এবার ইবি রেজিস্ট্রারের অর্থ লেনদেনের কথোপকথন ফাঁস
ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৩, ১০:৪২ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভিসির নিয়োগ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি আলাপন ফাঁসের ঘটনার রেশ না কাটতে না কাটতেই এবার ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের অর্থ লেনদেনের কথোপকথন ফাঁস হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ‘সাথী খাতুন’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে চারটি কল রেকর্ড সংবলিত ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় রেজিস্ট্রার ইবি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
ভিসির অডিওর চাঞ্চল্য কাটিয়ে ওঠার আগেই এই নতুন অডিও নিয়ে আবারো ক্যাম্পাসজুড়ে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।
ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপে- একটি অডিও ক্লিপের মধ্যে আলাদা চারটি কল রেকর্ড একত্র করা রয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক পরিকল্পনা উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচএম আলী হাসান ইসিএল নামক কোম্পানির ঠিকাদারকে কোনো কাজে সহযোগিতা করায় ঠিকাদার তাকে চার লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে অডিওতে। একই সঙ্গে তা কখন কিভাবে দেওয়া হবে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে ক্লিপে। এসব কথা সেনসিটিভ হওয়ায় তা ফোনে না বলার জন্য ঠিকাদারকে অনুরোধ করেন আলী হাসান।
এদিকে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রারের ফাঁস হওয়া আর্থিক দুর্নীতির বিষয় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে ভিসি বরাবর লিখিত দিয়েছেন।
সমিতির সভাপতি- সম্পাদক স্বাক্ষরিত ওই লিখিত অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার পরিকল্পনা পরিচালক থাকা অবস্থায় বিভিন্ন ঠিকাদার থেকে অর্থগ্রহণ করেছেন মর্মে ডে অডিও ক্লিফ ফাঁস হয়েছে তা রেজিস্ট্রারের মতো পদকে কলঙ্কিত করেছে। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে মর্মে অতিদ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে।
অডিও ক্লিপ সূত্রে জানা যায়- শুরুতে ঠিকাদার ‘আমি মঈন (ইসিএল থেকে)’ পরিচয়ে আলী হাসানের সঙ্গে কথা শুরু করেন। তারপর ঠিকাদার টাকা জমা দেওয়া ও পরবর্তী দিন টাকা ক্যাশ হলে কোথায়, কখন প্রেস করবে জানতে চান রেজিস্ট্রারের কাছে। এ সময় রেজিস্ট্রার আলী হাসান ৩টার সময় কুষ্টিয়া থেকে টাকা দিতে বলেন। ব্যাংক থেকে টাকা হাতে পেতে দেরি হবে জানিয়ে চার লাখ টাকা সাড়ে চারটা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে পাবেন বলে জানান রেজিস্ট্রারকে।
এ সময় রেজিস্ট্রার বলেন, ‘ফোনে এগুলো বলার দরকার নাই’। একথা শুনে ঠিকাদার রেজিস্ট্রারকে নির্ভয় দিয়ে বলেন ‘সেভ জায়গায় আছে, কোনো সমস্যা হবে না বলে রেজিস্ট্রারকে আশ্বস্ত করেন ঠিকাদার।’ ফের আবারো রেজিস্ট্রার ফোনে এসব কথা না বলার জন্য ঠিকাদারকে সতর্ক করেন। তখন ঠিকাদার রেজিস্ট্রারকে পরে ফোন দেওয়ার কথা জানায়।
দ্বিতীয় কল রেকর্ডে ঠিকাদার রেজিস্ট্রারকে টাকা ৪টার দিকে পাওয়ার কথা জানান। তখন তিনি আবারো অর্থ লেনদেনের বিষয়টি ফোনে না বলার ব্যাপারে সতর্ক করেন। এ সময় ঠিকাদার ফোনে সরাসরি কোনো কথা না বলে শুধু ইঙ্গিতের মাধ্যমে (আমার হয়ে গেছে, কোথায় আসবো) বলবেন বলে রেজিস্ট্রারকে আশ্বস্ত করেন।
পরের কল রেকর্ডে রেজিস্ট্রার টাকার বিষয়ে খোঁজ নিতে নিজ থেকেই ফোন করেন ঠিকাদারকে। এ সময় ঠিকাদার ব্যাংকে আছেন, কাজ শেষ হলেই তাকে জানাবেন বলে জানান। পরবর্তী কল রেকর্ডে রেজিস্ট্রার ফের টাকার জন্য ঠিকাদারের কাছে ফোন করে টাকার অবস্থা এবং আর কতক্ষণ লাগবে তা জানতে চান।
এ সময় ঠিকাদার আর আধঘণ্টার মতো লাগবে বলে রেজিস্ট্রারকে কোথাও বসে চা খেয়ে একটু অপেক্ষা করতে বলেন। কিন্তু ব্যাংক বন্ধ হওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে বলে রেজিস্ট্রার ঠিকাদারকে তাগিদ দিতে থাকেন। ফের আবার রেজিস্ট্রার ঠিকাদারের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন- আপনি অল্প একটু অপেক্ষা করেন, আসতেছি। ব্যাগে ভরতেছি (টাকা), প্লিজ একটু রাখেন।’
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচএম আলী হাসান যুগান্তরকে বলেন, আমার বিভিন্ন সময়ের কথোপকথন থেকে অল্প অল্প করে কেটে নিয়ে সুপার এডিট করা হয়েছে। আমি আইনি পদক্ষেপ হিসেবে জিডি করছি। আমার সামাজিক মর্যাদা হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এটা করা হয়েছে। আল্লার উপর বিচার ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানান।
এর আগে ইবি ভিসির নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক আলাপন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রেজিস্ট্রারের অর্থ লেনদেনের আলাপন ছড়িয়ে পড়ায় আবারো ক্যাম্পাসজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
