পানি গরম করা নিয়ে রাবির এক ছাত্রীকে সাত দিন ধরে নির্যাতনে তদন্ত কমিটি
রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৩, ০৬:১৬ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে পানি গরম করাকে কেন্দ্র করে এক ছাত্রীকে সাত দিন যাবত বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে একই হলের আরেক সিনিয়র আবাসিক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া সুলতানা মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনাকালে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেকে) হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে হলে ফিরেছেন।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নুরুন্নাহার দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত দুজনেই হলের ৫০১ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার রাতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
হলের একই ব্লকের প্রত্যক্ষদর্শী অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি পানি গরম করাকে কেন্দ্র করে ভুক্তভোগী সুমাইয়ার সঙ্গে অভিযুক্ত দোলনের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দোলন রাগান্বিত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে অভিযুক্ত দোলন ওই রাতেই হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে বসেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সবার সামনে ক্ষমা চাইলেও ছাত্রলীগের দায়িত্বরত নেত্রীরা তাকে বিভিন্নভাবে শাসান। এরপর দোলন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স্মৃতি রায়ের সহায়তায় প্রভোস্টের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। সাত দিন যাবত ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে রুমে ডাকা ও বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করেন দোলন ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স্মৃতি রায়।
মঙ্গলবার অভিযুক্ত দোলনের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বঙ্গমাতা হলের প্রভোস্ট ড. ফারজানা কাইয়ুম কেয়া ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে তার কক্ষে ডাকেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং অভিযুক্ত দোলন। ভেতরে আলোচনা চলাকালীন একপর্যায়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে যান। পরে দ্রুত তাকে রামেক হাসপাতালে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে নেওয়া হয়।
পরে বুধবার তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তাকে হাসপাতাল থেকে সহপাঠীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পরই প্রথমে ছাত্র উপদেষ্টার দপ্তরে তাকে নিয়ে বসানো হয়। এ সময় ছাত্র উপদেষ্টা তার সঙ্গে যাবতীয় বিষয়ে আলোচনা করেন।
নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নুরুন্নাহার দোলন বলেন, আমি কোনো অপরাধ করিনি। এর কোনো প্রমাণও নেই। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটি মিথ্যা এবং আমার পক্ষে হলে আমার ব্লকের ৩০ জনের মধ্যে ২৩ জন গণস্বাক্ষরও করেছেন।
হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি তাজরীন মেধা বলেন, দুজনই আমাদের কাছে এসেছিলেন। আমরা ওই রাতেই সমাধান করে দিয়েছিলাম কিন্তু কিছু সিনিয়র শিক্ষার্থীর প্ররোচনায় এ সমস্যা পরে আরও বৃহৎ আকার ধারণ করেছে। আর এখানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাত্রলীগের সম্মান ক্ষুণ্ণ করছে কোনো একটি দল।
হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স্মৃতি রায় জানান, বিষয়টি নিয়ে দোলন আমার কাছে এলে আমি হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিকে নিয়ে সেদিন তাদের ৫০১ নম্বর কক্ষে যাই। সেদিনই সেই ব্লকের সবার উপস্থিতিতে বিষয়টির সমাধান করে দিই। পরে বিষয়টি নিয়ে হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গেও বসা হয়েছে। এসব ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ আছে।
জানতে চাইলে বঙ্গমাতার হল প্রাধ্যক্ষ ড. ফারজানা কাইয়ুম কেয়া বলেন, আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। আপনারা ছাত্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেন।
ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগীর সঙ্গে আলোচনা বসেছিলাম। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম খানকে আহ্বায়ক করে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইকা কবীর নিতু ও বঙ্গমাতা হলের আবাসিক শিক্ষক ড. মনিকৃষ্ণ মহন্তকে সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটির কর্মদিবস বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে। তদন্ত প্রতিবেদনের সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে বুধবার বিকালে অভিযুক্ত নুরুন্নাহার দোলনের পক্ষ নিয়ে সঙ্গীত বিভাগের সভাপতির ও অভিযুক্তের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার অসদাচরণের অভিযোগ তুলে কিছু শিক্ষার্থী হল ফটকে অবস্থান নেন।
