Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

রাকসু নিয়ে উপাচার্য ও ছাত্র সংগঠনের বিপরীতমুখী বক্তব্য

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২০, ০৪:২৩ পিএম

রাকসু নিয়ে উপাচার্য ও ছাত্র সংগঠনের বিপরীতমুখী বক্তব্য

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)। ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন নিয়ে বিপরীতমুখী বক্তব্য দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।

সংগঠনগুলো বার বার দাবি করে আসলেও উপাচার্য বলছেন, রাকসু নির্বাচন হোক সেটা কেউ চায় না।

শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন রাবি ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশনের (রাফা) পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ দাবি করেন উপাচার্য এম আবদুস সোবহান।

তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে নানা মতাদর্শের ১৫-২০টি সংগঠন রয়েছে। রাকসু নির্বাচন নিয়ে কত লোকের বিবৃতি- তারা রাকসু নির্বাচন চায়। কিন্তু নির্বাচন হয়ে গেলে তাদের মধ্যে একজন রাকসু ভিপি হবে। এখন ইনডিভিজ্যুয়াল সংগঠনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা বাহাদুরি দেখায়। ফলে তারা রাকসু নির্বাচন চায় না। আমি বহুবার বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাকসু নির্বাচন দিতে চাই। কিন্তু একটি ছাত্র সংগঠনও রাজি হয়নি।

উপাচার্য আরও বলেন, রাকসু নির্বাচনে কারা নেতৃত্ব দেবে? সে রকম নেতৃত্ব আদৌ রয়েছে কি? আগের নেতৃত্ব আর এখনকার নেতৃত্বের মধ্যে গুণগত মানের অনেক পার্থক্য আছে। নেতা হওয়া সহজ কাজ নয়।

তবে উপাচার্যের বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ছাত্রলীগ সব সময়ই রাকসু নির্বাচন চায়। আমাদের বর্তমান কমিটির দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম যে স্মারকলিপি দেই, তার প্রথম দাবিই ছিল রাকসু। আমরা অনেকবার রাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি। তারপরও ঠিক কি কারণে প্রশাসন নির্বাচন দিচ্ছে না তা বুঝতে পারছি না।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল নেতা এসএম মাহমুদুল হাসান মিঠুও উপাচার্যের বক্তব্যকে অযৌক্তিক বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, উনার মতো দায়িত্বশীল পদে থেকে এ ধরনের বক্তব্য দেয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণভোমরা হল ছাত্ররা। সেখানে ছাত্রদের প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রক্রিয়া হল রাকসু। তাই শুধু ছাত্রদল না প্রতিটা ছাত্র সংগঠনের প্রাণের দাবি রাকসু নির্বাচন।

এদিকে দীর্ঘ ২৭ বছর পর রাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে রাকসু আন্দোলন মঞ্চ। নির্বাচনের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করে আসছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আবদুল মজিদ অন্তর মনে করেন রাকসু নির্বাচন দিতে প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা যদি রাকসু নির্বাচন না চাই তাহলে ২০১৭ সাল থেকে কেন এ বিষয়ে আন্দোলন করে আসছি? নির্বাচন দিতে প্রশাসনের যে সদিচ্ছা থাকা দরকার সেটি প্রশাসনের নেই। তারা হয়তো মনে করছে রাকসু নির্বাচন দিলে সবকিছু জবাবদিহিতার আওতায় চলে আসবে। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী চালাতে থাকবে। একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে। যে সকল অনিয়ম চলছে তা চালাতে পারবে না। এসব কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। এই আশঙ্কায় প্রশাসন নির্বাচন দিচ্ছে না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শাকিলা খাতুন বলেন, নির্বাচন দিতে না পারার ব্যর্থতা মুছতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র সংগঠনগুলোর ওপর দায় চাপাচ্ছে।  প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো তো অবশ্যই, এমনকি আমি যতদূর জানি ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ সব সংগঠনই রাকসু নির্বাচন চায়।

রাকসু সংলাপ কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, উপাচার্য মহোদয় কোন প্রেক্ষাপটে এ কথা বলেছেন তা আমি জানি না। তবে তিনি সব সময় চান রাকসু পুনরায় চালু হোক। সব ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণের দাবি রাকসু নির্বাচন সফলভাবে আয়োজন করতে পারলে তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য বড় একটি প্রাপ্তি হবে।

তিনি বলেন, আমরা হল প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গেও কথা বলেছি। অধিকাংশ প্রাধ্যক্ষই আবাসিক হলে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই বলে মত দিয়েছেন। তাছাড়া ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সহাবস্থান নেই। আশা করি অতি শীঘ্রই এ বিষয়ে আবার আলোচনা শুরু হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২০ জানুয়ারি রাকসু নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে আহ্বায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট সংলাপ কমিটি গঠন করেন উপাচার্য। ওই বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মতামত গ্রহণে সংগঠনগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসলেও এখনও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম