‘একদিনের ব্যবধানে স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে গেল’
শাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭:৫৫ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী সজল কুণ্ডু টানা প্রায় ১৫ দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর ক্যাম্পাসে ফিরেছেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে গত শুক্রবার বিকালে ক্যাম্পাসে আসেন তিনি।
শনিবার সন্ধ্যায় আহত শিক্ষার্থী সজল কুণ্ডু পুলিশের হামলা এবং তার চিকিৎসার সময়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, গত ১৬ জানুয়ারি নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর যে পুলিশি হামলার ঘটনা ঘটে তাতে আমার শরীরে শটগান ও সাউন্ড গ্রেনেডের অন্তত ৮৩টি স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। এছাড়াও পুলিশের লাঠিচার্জে শরীরের বহু স্থানে সাংঘাতিক আঘাত পাই। মারাত্মক আহত অবস্থায় প্রথমে কিছুদিন সিলেটে এবং গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১৫ দিন যাবত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলাম।
এর মধ্যে ডান হাতে একটি অস্ত্রোপচারে হাতের গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুর আশপাশের স্পর্শকাতর অঞ্চল থেকে ৪টি স্প্লিন্টার অপসারণ করা হয়। এখনো আমার মাথা, বুক, পেট, পিঠসহ সারা শরীরের বেশ কিছু স্থানে ৭৫টিরও বেশি স্প্লিন্টার রয়েছে। প্রাণঘাতী সংক্রমণের আশঙ্কা থাকায় চিকিৎসকেরা পুনরায় অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি আপাতত নিচ্ছেন না। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী আমাকে হয়তো এসব স্প্লিন্টার শরীরে নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে হবে।
তিনি বলেন, আমার বাবা মৃত, অসুস্থ মাকে নিয়ে আমার অসচ্ছল পরিবার। সম্প্রতি কিছু ঋণ করে আমি সামান্য ব্যবসা শুরু করেছিলাম, পড়াশোনা শেষ করে হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই চাকরির চেষ্টা শুরু করতাম। স্বপ্ন ছিল আমার উপার্জনে পরিবারে সুদিন আসবে। একটি দিনের ব্যবধানে যে আমার স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে গেল, সারা শরীরে অসংখ্য আঘাত ও স্প্লিন্টার নিয়ে অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণায় সামনের বিপদসঙ্কুল দিনগুলো কীভাবে কাটবে তার আশঙ্কায় এখন যে আমাকে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তার দায় কে নেবে?
সজল কুণ্ডু বলেন, আমি জানতে পেরেছি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় উত্থাপিত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে আমাকে আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি প্রদান, আমার ভবিষ্যতের সমস্ত চিকিৎসা খরচ সরকারের পক্ষ থেকে বহন ও আমাকে এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি ছিল। আমাকে চাকরি প্রদানের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী মৌখিক আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত আমার ভবিষ্যতের চিকিৎসার খরচ বহন ও এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট আশ্বাস পাইনি।
তিনি বলেন, ১৬ জানুয়ারি যে নারকীয় হামলা হয়েছে তার একজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বলতে চাই আমার কাছে সত্য হচ্ছে আমার শরীরে এখনো বিঁধে থাকা স্প্লিন্টারগুলো, এতদিনের অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণা, আমার আহত সতীর্থদের আর্তনাদ। আমাদের প্রত্যেকটি দাবি মেনে নিয়ে যে কারণে আমাদের জীবনে ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে তা থেকে আমাদের সবাইকে মুক্তি দেওয়া হোক।
পরিশেষে আমি আমার সতীর্থ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমস্বরে আচার্য এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ আবেদনই করতে চাই।
