Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

রাবির সেই তরিকুল ভালো নেই

Icon

সাইফুল ইসলাম

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৩:৪৫ পিএম

রাবির সেই তরিকুল ভালো নেই

ফাইল ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের হাতুড়ি পেটায় মারাত্মক আহত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র তরিকুল ইসলাম। ওই হামলায় পা ও মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায় তরিকুলের। এছাড়া লাঠির আঘাতে তার পুরো শরীরের মাংসপেশী ফুলে যায়। ফলে দীর্ঘ দিন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিলেও এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি তরিকুল। কয়েকবার অস্ত্রোপচারেও স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারছে না সে। মাঝে মধ্যে অসহ্য যন্ত্রণায় বিছানায় ছটফট করেন তিনি।

শুক্রবার সকালে কথা হয় তরিকুলের সঙ্গে। কেমন আছেন, জিজ্ঞেস করতেই কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন, তেমন ভালো নেই। রাতে ঘুমাতে পারিনি। একটু আগে ঘুম থেকে উঠেছি। ব্যথার কারণে রাতে ভালো ঘুম হয় না। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হইনি। প্রতিনিয়তই ওষুধ নিতে হচ্ছে। ওষুধ নেওয়া বন্ধ করলে শরীরে সমস্যা দেখা দেয়।

তরিকুল বলেন, চিকিৎসায় অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রথম দিকে দানের টাকায় চিকিৎসা চললেও এখন চিকিৎসার খরচ পরিবারকেই বহন করতে হচ্ছে। কিছুদিন ফিজিওথেরাপি নিয়েছি। বর্তমানে বন্ধ আছে। আবার এটা শুরু করব। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষে বড় চাকরি করব, কিন্তু এখন ঠিকমতো পড়াশোনাও করতে পারি না। অধিকাংশ সময় আমাকে শুয়ে কাটিয়ে দিতে হয়। জানি না কবে পুরোপুরি সুস্থ হবে।

আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমার ওপর যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। হামলার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। প্রশাসনকে অভিযোগ দিলেও এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে সেই সময় অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারতো কিন্তু প্রশাসন তা না করে উল্টো আমাদের নামে মামলা করার ভয় দেখিয়েছিল।

তরিকুলের বন্ধু মাসুদ মোন্নাফ বলেন, ওর শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো না। এখনো স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারে না। ওষুদ নিলে ভালো থাকে; কিন্তু সব সময় ওষুধ কেনারও সামর্থ্য থাকে না।  যতদিন বাঁচবে এ কষ্ট তাকে বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার কোনো খোঁজখবর রাখেনি। হামলায় জড়িতদের বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো আমাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে। ওই সময় যদি তরিকুলের ওপর হামলার বিচার হতো, তাহলে আর কোনো ক্যাম্পাসেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর দ্বারা কেউ আক্রামণের শিকার হতো না।   

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সারা দেশের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও আন্দোলন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি সফল করতে ওই বছরের ২ জুলাই সকালে পতাকা মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে আসলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ওই সময় হামলায় ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ রাবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ মোন্নাফসহ ১১ জন আহত হন। পরে পুলিশের উপস্থিতিতেই রাস্তায় ফেলে তরিকুলকে লাঠি, রড ও হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তরিকুলকে।

ওই সময় হাসপাতালে এক্স-রেসহ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা যায়, তরিকুলের ডান পা ও মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গেছে। এছাড়া মাথায়ও প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন। তার মাথায় ৯টি সেলাই লাগে। এ ঘটনার পর সারা দেশে নিন্দার ঝড় উঠে। জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের শাস্তির দাবি উঠে বিভিন্ন মহল থেকে। এছাড়া ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের রাবি শাখার নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বারবার দাবি জানালেও জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
 

রাবি সেই তরিকুল ভালো নেই

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম