রাবি ছাত্রলীগ নেতার মালামাল চুরি করলেন আরেক ছাত্রলীগ নেতা!
রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৩, ০৪:০৮ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে হলকক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চুরি, বরাদ্দকৃত সিটে না থাকতে দেওয়া ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ তোলেছেন সংগঠনটির আরেক নেতা।
গত রোববার বিষয়টি নিয়ে সন্ধ্যা ৬টায় ও সোমবার বেলা আড়াইটায় যথাক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নেতা।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা সামিউল আলম পিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের (মাস্টার্স) শিক্ষার্থী ও বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
অপরদিকে অভিযুক্ত একই হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমস ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরীয়া উভয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে থাকেন।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা পিয়াস বলেন, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ২১০ নাম্বার রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী। গত ৪ মার্চ আমার কক্ষ থেকে আমার অনুপস্থিতিতে আমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এসএসসি মূল সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট এবং ভিসার জন্য ব্যাংক স্টেটমেন্টের কাগজ এবং বিছানাপত্র যাবতীয় সব কিছু বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জেমসের নিদের্শে তার অনুসারীরা নিয়ে যায়। আমি রুমে এসে রুমমেটদের থেকে যখন শুনলাম জেমসের অনুসারীরা রুমে এসে জিনিসপত্র নিয়ে গেছে, তখন জেমসকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করার পর অস্বীকার করে।
অভিযোগে উল্লেখ করে পিয়াস বলেন, আমি আগে বঙ্গবন্ধু হলের ৩২৯নং রুমে থাকতাম। ওই রুমে বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান (সোহান) থাকতেন এবং তার নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক মাদক মামলা হয়। তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়াকে বিষয়টি জানাই এবং ওই রুমে না থাকার অপরাগতা প্রকাশ করি। তখন এক পর্যায়ে উনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। হলে না থাকতে দেওয়ার হুমকি ও আমাকে হল থেকে বের করে দেয়।
তখন তিনি বলেন, ওই রুমে সোহান থাকবে, ওই গাজা ব্যবসা করুক আর মদ বিক্রি করুক। তারপর আমাকে বলে তোর বঙ্গবন্ধু হলে আর থাকার সুযোগ নাই। তখন আমি বিষয়টি হল কর্তৃপক্ষকে জানালে পরবর্তীতে আমাকে ২১০ নাম্বার রুম বরাদ্দ করে দেয়। নতুন রুমে আসার পর এই বিষয়গুলো আমার সাথে ঘটে। আমি এখন আবাসনহীন ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
অভিযোগের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমস বলেন, আমি গত কিছুদিন যাবত রাজশাহীর বাইরে ঢাকায় অবস্থান করছি। তাহলে আমি কিভাবে তার জিনিসপত্র চুরি করতে পারি? পিয়াস ভাই গত দুদিন আগে আমাকে ফোন করে তার কাগজপত্র চুরি হওয়ার বিষয়টি জানান। আমি তখন ওনাকে প্রশাসনের নিকট চুরি হওয়ার অভিযোগপত্র আর থানায় জিডি করার পরামর্শ দেই ।
জেমস বলেন, আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পারলাম যে আমার নামে সে এই অভিযোগটা করে রেখেছে। তার জিনিসপত্র আমার অনুসারী কেন নিবে। আর একজন অনাবাসিক শিক্ষার্থীর জিনিসপত্র কিভাবে হলে থাকে? আমি যতটুকু জানি তিনি হলে থাকেন না। আমার অনুসারীদের কেউ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত না। অভিযোগটা তাকে প্রমাণ করতে হবে, না হলে আমি উনার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিব।
জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরীয়া বলেন, তাকে হল থেকে নামিয়ে দেয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমার জানামতে সে হলের আবাসিক শিক্ষার্থী না। সে মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় আমি তাকে হল থেকে চলে যেতে বলি, যাতে তার সংস্পর্শে এসে অন্যরা মাদকাসক্ত না হয়।
তবে মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ভুক্তভোগী নেতা পিয়াস বলেন, কে মাদকাসক্ত সেটা ডোপ টেস্ট করলেই বেরিয়ে আসবে। এর জন্য আমার এবং শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরীয়ারও ডোপ টেস্ট করানো হোক। আর আবাসিকতার প্রসঙ্গে তিনি আবাসিকতার কার্ড ও হল ফি পরিশোধের কাগজপত্র প্রমাণসরূপ এই প্রতিবেদকের কাছে সরবরাহ করেন। এছাড়া খোদ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতিই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নয় বলে জানান।
অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হককে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র উপদেষ্টা এম. তারেক নূর ও বঙ্গবন্ধু হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শায়খুল ইসলাম মামুন জিয়াদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
