উত্তরাধুনিকতার সমাধি ও নতুন মতবাদ
আরণ্যক শামছ
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিশ্বসাহিত্য বর্তমানে এমন এক তাৎপর্যপূর্ণ ও বিপর্যয়কর সময়ের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে, যেখানে সবার চোখের সম্মুখে উত্তরাধুনিকতাবাদের সমাধির পটভূমি তৈরি হচ্ছে, অথচ আমরা তা দেখতে পাচ্ছি না। তার সর্বনাশের পূর্বাভাস দেখেও আমরা অনুধাবন করতে পারছি না।
বিশ্বসাহিত্যের উত্তরাধুনিকতাবাদের ভবিষ্যৎ এক অনিশ্চিত যাত্রাপথ, যেখানে এ মতবাদের স্থায়িত্ব, তার সময়কাল এক অদূরবর্তী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমেই শেষ হয়ে যেতে পারে। সেই যুদ্ধ যদি পারমাণবিক যুদ্ধ হয়, তাহলে সেই যুদ্ধপরবর্তী যে নতুন আদিম সভ্যতার (Primitive Age) জন্ম হবে, সে সময়ের নামকরণ কী হবে, তা ভাবার সময় এসেছে। আর সেই যুদ্ধ যদি পারমাণবিক যুদ্ধ না হয়, যদি প্রচলিত যুদ্ধের ও প্রচলিত যুদ্ধ প্রযুক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তবুও সেই যুদ্ধপরবর্তী সভ্যতার মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে বিলুপ্ত হবে উত্তরাধুনিকতাবাদ। তাই একটি সাহিত্যিক মতবাদের সমাপ্তি ঘোষণা এক মানবসভ্যতার সংকট ও তার সম্ভাব্য ভবিষ্যতের পরিণতি ও ঝুঁকি মানবসভ্যতার অতি তাৎপর্যপূর্ণ একটি বিষয়। এটি একটি শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা, যা আমাদের বাধ্য করে উত্তরাধুনিকতাবাদের অর্জন, সীমাবদ্ধতা এবং এর পরবর্তী ধাপ নিয়ে ভাবতে। আমাদের আজকের আলোচনা হবে, পারমাণবিক অস্ত্রের প্রয়োগবিহীন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী পটভূমিতে প্রয়োজনীয় সাহিত্য মতবাদকে নিয়ে। পারমাণবিক যুদ্ধপরবর্তী পরিবেশ ও পরিস্থিতির আলোকে অন্য কোনো মতবাদ নিয়ে নতুন আলোচনা বাকি রইল।
উত্তরাধুনিকতাবাদ কি সত্যিই তার এ যৌবন শেষে বার্ধক্যে পৌঁছেছে? যদি তাই হয়, তবে তার ধ্বংসস্তূপের ওপর কোনো নতুন মতবাদের জন্ম হবে? এ প্রবন্ধে আমরা উপরোক্ত বক্তব্যটিকে বিশ্লেষণ করে উত্তরাধুনিকতাবাদের স্বরূপ উন্মোচন করব এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি টেকসই ও নতুন সাহিত্যিক প্রস্তাবনা পেশ করার চেষ্টা করব।
উত্তরাধুনিকতাবাদ হলো ভাঙনের শিল্প ও শূন্যতার উদযাপন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পাশ্চাত্যের শিল্প-সাহিত্য-দর্শনে যে প্রবল সংশয়, অনাস্থা ও ভাঙনের সুর ধ্বনিত হয়েছিল, তারই নাম উত্তরাধুনিকতাবাদ। ফরাসি দার্শনিক জাঁ-ফ্রাঁসোয়া লিয়োতার (Jean-François Lyotard) তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The Postmodern Condition: A Report on Knowledge’ (১৯৭৯)-এ উত্তরাধুনিকতাকে সজ্ঞায়িত করেছেন ‘বৃহত্তর আখ্যানের প্রতি সংশয়’ (incredulity toward metanarratives) হিসাবে। অর্থাৎ, সত্য, ঈশ্বর, ইতিহাস, প্রগতি ইত্যাদি বিষয়ে যে প্রধানতম ধারণা (overarching idea) বা মহাপরিকল্পনা বা মহাবাস্তবতায় ছিল, উত্তরাধুনিকতা সেগুলোকে অবিশ্বাস করে।
এর মূল ভিত্তিই হলো বিনির্মাণ (Deconstruction), যার প্রবক্তা জ্যাক এদরিদা (Jacques Derrida)। এদরিদার মতে, যে কোনো লেখার অর্থ নির্দিষ্ট বা স্থির নয়; এটি পাঠকভেদে পরিবর্তনশীল। ফলে লেখকের মৃত্যু ঘটে এবং অর্থের একন্দ্রচ্যুতি হয়। এ দর্শন থেকেই সাহিত্যে আসে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তার মধ্যে একটি হলো প্যাস্টিস (Pastiche)। প্যাস্টিস হলো বিভিন্ন লেখকের স্টাইল বা বিভিন্ন সময়ের শিল্পরীতি অনুকরণ করে তৈরি শিল্পকর্ম। আরেকটি ধারণার নাম হলো আন্তঃপাঠ্যতা (Intertextualit), যেখানে এক লেখার মধ্যে অন্য লেখার অনুষঙ্গ বা সরাসরি উল্লেখ থাকে।
আয়রনি ও ব্যাক হিউমার (Irony and Black Humor) হলো গভীর বেদনা বা সংকটকে হালকা চালে বা ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন করা। এমনই আরেকটি রীতি হলো ফ্র্যাগমেন্টেশন। তাত্ত্বিক পরিভাষা হিসাবে, ফ্র্যাগমেন্টেশন বলতে বোঝায় একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটের মধ্যে ইচ্ছাকৃত বা সহজাতভাবে একটি সম্পূর্ণ অংশকে বিচ্ছিন্ন এবং প্রায়শই বিচ্ছিন্ন অংশে বিভক্ত করা। কাহিনির ধারাবাহিকতাকে ভেঙে খণ্ড খণ্ড চিত্র অঙ্কন করা।
মিলান কুন্ডেরা তার ‘The Unbearable Lightness of Being’ উপন্যাসে চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক ভাঙনকে কাহিনির রৈখিকতা ভেঙে দেখিয়েছেন। সালমান রুশদির ‘Midnight's Children’ ইতিহাসকে ব্যক্তিগত স্মৃতি ও জাদুর সঙ্গে মিশিয়ে এক নতুন আখ্যান তৈরি করেছে, যা মহাবয়ানের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানায়। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের জাদুকরি বাস্তবতাও (Magical Realism) বাস্তব ও পরাবাস্তবের সীমানা মুছে দিয়ে উত্তরাধুনিক চেতনারই প্রতিফলন ঘটায়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এ ভাঙন, এ সংশয়, এ আয়রনি কি অনন্তকাল চলতে পারে?
কেন উত্তরাধুনিকতাবাদ প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে? কেন তার মৃত্যুঘণ্টা শোনা যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে, উত্তরাধুনিকতাবাদ তার নিজস্ব আয়রনির ফাঁদে পড়েছে। এর কিছু কারণ নিয়ে আলোচনা করা যাক।
উত্তরাধুনিকতাবাদের প্রধান লক্ষ্য হলো সৃষ্টির পরিবর্তে ধ্বংসের প্রতি মনোযোগ। এ মতবাদ মূলত ভাঙনের কথা বলে, বিনির্মাণের মাধ্যমে অর্থকে ভেঙে দেয়। কিন্তু নতুন করে কী গড়তে হবে, সে বিষয়ে এটি নীরব। মার্কিন লেখক ডেভিড ফস্টার ওয়ালেস (David Foster Wallace) তার ‘E Unibus Pluram’ প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, আয়রনি ও ব্যঙ্গ সিস্টেমের ত্রুটি ধরতে দারুণ কার্যকর, কিন্তু এটি কোনো বিকল্প বা সমাধান দিতে পারে না। তার ভাষায়, ‘Irony is the song of a bird who has come to love its cage’. অর্থাৎ, যে পাখি তার খাঁচাকেই ভালোবাসতে শিখেছে, আয়রনি হলো তার গান। ডিজিটাল যুগ ও হাইপাররিয়ালিটি (Hyperreality) প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে জ্যাঁ বদ্রিলার (Jean Baudrillard) সিমুলেশন ও সিমুলাক্রার ধারণার ওপর আলোকপাত করেছেন যেখানে আসল ও নকলের পার্থক্য নিমেষে মুছে যায়। আজকের ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া ও ভার্চুয়াল রিয়ালিটির যুগে এ ধারণা এক ভয়াবহ সত্য। আমরা এখন উত্তরাধুনিকতার তত্ত্বকে যাপন করছি। কিন্তু সাহিত্য যখন বাস্তবতার চেয়েও বেশি পরাবাস্তব হয়ে ওঠে, তখন শুধু ভাঙনের খেলা আর কতটা আবেদন রাখতে পারে?
বহুবিধ বৈশ্বিক সংকটে সম্মিলিত আখ্যানের প্রয়োজনীয়তা এখন সময়ের দাবি। জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারি, ও পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকির মতো সংকটগুলো কোনো একক দেশের বা ব্যক্তির নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির। এ সংকট মোকাবিলা করতে হলে আমাদের একটি সম্মিলিত বিশ্বাস বা নতুন মহাবয়ানের প্রয়োজন। কিন্তু উত্তরাধুনিকতার মূল ভিত্তিই হলো মহাবয়ানকে অবিশ্বাস করা। এ মতবাদ আমাদের শেখায় কীভাবে সবকিছুকে প্রশ্ন করতে হয়, কিন্তু কীভাবে একসঙ্গে কোনো কিছুতে বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়, তা শেখায় না।
সুতরাং, প্রদত্ত বক্তব্যটি যখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে এক আদিম সভ্যতার কথা বলে, তখন তা প্রতীকী অর্থে এটাই বোঝায় যে, চূড়ান্ত সংকটের মুহূর্তে উত্তরাধুনিকতার শূন্যবাদ ও সংশয় আমাদের রক্ষা করতে পারবে না। তখন প্রয়োজন হবে আস্থা, বিশ্বাস এবং সংযোগের। তাই আজকের প্রবন্ধে আমি এক নতুন প্রস্তাবনা উপস্থিত করতে যাচ্ছি, যার নাম হবে সংযোগবাদ (Synthesis-ism) যা হবে ভাঙনের পর গড়ার সাহিত্য। উত্তরাধুনিকতার ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন সাহিত্যধারার জন্ম হবে। এর মূল ভিত্তি হবে সংশয় ও আস্থাকে, ভাঙন ও গড়নকে, ব্যক্তি ও সমষ্টিকে এবং মানব ও প্রকৃতিকে একসঙ্গে সংযুক্ত করে দেখা। এটি হবে এক টেকসই (Sustainable) সাহিত্যিক আন্দোলন। এর মূল স্তম্ভগুলো হতে পারে নিম্নরূপ :
১. আন্তরিক আয়রনি (Sincere Irony)
সংযোগবাদ আয়রনিকে পুরোপুরি বর্জন করবে না, কারণ পৃথিবীর জটিলতা ও বিপর্যয়গুলোকে তুলে ধরতে এর প্রয়োজন আছে। কিন্তু এটি হবে আন্তরিক আয়রনি। অর্থাৎ, লেখক পৃথিবীর সমস্যাগুলোকে ব্যঙ্গ করবেন, কিন্তু তার পেছনে থাকবে গভীর সহানুভূতি ও সমাধানের আন্তরিক ইচ্ছা। এখানে ব্যঙ্গ শুধু ধ্বংসের জন্য নয়, বরং মনোযোগ আকর্ষণের একটি মাধ্যম। যেমন-সমসাময়িক অনেক স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান গুরুতর সামাজিক সমস্যা নিয়ে হাসির ছলে কথা বলেন, কিন্তু তার পেছনে একটি মানবিক আবেদন থাকে।
২. গঠনমূলক বিনির্মাণ (Constructive Deconstruction)
দেরিদার বিনির্মাণ ছিল মূলত বিভাজনমূলক। সংযোগবাদ গঠনমূলক বিনির্মাণের কথা বলবে। অর্থাৎ, পুরোনো মহাবয়ানগুলোকে ভাঙা হবে, কিন্তু তার উদ্দেশ্য হবে তার ভেতরের সীমাবদ্ধতা ও ক্ষতিকর উপাদানগুলোকে সরিয়ে ফেলে আরও মানবিক ও সার্বজনীন অংশগুলোকে নিয়ে নতুন করে গড়া। উদাহরণস্বরূপ, পৌরাণিক কাহিনিকে বিনির্মাণ করে তার পিতৃতান্ত্রিক বা বর্ণবাদী দিকগুলো দেখানো হবে, কিন্তু একইসঙ্গে তার সার্বজনীন মানবিক আবেদনকে নতুন রূপে উপস্থাপন করা হবে। অমিতাভ ঘোষের ‘The Great Derangement’ গ্রন্থে যেমন তিনি আধুনিক উপন্যাসের কাঠামোকে বিনির্মাণ করে দেখিয়েছেন যে, এটি কীভাবে জলবায়ু সংকটের মতো সামগ্রিক সংকটকে ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সংযোগবাদ সেই ব্যর্থতার পর নতুন কাঠামো তৈরির কথা বলবে।
৩. সহানুভূতিশীল আখ্যান (Empathic Narratives)
উত্তরাধুনিকতার বিচ্ছিন্ন, আত্মকেন্দ্রিক আমি থেকে বেরিয়ে এসে সংযোগবাদ আমরা-এর ওপর জোর দেবে। সাহিত্যের মূল লক্ষ্য হবে পাঠকের সঙ্গে চরিত্রের, এক সংস্কৃতির সঙ্গে অন্য সংস্কৃতির এবং মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির এক গভীর সহানুভূতিশীল সংযোগ স্থাপন করা। প্রযুক্তি যেখানে আমাদের বিচ্ছিন্ন করছে, সাহিত্য সেখানে হবে ঐক্যের মাধ্যম। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গল্প বলার বহু-দৃষ্টিভঙ্গির (multi-perspective narration) মাধ্যমে লেখক দেখাবেন যে, সত্য একক নয়, কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন সত্যের মধ্যে একটি সাধারণ মানবিক যোগসূত্র রয়েছে। ‘Multi-perspective narration’-এর বাংলা অর্থ হলো বহু-দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন আখ্যান বা একাধিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা গল্প। এ ধরনের বর্ণনায় একটি ঘটনা বা পরিস্থিতিকে একজন ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে না বলে, বরং একাধিক ব্যক্তি বা চরিত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করা হয় এবং একটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন চরিত্রের নিজস্ব ভাবনা, অনুভূতি এবং অনুভূতিকেও তুলে ধরা হয়। এ পদ্ধতি গল্পে এক ধরনের গভীরতা এবং জটিলতা যোগ করে, কারণ পাঠক বা দর্শক একই ঘটনাকে বিভিন্ন দিক থেকে দেখতে পারে।
৪. পরিবেশ-মানবতা (Eco-humanism)
সংযোগবাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও টেকসই স্তম্ভ হবে এটি। উত্তরাধুনিকতাবাদ ছিল মূলত মানবকেন্দ্রিক। কিন্তু আজকের সবচেয়ে বড় সংকট হলো পরিবেশ সংকট। সংযোগবাদী সাহিত্য মানবকে প্রকৃতির বিচ্ছিন্ন অধিপতি হিসাবে না দেখে, তাকে বাস্তুতন্ত্রের একটি অংশ হিসাবে দেখবে। প্রকৃতি এখানে শুধু পটভূমি নয়, বরং একটি সক্রিয় চরিত্র। সাহিত্যে ফুটে উঠবে মানুষের কর্মকাণ্ড কীভাবে প্রকৃতির ওপর প্রভাব ফেলছে এবং প্রকৃতিই বা কীভাবে মানুষের নিয়তিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। রিচার্ড পাওয়ারসের ‘The Overstory’ উপন্যাসটিকে এ ধারার একটি প্রাথমিক উদাহরণ বলা যেতে পারে।
৫. ডিজিটাল যুগে সততার সন্ধান (Search for Authenticity in the Digital Age)
সংযোগবাদী সাহিত্যিকরা ডিজিটাল জীবনের কৃত্রিমতার মুখোশ উন্মোচন করবেন এবং এর মাঝেও কীভাবে খাঁটি মানবিক সম্পর্ক ও সততা টিকিয়ে রাখা যায়, তার অন্বেষণ করবেন। অনলাইন পার্সোনা এবং বাস্তব জীবনের আমি-র মধ্যে যে দ্বন্দ্ব, তা হবে এ সাহিত্যের অন্যতম উপজীব্য।
উপসংহারে বলব, এখন সময় এসেছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে, ভবিষ্যতের সাহিত্য কোন পথে যাবে। উত্তরাধুনিকতাবাদের অন্তিম ঘোষণা হয়তো কিছুটা নাটকীয়, কিন্তু এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্যের দিকে ইঙ্গিত করে। কেবল ভাঙন, সংশয় আর অন্তহীন আয়রনির যুগ শেষ হতে চলেছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা কোনো ভয়াবহ বিপর্যয় আমাদের আদিম যুগে ফিরিয়ে দেবে কি না, তা সময়ই বলবে। কিন্তু মানবজাতি হিসাবে টিকে থাকতে হলে আমাদের নতুন করে সংযোগ স্থাপন করতে হবে; মানুষে মানুষে, প্রকৃতির সঙ্গে এবং অতীতের সঙ্গে ভবিষ্যতের।
সংযোগবাদ সেই নতুন পথের দিশা হতে পারে। এটি উত্তরাধুনিকতার অর্জনকে অস্বীকার করে না, বরং তার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে এক নতুন সৃষ্টির দিকে এগিয়ে যায়। এটি শূন্যতার দর্শন থেকে সরে এসে জীবনের অর্থ অনুসন্ধানের কথা বলে। এ সাহিত্য আন্দোলন যদি গড়ে ওঠে, তবে তা হবে শুধু শিল্পকলার নতুন মোড় নয়, বরং এক সংকটময় পৃথিবীতে মানুষের টিকে থাকার নতুন হাতিয়ার। সাহিত্য আবার হয়ে উঠবে শুধু বিনোদন বা মস্তিষ্কবিলাস নয়, বরং মানবাত্মার আশ্রয় ও দিশারী।
