Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

মুখে মাস্ক পরে ক্যাম্পাসে অভিযুক্ত দুই ছাত্রী

Icon

ইবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:১৮ পিএম

মুখে মাস্ক পরে ক্যাম্পাসে অভিযুক্ত দুই ছাত্রী

তদন্ত কমিটির ডাকে সাক্ষাৎকার দিতে ক্যাম্পাসে আসেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযুক্ত দুই ছাত্রী। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওই দুই ছাত্রী ক্যাস্পাসে প্রবেশ করেন।

ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় হাইকোর্টের নির্দেশে ক্যাম্পাস ছাড়েন ওই দুই ছাত্রী। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রশাসন কর্তৃক গঠিত কমিটি মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।

এর আগে অন্তরা ও তাবাসসুমকে প্রশাসনের নিরাপত্তায় গড়িতে করে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয়। সহকারী প্রক্টর জয়শ্রী সেন তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। অভিযুক্তরা মুখে মাস্ক পরে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক তদন্ত কমিটি ও হল প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি পর্যায়ক্রমে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সরেজমিন পরিদর্শন ও অনুসন্ধানে অভিযুক্তদের সাথে নিয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে যান উভয় তদন্ত কমিটি। ৬টার দিকে দুই কমিটি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করে বলে জানা গেছে।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. রেবা মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তে কী পেলাম সেটা জনসম্মুখে বলা যাবে না। তদন্ত কমিটির কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য, এসব বাইরে প্রকাশ করার বিধান নাই। তদন্ত কার্যক্রমের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করার চেষ্টা করব। অভিযোগের সত্যতার বিষয়ে এখন আমরা বলতে পারব না।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. রেবা মণ্ডলের নেতৃত্বে আইন বিভাগে আহ্বায়কের ব্যক্তিগত কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। এ সময় তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সাড়ে ৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তদন্ত কমিটি তাদের সাক্ষাৎকারের প্রাথমিক ধাপ শেষ করেন। পরে বিজ্ঞান অনুষদের নিচতলায় হল কর্তৃক গঠিত কমটির আহ্বায়ক ড. আহসানুল হকের কক্ষে সাক্ষাতকার নেওয়া হয় অভিযুক্তদের।

এরপরই ছাত্রলীগের গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযুক্তদের সাক্ষাৎকার নেয়। অভিযুক্তরা চার পৃষ্ঠার একটি লিখিত বক্তব্য স্বাক্ষরসহ কমিটির হাতে হস্তান্তর করেন। কমিটির সঙ্গে আলাপ শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের উত্তর দেন তারা।

ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ সত্য কিনা? এমন প্রশ্নে অন্তরা বলেন, ‘নো কমেন্ট’।

এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে সানজিদা বলেন, তদন্ত কমিটির সঙ্গে প্রথমে একবার কথা হয়েছে। তারপর চার পৃষ্ঠার লিখিত দেওয়া হয়েছে। ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত কমিটি জানতে চেয়েছে। তদন্ত হচ্ছে, তদন্তের মাধ্যমেই সব কিছু জানতে পারবেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আপনি হলে ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। জবাবে অন্তরা বলেন, এটা তদন্ত করলেই সব কিছু জানতে পারবেন। প্রতিবেদন যা আসবে সত্যিটাই তো আসবে। স্যার ম্যাডামরা যা দিবে বা আমাদের তদন্ত তাদের ওপর ভরসা করেই দেওয়া হয়েছে। আপনার সেখান থেকেই সব কিছু জানতে পারবেন।

কমিটিতে পদ পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কমিটিতে আসা বা না আসা আমার কমেন্ট করার কথা না। আপনারা বড়দের সঙ্গে কথা বলেন সব কিছু জানতে পারবেন।

হলের ঘটনার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নো কমেন্ট।’

অভিযুক্ত আরেক ছাত্রী তাবাসসুম ইসলাম বললে, যা বলার তদন্ত কমিটির কাছে বলেছি, এর বাইরে কিছু বলতে চাই না।

জিয়া পরিষদের মানববন্ধন

ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘জিয়া পরিষদ’।

এ সময় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলীর সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন জিয়া পরিষদের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. নজিবুল ইসলাম, সাদা দলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. একেএম মতিনুর রহমান, শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও গ্রীন ফোরামের নেতা অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, জিয়া পরিষদ নেতা অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. এটিএম মিজানুর রহমান, অধ্যাপক ড. রাশিদুজ্জামানসহ বিএনপিপন্থি শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।

এ সময় তারা বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে নবীন ছাত্রীর ওপর নারকীয় অত্যাচারের ঘটনায় আমরা লজ্জিত। বাংলাদেশের মূল রোগ ‘গণতন্ত্রহীনতা’। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা হলে রোগের সমাধান হয়ে যাবে। তাহলে আর কোনো বোনকে নির্যাতিত হতে হবে না, কোনো বোনকে সম্ভ্রম হারাতে হবে না। তাই সর্বস্তরের জনগণকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে শামিল হতে হবে।

ছাত্র ইউনিয়নের মৌন প্রতিবাদ

সোমবার প্রশাসন ভবনের সামনে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন প্রতিবাদ করেছে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ। এ সময় ঘটনার আট দিন পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি ছাড়া দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেতাকর্মীরা।

এর আগেও এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে সংগঠনটি। এছাড়াও শাখা ছাত্র মৈত্রী ও ছাত্রদল নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে। 

শিক্ষক সমিতি ও গ্রিন ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা

এ ঘটনায় সমবেদনা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে আবেদন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এছাড়া এ বিষয়ে নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদলিপি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রিন ফোরাম, ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলনসহ নানা সংগঠন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম