বেরোবিতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানহানিকর মন্তব্য, বিচার দাবিতে ভিসিকে স্মারকলিপি

 বেরোবি প্রতিনিধি 
২৭ জুলাই ২০২০, ১১:০০ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে ‘নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদের অসাংবিধানিক ও অনৈতিক বিবৃতি এবং শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের নিয়ে একজন কর্মচারীর মানহানিকর মন্তব্য করেছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ভিসিকে স্মারকলিপি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি।

রোববার বিকালে সমিতির সভাপতি মোবাশ্বের আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আল আমিন হোসাইন স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অফিসিয়াল ই-মেইলে পাঠানো হয়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন ‘নব প্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ’ গত ২৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত চারজন সাংবাদিকের ভূমিকা নিয়ে কল্পনাপ্রসূত, ভিত্তিহীন, আপত্তিজনক, মানহানিকর ও সংবিধান পরিপন্থী বিবৃতি দিয়েছে।

নব প্রজন্ম শিক্ষক পরিষদের আহবায়ক সুমাইয়া তাহসিন হামিদা এবং সদস্য সচিব খালিদ হাসান রিয়েল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে যে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন কর্মকর্তাকে বহিষ্কার সংক্রান্ত একটি সংবাদ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত চারজন সাংবাদিক বাংলানিউজ ২৪.কমের মাহফুজুল ইসলাম বকুল, যুগান্তরের রাব্বী হাসান সবুজ, মানবজমিন ও ঢাকা টাইমসের ইভান চৌধুরী ও ইত্তেফাকের মোবাশ্বের আহমেদের পেশাগত প্রধান কার্যালয়ের (কেন্দ্রীয় অফিসের) দৃষ্টি গোচরে আনেননি এবং এ ব্যাপারে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপও নেই।

বিবৃতিতে আরও অভিযোগ করা হয় যে, উল্লেখিত চারজন সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত সব সংবাদ তাদের পেশাগত প্রধান কার্যালয়কে (কেন্দ্রীয় অফিসকে) অবহিত করেন না। এই সাংবাদিকবৃন্দের কাছ থেকে গঠনমূলক কোনো প্রতিবেদন পরিলক্ষিত হয় না। উক্ত সাংবাদিকবৃন্দের নামে সরাসরি দায়িত্ব অপব্যবহারের অভিযোগ করা হয়েছে। উল্লিখিত সাংবাদিকদের সাংবাদিকতা থেকে বিরত রাখার কথা বলা হয়েছে।

স্মারকলিপিতে সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ভিসিকে অবগত করে বলেন, আপনি জানেন, সাংবাদিকতা একটি সার্বজনীন স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ পেশা। সাংবাদিকবৃন্দ কোনো রিপোর্ট (প্রতিবেদন) কোথায়, কখন, কীভাবে, অফিসকে অবহিত করবেন তা একান্তই তাদের পেশাগত কর্মসংস্থার নীতি এবং নৈতিকতা এবং নিজ নিজ মিডিয়া হাউজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। নব প্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ স্বাধীন সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করেন না বরং সংবিধানকে অস্বীকার করতে চান এমনটি তার বিবৃতি থেকে প্রতীয়মান হয়। কারণ সংবিধানে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক-স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করার পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমেরও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু তারা সাংবাদিকদের সংবাদ পরিবেশনে চাপ সৃষ্টি করার অপ্রয়াস চালিয়েছেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে সাংবাদিকদের সম্পর্কে এমন আপত্তিকর বিবৃতিতে আমরা আহত হয়েছি। আমরা মনে করি এই বিবৃতির মাধ্যমে নব প্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দসহ গোটা সাংবাদিক সমাজ, সংবাদ মাধ্যম এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। এই বিবৃতি অনৈতিক, অসাংবিধানিক ও অপরাধ বলে মনে করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি।

বিবৃতির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক সমালোচনা হলেও সংগঠনটি তাদের অনৈতিক বিবৃতি প্রত্যাহার করে নেয়নি। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।

আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত খোরশেদ আলম (পিএটু পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক) তার ফেসবুক আইডিতে সংবাদমাধ্যম, সাংবাদিক ও বেরোবি শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিকৃত ও আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন।

তিনি তার ফেসবুক পোস্টে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ‘পতিতা, চাটুকার, কুলাঙ্গার, হকার’ প্রভৃতি অশালীন ভাষায় গালাগাল দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি দেশের সিনিয়র সাংবাদিকদের নিয়েও এরকম অশালীন ও মানহানিকর বক্তব্য প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। যার মাধ্যমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশবাসীর কাছে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে বলে মনে করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে খোরশেদ আলম (পিএটু পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক) এর বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ করছি।

এদিকে স্মারকলিপির অনুলিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, সকল ডিন, বিভাগীয় প্রধান, স্থানীয় প্রেসক্লাব, রিপোটার্স ক্লাবে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, এডুকেশন রিপোর্টার্স ফোরামসহ বিভিন্ন সাংবাদিক লিগ্যাল সংগঠনকে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির এক সভায় সিদ্ধান্তের আলোকে ‘নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ’র অসাংবিধানিক ও অনৈতিক বিবৃতি এবং শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের নিয়ে একজন কর্মচারীর মানহানিকর মন্তব্যের বিষয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ওই শিক্ষক সংগঠন এবং কর্মচারীকে বয়কট করা হয়।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন