Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন

পুনর্বিবেচনার আহ্বান মির্জা ফখরুলের

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পুনর্বিবেচনার আহ্বান মির্জা ফখরুলের

ছবি: সংগৃহীত

এপ্রিল মাসকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় মনে করেন না বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এ বিষয়ে বেশকিছু যুক্তি উপস্থাপন করে নির্বাচনের সময়সীমা পুনর্বিবেচনা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে বিএনপি চেয়ারপাসনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ আহ্বান জানান।

একই সঙ্গে তিনি যুক্তরাজ্য সফররত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠককে রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে উল্লেখ করেন। এমনকি তিনি এও বলেছেন, এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে নতুন একটা দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে। সমাধান হয়ে যেতে পারে অনেক সমস্যার। এছাড়া অনেক কিছু সহজ হয়ে যেতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন। সেক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান কি হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দল বলেছে যে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব এবং এটা খুবই সম্ভব। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন এই কথা। আমি বিশ্বাস করি, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া সম্ভব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পার্টিগতভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমরা আশা করছি যে, সরকার বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতেই নির্বাচনের সময়সূচি পুনর্বিবেচনা করবে। সময়টা (এপ্রিল) তো ঠিক না। আমি প্রথম দিন বলেছি, এপ্রিল মাস নির্বাচনের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। রোজার মাস, রোজা শেষ হবে, ঈদ শেষ হবে এর কয়েকদিন পরে নির্বাচন। রোজার মাসে প্রার্থীদের কী অবস্থা হবে? রাজনৈতিক কর্মীদের কী অবস্থা হবে? আমি নিজেই এখন চিন্তিত যে, প্রত্যেকদিন আমাকে ইফতার পার্টি করতে হবে। এটা কোনো মজার বিষয় নয়। প্রার্থীদের ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘শুধু তাই নয়, ওই সময়ে প্রচণ্ড গরম থাকবে। আবহাওয়া, ঝড়-বৃষ্টি আছে। দিনের বেলা আমাদের যে নির্বাচনি কালচার জনসভা করতে হয়, সেই জনসভায় লোকজন আনাটাই মুশকিল হবে। রৌদ্রের মধ্যে কে আসবে? রাত্রিবেলা মিটিং করতে হবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ সময়ে ডিসেম্বর-নভেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়েছে। দুবার বোধহয় হয়েছে ভিন্ন সময়ে, সেই দুই ইলেকশনেই ঝামেলা ছিল। তারপরেও আমি মনে করি, নির্বাচন বেশি প্রয়োজন। অনেকে আবার আমাকে ভুল বুঝবেন, সংস্কার চাই না, নির্বাচন চাই। আমাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা অপপ্রচারের কোনো যুক্তি নেই।

সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সোমবার রাতে আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং হয়। সেখানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেন। উনাকে (তারেক রহমান) ফরমালি দাওয়াত করা হয়েছে মিটিংয়ের জন্য। ১৩ তারিখে লন্ডন সময় ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সময়ে দেওয়া হয়েছে। লন্ডনে যে হোটেলটিতে (হোটেল ডোরচেস্টার) প্রধান উপদেষ্টা আছেন, সেটাই বৈঠকের ভেন্যু। ওখানেই তার সঙ্গে হাউজ অব কমন্সের ডেপুটি লিডার অব দ্য হাউজ দেখা করবেন তারেক রহমানের বৈঠকের পরে। এরপরে অন্য নেতা যারা আছেন, তারা ওখানেই দেখা করবেন।’

তিনি বলেন, ‘যখন থেকে প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে যাবেন সিদ্ধান্ত হয়েছে, তখন থেকেই বৈঠকের বিষয় নিয়ে মোটামুটি একটু আলোচনা হচ্ছিল। লন্ডনে যেহেতু আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তারেক রহমান) আছেন, সেখানে একটা সাক্ষাৎ হতে পারে। এটা একটা সম্ভাবনা। যা তখন থেকেই শুরু হয়েছিল। এখন এটা ম্যাচিওরড হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই মিটিংয়ের জন্য আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটির পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি যে, এটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট কাটাতে পজিটিভ ভূমিকা রাখতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে, সাম্প্রতিককালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, যে অবস্থান এটা (বৈঠকটি) একটা বড় ইভেন্ট। এটা একটা টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে, যদি সবগুলো সঠিকভাবে চলে। তাহলে নিঃসন্দেহে এটা একটা বড় টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, এই মিটিংটা হলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে এবং অনেক কিছু সহজ হয়ে যেতে পারে। নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে; ফলে সম্ভাবনা অনেক। এখন এটা নির্ভর করবে আমাদের নেতাদের (মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান) ওপরে। তারা কিভাবে সেই সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যাবেন। আমরা আমাদের দলের তরফ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সম্পূর্ণ অথরিটি দিয়েছি, তার সাফল্য প্রার্থনা করেছি।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের মধ্যে দিয়ে ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি খুবই ইতিবাচক মানুষ এবং আমি সব সময় পজিটিভ দিকটাই দেখতে চাই। ব্রাইট দিকটা দেখতে চাই। তাতে করে আমি মনে করি এই একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে অনেক সুযোগ তৈরি হতে পারে। সেই সুযোগগুলো তৈরি করার সুযোগ এসেছে আমাদের এই দুই নেতার। দিস ইজ এ প্রোপার টাইম, প্রোপার ভেন্যু, প্রোপার প্লেস। যেটাতে নতুন একটা দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘একটা বিশেষ মুহূর্তে এসে তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন, তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একথা বললে অস্বীকার করা হবে না যে, আমরাই দায়িত্ব দিয়েছি। কিন্তু রাজনৈতিক দিক থেকে তাদের অভিজ্ঞতা যথেষ্ট নয়। তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সবাই অত্যন্ত অভিজ্ঞ মানুষ, পণ্ডিত লোক, উইজডম সব আছে। কিন্তু পলিটিক্যাল উইজডম যে পুরোপুরি আছে সেটা বলা যাবে না। কিন্তু তাদের আন্তরিকতার অভাব আছে বলে আমার কাছে মনে হয়নি। তারা কাজ করতে চান, কাজ করছেন। দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হতে পারে। তবে এখানে একটা চাপ আছে। চাপটা হচ্ছে, নতুন নতুন রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার সৃষ্টি হচ্ছে, নতুন নতুন রাজনৈতিক চিন্তা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করে একটা জায়গায় নিয়ে আসা, এটাও বড় একটা চ্যালেঞ্জিং জব। সেই ক্ষেত্রে আমি মনে করি, একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে দুই নেতার মিটিংয়ের মধ্য দিয়ে একটা বড় সমাধান হয়ে যেতে পারে। তবে একেবারে মুহূর্তের মধ্যে বাংলাদেশের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে-এটা মনে করার কোনো কারণ নেই।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘১৫ বছরের একটা ফ্যাসিস্ট শাসক আওয়ামী লীগ সব প্রতিষ্ঠান ধবংস করে দিয়েছে। সেই ইনস্টিটিউশনগুলোকে নতুন করে বিল্ডআপ করা একটা ছেলেখেলা নয়। আমি এই কথাটা বারবার বলার চেষ্টা করি, এটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ জাতির জন্য।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা যে কোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আমরা বলেছি, আপনি যদি ইলেকশন কালকে করতে পারেন, আমরা কালকেই রেডি। বিএনপি নির্বাচনের দল অলওয়েজ রেডি ফর ইলেকশন। কারণ এটা (বিএনপি) নির্বাচনের দল, নির্বাচন করেই বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায়।

আমাদের পরিষ্কার কথা, আমরা কোনো বিপ্লবী দল নই, নির্বাচন করেই জনগণের ভোটের মাধ্যমে আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই।

সমমনাদের জন্য আসন ছাড়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা সংসদীয় রাজনীতিতে খুবই স্বাভাবিক, এটা ন্যাচারাল, এটা হওয়া উচিত। আমরা আগে থেকে কমিটেড যে, আমরা নির্বাচনের পর একটা জাতীয় সরকার করব।’ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টিকে সমঝোতায় আসন দেওয়া হবে এরকম আলোচনা আছে রাজনৈতিক অঙ্গনে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এগুলোর ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই।’

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ উনি আগের চেয়ে শারীরিক দিক থেকে বেশ ভালো বলে মনে হয়। ডাক্তাররা তাই বলেছেন। সি ইজ মাচ বেটার।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক : সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দলের যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার দেয় স্থায়ী কমিটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য যুগান্তরকে বলেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তারেক রহমান নেতাদের সঙ্গে আলাপ করেন। বৈঠকে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আলাদা করে সবার মত নেন। দীর্ঘ আলোচনায় নানা হিসাব-নিকাশ করে নেতারা সবাই এই বৈঠকের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আসেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম