তার নেতৃত্ব আজ জাতিকে অনুপ্রাণিত করছে একটি মানবিক, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে।

গণমানুষের নেতা তারেক রহমান, শহীদ জিয়ার সন্তান, সেই জাতীয়তাবাদের আলোকবর্তিকা আজও বহন করে চলেছেন। ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার, মামলা-গ্রেফতার, নিপীড়ন কিংবা আঘাত — কোনো কিছুই তাঁকে দমাতে পারেনি। বরং তিনি হয়ে উঠেছেন ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে জাতির আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। তার নেতৃত্ব আজ জাতিকে অনুপ্রাণিত করছে একটি মানবিক, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে।

আজ, যুগের চেয়ে এগিয়ে থাকা তারেক রহমানের ৩১ দফা ও ক্ষেত্রভিত্তিক কর্মপরিকল্পনায় বাংলাদেশ অপেক্ষা করছে এক নতুন সূর্যের উদয়ের — যেখানে থাকবে না শোষণ, থাকবে না ভয়; থাকবে কেবল মানুষ, মর্যাদা ও মুক্তির রাজনীতি।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকীতে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি সেই অকুতোভয় রাষ্ট্রনায়ককে — যিনি আজও আমাদের আদর্শিক নেতা, জাতির পথপ্রদর্শক এবং উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতির পথিকৃৎ।

তাঁর রক্তে লেখা স্বপ্ন, অসমাপ্ত কর্ম আর অপূর্ণ ভিশন আজও প্রশমিত হয়নি — বরং তা তৃণমূলের স্পন্দন তারেক রহমানের চিন্তা, দায়বদ্ধতা ও নেতৃত্বে নতুন রূপে জেগে উঠেছে; গ্রথিত হয়েছে জনগণের আশা, আত্মপরিচয় আর প্রতিরোধের প্রতিটি স্তরে।

লেখক: মাহদী আমিন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম