Logo
Logo
×

বাংলার মুখ

গাজীপুর মহানগর বিএনপি

পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে কবে

সভাপতি-সম্পাদকেই দুই বছর পার * টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজিতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে কবে

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা দিয়ে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয় ২০২৩ সালের ১১ জুন। শওকত হোসেন সরকারকে সভাপতি এবং প্রয়াত ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ও সাবেক মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের ছেলে এম মঞ্জুরুল করিম রনিকে করা হয় সাধারণ সম্পাদক। এ সময় ওই কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়। দুই বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি।

শীর্ষ দুই নেতা রেষারেষিতে ব্যস্ত থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও নিজ নিজ পছন্দের নেতাদের আহ্বায়ক/সদস্য সচিব করে বিভিন্ন থানা কমিটি করা হয়েছে। এসব কমিটি নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই। তবে গত দুই বছরে মহানগরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে না পারলেও সুবিধাভোগীদের নিয়ে শক্তিশালী বলয় তৈরি করতে পেরেছেন মহানগরের সভাপতি ও সম্পাদক। শুরু থেকেই মহানগর বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকের দন্দ্বে পালটাপালটি কর্মসূচি পালন করে এলেও বিভিন্ন হাট-বাজার, ঠিকাদারি, জমি দখল ও জুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি। অপকর্মের বেলায় ওই দুই শীর্ষ নেতার অঘোষিত বন্ধন এলাকায় বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

দুই শীর্ষ নেতার নাম ভাঙিয়ে এলাকায় চলছে চাঁদাবাজি-দখলবাজি। জুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। মহানগরে ফাইভ স্টার, সেভেন স্টার খ্যাত দুটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে দখলবাজি- টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি। সুবিধাভোগী অল্পসংখ্যক নেতাকর্মী ছাড়া এসব কর্মকাণ্ডে সবাই হতাশ এবং ক্ষুব্ধ। নেতৃত্ব না থাকায় যে যার মতো করে অপকর্ম করে যাচ্ছে। এতে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

এদিকে মহানগর বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অবস্থাও একই ধরনের। সম্প্রতি মহানগর কৃষক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দল, ওলামা দল, জাসাস-কোনোটিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। এমতাবস্থায় মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল আলম বলেন, দুই বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না দিতে পারা খুবই দুঃখজনক। এতে নেতাকর্মীরাও হতাশ।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১১ জুন দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠিত হয়। এতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শওকত হোসেন সরকারকে সভাপতি এবং এম মঞ্জুরুল করিম রনি সাধারণ সম্পাদক হন।

এর আগে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর গাজীপুর মহানগর বিএনপির ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। ওই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তৎকালীন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ও যমুনা গ্রুপের স্বপ্নদ্রষ্টা নুরুল ইসলামের ছোট ভাই শিল্পপতি মো. সোহরাব উদ্দিন। ওই কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় এম মঞ্জুরুল করিম রনিকে ও সদস্য সচিব মো. শওকত হোসেন সরকারকে।

ওই কমিটির বিশেষ দ্রষ্টব্যে উল্লেখ করা হয় আহ্বায়ক, ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের যৌথ স্বাক্ষরে মহানগরের অধীনস্থ থানা কমিটি গঠিত হবে। মহানগর আহ্বায়ক মো. সোহরাব উদ্দিন পরবর্তী কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। এমন শর্ত প্রয়াত বিএনপি নেতা সোহরাব উদ্দিনকে না জানিয়ে গোপনে লেখা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। মহানগরের একাধিক নেতা বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মো. সোহরাব উদ্দিন পরবর্তী কাউন্সিলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বিষয়টি তাকে না জানিয়ে গোপনে লেখা হয়েছে। কমিটি অনুমোদনের পূর্বে নিচের অংশটুকু তাকে দেখানো হয়নি। মৃত্যুর আগে এ বিষয়ে তিনি নেতাদের সঙ্গে আক্ষেপও করেছেন।

এদিকে ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম মঞ্জুরুল করিম রনি ও সদস্য সচিব মো. শওকত হোসেন সরকারের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সোহরাব উদ্দিন। ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর সোহরাব উদ্দিন মারা যান। ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের পর ওই মৃত্যু নিয়েও রয়েছে রহস্য। পরে ২২ ডিসেম্বর এম মঞ্জুরুল করিম রনিকে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক (ভারপ্রাপ্ত) করা হয়। ৬ মাস পর ওই কমিটি ভেঙে দিয়ে ২০২৩ সালের ১১ জুন দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে শওকত হোসেন সরকারকে সভাপতি এবং মঞ্জুরুল করিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে দুই সদস্যের কমিটি করা হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের শর্ত ভেঙে ওই দুজনের কমিটি দিয়েই চলছে দলের কার্যক্রম। ওই কমিটি পূর্ণাঙ্গ কবে হবে এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারায় মহানগরের রাজনীতি স্থবির হয়ে আছে। বর্তমান কমিটির দুজন পুরোপুরি ব্যর্থ। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয় তারা করতে পারেনি।

মহানগর বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়ার পর তাদের নিজেদের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে বিরোধ হয়। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক কমিটি ঘোষণার পর দেশের বাইরে চলে যান। যার কারণে মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা হলেও দলীয় কর্মসূচিতে তিনি অনুপস্থিত থাকতেন। অপরদিকে তার অনুসারীরা দায়সারা ওইসব কর্মসূচিতে অংশ নিলেও দলে চাঙ্গাভাব আসেনি। পরবর্তীতে মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের চাপের মধ্যে থানা ও ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি আর করা হয়নি। দলের কেন্দ্রীয় কোনো কর্মসূচি থাকলে পৃথকভাবে পালিত হয়েছে। তবে, সম্প্রতি চিত্র কিছুটা পাল্টেছে। দলীয় কিংবা সামাজিক অনেক অনুষ্ঠানে এখন সভাপতি-সম্পাদককে একসঙ্গে দেখা যায়।

মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সালাম শামীম বলেন, দুই বছর আগে কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলে নিশ্চিত ত্যাগীরা পদ পেতেন। কিন্তু এখনতো সবাই বিএনপি। এখন কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হলে ত্যাগীরা বাদ পড়বে। তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের আগে যাদের হদিস ছিল না এখন তাদের নিয়েই সিন্ডিকেট করা হচ্ছে। তারা বিএনপির দুর্নাম করে অর্থ উপার্জনে প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত আছে।

মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিম রনি বলেন, আমরা অনেক আগেই কমিটি জমা দিয়েছিলাম কিন্তু অনুমোদন হয়নি। পরবর্তীতে ২৮ অক্টোবরের অন্দোলনের পর বলা হলো অন্দোলন সংগ্রামে যাদের ভূমিকা বেশি ছিল তাদের প্রাধান্য দিয়ে আরেকটি কমিটি গঠন করতে। সেটিও করা হয়েছে। পরবর্তীতে আবার আন্দোলন, ৫ আগস্ট, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সব কিছু মিলিয়ে কার্যক্রম একটু স্লো হয়ে গেছে। দখল, ব্যবসা বাণিজ্যের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ওই নেতা আরও বলেন, অন্দোলন সংগ্রামের যাদের ভূমিকা ছিল তাদের মধ্যে ক্ষোভ কিছুটা থাকবে এটা স্বাভাবিক। আমরাও চেষ্টা করছি দ্রুত কমিটি দিতে। মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই, আমরা একসঙ্গেই দলীয় কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছি। কিছু লোক অপপ্রচার চালিয়ে দলীয় ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই একত্রে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, মিছিলে অংশ নিচ্ছে। আমরা ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দিয়েছি, কিন্তু অনুমোদন হয়নি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম