Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

শার্ট খুলতে অস্বীকৃতি, জাবিতে গভীর রাতে শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

Icon

জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:৪৮ পিএম

শার্ট খুলতে অস্বীকৃতি, জাবিতে গভীর রাতে শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের রুমে ডেকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের ৯ কর্মীর বিরুদ্ধে। শার্ট খুলতে অস্বীকৃতি জানানোই শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ২১৯ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় বিচার চেয়ে হল প্রাধ্যক্ষ্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সাকিবুল ইসলাম ফারাবি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের (৪৯ ব্যাচ) এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন- ইংরেজি বিভাগের জুনায়েদ হাসান রানা, ফার্মেসি বিভাগের নাইমুল ইসলাম সাগর, ইতিহাস বিভাগের আতিক শাহরিয়ার, চারুকলা বিভাগের মোহতাছিম বিল্লাহ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের আহমেদ আক্তার উৎস ও সালেক ইবনে ইউসুফ কাব্য, গণিত বিভাগের জুনায়েদ ইভান, বায়োকেমেস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ইমরান মির্জা এবং পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সৈকত ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের (৪৮ ব্যাচ) শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত ২টার দিকে শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী ২১৬নং কক্ষের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ২১৯ নং কক্ষে ডেকে নিয়ে যায়। এ সময় তাদের নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের রুমে তালা ঝুলিয়ে দিলে সারারাত গেস্টরুমেই রাতযাপন করেন তারা।

ভুক্তভোগী ফারাবি বলেন, শুক্রবার রাতে অভিযুক্তরা আমাকে ২১৯নং কক্ষে ডেকে নিয়ে যায়। গত কয়েক দিন কেন আমরা ছাত্রলীগের প্রোগ্রামগুলোতে ছিলাম না- এ বিষয়ে জানতে চায়। আমার পরীক্ষা চলায় থাকতে পারিনি বললে তারা উত্তেজিত হয়ে আমার দিকে তেড়ে আসে। একপর্যায়ে আমাকে শার্ট খুলতে বলে। শার্ট খুলতে অস্বীকৃতি জানালে আমাকে এলোপাতাড়িভাবে মারতে থাকে। পরবর্তীতে ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে না থাকলে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

অভিযুক্ত আতিক শাহরিয়ার বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। অভিযোগকারী ছেলেটা প্রায়ই নেশাগ্রস্থ থাকে এবং রুমমেটদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। এজন্য আমরা তাকে রুমে ডেকে রুম পরিবর্তনের জন্য নির্দেশ দেই। তখন সে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে। তাই আমরা তাকে বুঝিয়ে রুম ত্যাগ করতে বলি। তাকে কোনোরকম মারধর বা নির্যাতন করা হয়নি।

আরেক অভিযুক্ত ইমরান মির্জা বলেন, তাকে রুমে ডাকা হয়েছিল। তবে কোনো ধরনের শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি।

তবে প্রত্যক্ষদর্শী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব মারধরের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চড় থাপ্পড়ের আওয়াজে আমি রুম থেকে উঠে এগিয়ে যাই। তখন দেখি ৪৮ ব্যাচের সিনিয়র ভাইয়েরা ফারাবিকে মারধর করছে। পরে তাকে আমি রুম থেকে বের করে নিয়ে আসি।

এ ব্যাপারে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, ঘটনা সম্পর্কে আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমার কাছে কেউ অভিযোগ জানায়নি। হল প্রশাসন যদি আমাকে অফিসিয়ালি জানায় তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ছাত্রলীগ র্যা গিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে আমরা সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২ আগস্ট মধ্যরাতে একই হলের গেস্টরুমে এক সাংবাদিককে মারধর করে শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। ওই ঘটনায় জড়িতদের বিভিন্ন মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে প্রশাসন। তবে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত আটজনের মধ্যে আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহকে পরবর্তীতে শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ-সম্পাদক করা হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম