বেরোবিতে শিক্ষকের বোন ২ ইউনিটে ফেল, আরেকটিতে প্রথম
jugantor
বেরোবিতে শিক্ষকের বোন ২ ইউনিটে ফেল, আরেকটিতে প্রথম

  বেরোবি প্রতিনিধি  

০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:৩৪:০৬  |  অনলাইন সংস্করণ

শিক্ষার্থী মিশকাতুল জান্নাত

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) তথ্য গোপন করে ভিসির ঘনিষ্ঠ এক শিক্ষকের আপন ছোটবোন ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের অনার্স প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় দুই ইউনিটে ফেল করেও অন্য একটি ইউনিটে রেকর্ড পরিমাণ নম্বর নিয়ে প্রথম হয়েছেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে তুমূল ঝড় উঠেছে।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মিশকাতুল জান্নাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক ইমরানা বারীর আপন ছোটবোন। বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে। বিষয়টি জানাজানির পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ জন শিক্ষক ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবি জানিয়ে লিখিতভাবে রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন করেছেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মিশকাতুল জান্নাত ভর্তি পরীক্ষায় মোট তিনটি ইউনিটে অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটের তৃতীয় শিফটের পরীক্ষায় ন্যূনতম মার্কস ‘এফ’ ইউনিটের চতুর্থ শিফটের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন।

অথচ ‘বি’ ইউনিটের চতুর্থ শিফটের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এমসিকিউয়ে ৮০ নম্বরের মধ্যে ৬৭.২৫০ এবং এসএসসি, এইচএসসির রেজাল্ট স্কোরে ১৮.২৩৫সহ মোট ৮৫.৪৮৫ পান যা অন্যান্য ইউনিটের ১৬ শিফটে কেউ সে পরিমাণ মার্কস তুলতে পারেননি।

সমালোচনার পরও এরই মধ্যে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। এত সন্দেহের পরও এই শিক্ষার্থী ভাইভা দিয়ে কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সবার মাঝে।

এ দিকে ভর্তি পরীক্ষায় কোনো শিক্ষকের নিকট কোনো আত্মীয় পরীক্ষার্থী থাকলে সেই শিক্ষকের পরীক্ষায় সংশ্লিষ্টতা থাকার নিয়ম নেই। কিন্তু ইমরানা বারীর নিজের ছোটবোনের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা অন্যদিকে এবং ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রমে সরাসরি ইমরানা বারীর জড়িত থাকাকে স্বজনপ্রীতি বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষকরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জ্যৈষ্ঠ শিক্ষকদের বাদ দিয়ে সদ্য যোগদান করা অনভিজ্ঞ জুনিয়র শিক্ষকদের ইউনিট সমন্বয়ক করার জন্যই এমন হয়েছে। প্রশ্নপত্র মডারেশন এমনকি ভর্তি পরীক্ষা কিভাবে নেয়া লাগে সে বিষয়ে জানেন না বলেও অভিযোগ করছেন সেই অনুষদের জ্যৈষ্ঠ শিক্ষকরা।

এ বিষয়ে শিক্ষার্থী মিশকাতুল জান্নাতের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। তার ফেসবুক আইডিতে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে আগে থেকেই পারস্পরিক বন্ধুত্ব (মিউচুয়্যাল ফ্রেন্ড) রয়েছে। এ দিকে এ সব বিষয় জানাজানির পরে শিক্ষক ইমরানা বারীর ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাক্টিভেট হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আরও তীব্র সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।

এ দিকে ইমরানা বারীর বক্তব্যের জন্য একাধিকবার তার অফিস কক্ষে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে তিনি বলেন, আমার বোনের পরীক্ষার বিষয়টি আমি কলা অনুষদের ডিনকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি।

অন্য ইউনিটের সমন্বয়কদের কেন জানাননি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি যেহেতু কলা অনুষদের শিক্ষক তাই আমার অনুষদে বোনের বিষয়টি অবগত করেছি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. গাজী মাজহারুল আনোয়ার যুগান্তরকে বলেন, দুটি ইউনিটে ফেল এবং একটি ইউনিটে অস্বাভাবিক পরিমাণ নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়ে আমরা গণমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা আসলে বিব্রতবোধ করছি। বিষয়টা যেহেতু ইউনিটের সেহেতু বিষয়টা ইউনিট সমন্বয়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খতিয়ে দেখবেন বলে আশা করি।

এ বিষয়ে ‘বি’ ইউনিটের সমন্বয়ক ড. সোহেলা মুসতারীর কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে গেলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘বি’ ইউনিটের ঘটনায় কে কি করেছেন তা আমি জানি না। সমন্বয়ক হয়েও কেন জানেন না এমন প্রশ্ন করলে তিনি স্থান ত্যাগ করেন।

কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার সদস্য সচিব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তাফা কামাল বলেন, শিক্ষকদের অভিযোগপত্র পেয়েছি। ভিসি দেশের বাইরে আছেন। তাকে বিষয়টি জানানো হবে। তিনি কি সিদ্ধান্ত নিবেন সে ব্যাপারে তিনি ভালো জানেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বেরোবিতে শিক্ষকের বোন ২ ইউনিটে ফেল, আরেকটিতে প্রথম

 বেরোবি প্রতিনিধি 
০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৩৪ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ
শিক্ষার্থী মিশকাতুল জান্নাত
শিক্ষার্থী মিশকাতুল জান্নাত। ছবি: সংগৃহীত

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) তথ্য গোপন করে ভিসির ঘনিষ্ঠ এক শিক্ষকের আপন ছোটবোন ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের অনার্স প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় দুই ইউনিটে ফেল করেও অন্য একটি ইউনিটে রেকর্ড পরিমাণ নম্বর নিয়ে প্রথম হয়েছেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে তুমূল ঝড় উঠেছে। 

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মিশকাতুল জান্নাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক ইমরানা বারীর আপন ছোটবোন। বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে। বিষয়টি জানাজানির পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ জন শিক্ষক ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবি জানিয়ে লিখিতভাবে রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন করেছেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মিশকাতুল জান্নাত ভর্তি পরীক্ষায় মোট তিনটি ইউনিটে অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটের তৃতীয় শিফটের পরীক্ষায় ন্যূনতম মার্কস ‘এফ’ ইউনিটের চতুর্থ শিফটের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন। 

অথচ ‘বি’ ইউনিটের চতুর্থ শিফটের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এমসিকিউয়ে ৮০ নম্বরের মধ্যে ৬৭.২৫০ এবং এসএসসি, এইচএসসির রেজাল্ট স্কোরে ১৮.২৩৫সহ মোট ৮৫.৪৮৫ পান যা অন্যান্য ইউনিটের ১৬ শিফটে কেউ সে পরিমাণ মার্কস তুলতে পারেননি। 

সমালোচনার পরও এরই মধ্যে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। এত সন্দেহের পরও এই শিক্ষার্থী ভাইভা দিয়ে কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সবার মাঝে। 

এ দিকে ভর্তি পরীক্ষায় কোনো শিক্ষকের নিকট কোনো আত্মীয় পরীক্ষার্থী থাকলে সেই শিক্ষকের পরীক্ষায় সংশ্লিষ্টতা থাকার নিয়ম নেই। কিন্তু ইমরানা বারীর নিজের ছোটবোনের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা অন্যদিকে এবং ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রমে সরাসরি ইমরানা বারীর জড়িত থাকাকে স্বজনপ্রীতি বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষকরা। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জ্যৈষ্ঠ শিক্ষকদের বাদ দিয়ে সদ্য যোগদান করা অনভিজ্ঞ জুনিয়র শিক্ষকদের ইউনিট সমন্বয়ক করার জন্যই এমন হয়েছে। প্রশ্নপত্র মডারেশন এমনকি ভর্তি পরীক্ষা কিভাবে নেয়া লাগে সে বিষয়ে জানেন না বলেও অভিযোগ করছেন সেই অনুষদের জ্যৈষ্ঠ শিক্ষকরা। 

এ বিষয়ে শিক্ষার্থী মিশকাতুল জান্নাতের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। তার ফেসবুক আইডিতে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে আগে থেকেই পারস্পরিক বন্ধুত্ব (মিউচুয়্যাল ফ্রেন্ড) রয়েছে। এ দিকে এ সব বিষয় জানাজানির পরে শিক্ষক ইমরানা বারীর ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাক্টিভেট হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আরও তীব্র সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। 

এ দিকে ইমরানা বারীর বক্তব্যের জন্য একাধিকবার তার অফিস কক্ষে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে তিনি বলেন, আমার বোনের পরীক্ষার বিষয়টি আমি কলা অনুষদের ডিনকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। 

অন্য ইউনিটের সমন্বয়কদের কেন জানাননি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি যেহেতু কলা অনুষদের শিক্ষক তাই আমার অনুষদে বোনের বিষয়টি অবগত করেছি।  

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. গাজী মাজহারুল আনোয়ার যুগান্তরকে বলেন, দুটি ইউনিটে ফেল এবং একটি ইউনিটে অস্বাভাবিক পরিমাণ নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়ে আমরা গণমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা আসলে বিব্রতবোধ করছি। বিষয়টা যেহেতু ইউনিটের সেহেতু বিষয়টা ইউনিট সমন্বয়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খতিয়ে দেখবেন বলে আশা করি। 

এ বিষয়ে ‘বি’ ইউনিটের সমন্বয়ক ড. সোহেলা মুসতারীর কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে গেলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘বি’ ইউনিটের ঘটনায় কে কি করেছেন তা আমি জানি না। সমন্বয়ক হয়েও কেন জানেন না এমন প্রশ্ন করলে তিনি স্থান ত্যাগ করেন। 

কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার সদস্য সচিব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তাফা কামাল বলেন, শিক্ষকদের অভিযোগপত্র পেয়েছি। ভিসি দেশের বাইরে আছেন। তাকে বিষয়টি জানানো হবে। তিনি কি সিদ্ধান্ত নিবেন সে ব্যাপারে তিনি ভালো জানেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন