আবরার হত্যায় বহিষ্কৃত বিটুর ক্লাশে প্রত্যাবর্তনের প্রতিবাদে বুয়েটে মানববন্ধন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১০:৩৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যায় আজীবন বহিষ্কৃত আশিকুল ইসলাম বিটুর ক্লাশে প্রত্যাবর্তনের প্রতিবাদে সোমবার ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। খুনের দায়ে অভিযুক্ত একজনের পুনরায় ক্যাম্পাসে ফিরে আসায় সব সাধারণ শিক্ষার্থী শঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ। তারা বলেন, আমরা কোনোভাবেই আমাদের ভাইয়ের একজন খুনির সঙ্গে ক্লাস করতে রাজি না।
এক বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শেরেবাংলা হলে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হিংস্র ছাত্র রাজনীতির বলি হয়ে নিজের হলে মানষুরূপী জানোয়ারদের নির্যাতনের স্বীকার হন আবরার ভাই।
এর প্রতিবাদে তীব্র আন্দোলন শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং জড়িতদের আজীবন বহিষ্কারসহ বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ হত্যায় জড়িতদের দ্রুত বহিষ্কারাদেশের দাবিতে বুয়েট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেন তারা।
শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়ার প্রতি সম্মান রেখে বুয়েট প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে বুয়েটে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে এবং অভিযুক্ত সবার বিরুদ্ধে আজীবন বহিষ্কারের আদেশ জারি করে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে অভিযুক্তদের আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ও ত্বরান্বিত হয়। এ ঘটনায় জড়িত আশিকুল ইসলাম (বিটু) অন্যদের মতো বুয়েট থেকে আজীবন বহিষ্কৃত হন।
হঠাৎ করেই রোববার তাকে পুনরায় ১৯ ব্যাচের ক্লাশে দেখা যায়। এতে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা চরমভাবে ক্ষিপ্ত হন। এত সহজে বুয়েটের তদন্তে প্রমাণিত একজন অপরাধী ফিরে আসতে পারলে আবরার ফাহাদের আত্মত্যাগ অর্থহীন হয়ে যায়। এর বিনিময়ে পাওয়া বর্তমান বুয়েটের নিরাপদ পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ে। আমরা কোনোভাবেই আমাদের ভাইয়ের একজন খুনির সঙ্গে ক্লাস করতে রাজি না।
আবরার ফাহাদ ছিলেন বুয়েটে বিরাজমান লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির ক্ষমতা প্রদর্শনের বলি। আর বিটু সেই সময়কার বুয়েট ছাত্রলীগেরই সহ-সম্পাদক। বিভিন্ন মিটিং-মিছিলে যোগ দিতে বাধ্য করা এবং মিছিলে না গেলে রাতের বেলা নির্যাতনের মাধ্যমে শেরেবাংলা হলকে অনিরাপদ করে তুলেছিল এই অপরাধী।
আমরা আশা করছি, দ্রুততম সময়ে তার কোর্স রেজিস্ট্রেশন বাতিলসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বাতিল করে পুনরায় ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করে তোলা হবে। একই সঙ্গে বুয়েট শিক্ষার্থীদের নিয়ে কয়েকটি সাম্প্রতিক ঘটনায় দেশব্যাপী বুয়েটের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি এবং মৌলবাদমুক্ত পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা এবং গুজবের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে সব সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে আমাদের সুস্পষ্ট অবস্থান জানানো হবে আগামীকাল দুপুর ১টায়।
বিবৃতি শিক্ষার্থীরা আরও জানান, আবরার হত্যার অন্যতম আসামি অমিত সাহা বেশিরভাগ সময় সশরীরে হত্যার স্থানে অবস্থান না করলেও ম্যাসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে অংশ নিতে দেখা যায়। তাকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিতে দেখা গেছে। তারই রুমে নিয়ে এসে নির্যাতন করা হয় আবরার ফাহাদকে। এ কারণে ঘটনাস্থলে উপস্থিতি কম থাকলেও তদন্তসাপেক্ষে এবং উপযুক্ত তথ্য প্রমাণসাপেক্ষে চার্জশিটে অমিত সাহার নাম আসে।
একইভাবে সিসিটিভি ফুটেজে মোর্শেদ উজ জামান জিশানের স্বল্প সময়ের উপস্থিতি দেখা গেলেও তদন্তে তার উল্লেখযোগ্য সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। তার নামও চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত হয়। অন্যদিকে ছাত্রলীগের পদধারী সদস্য হিসেবে এবং ঘটনার দিন সারাদিন খুনিদের সঙ্গে অবস্থান করা সত্ত্বেও বিটুর নাম রহস্যজনকভাবে চার্জশিট থেকে বাদ যায়। তার নিজের বর্ণনাতেই তখন চাইলেই আবরারকে বাঁচানো যেত।
এরপর বুয়েট আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে (বিজ্ঞপ্তি নং ডি.এস.ডব্লিউ/ডি-৩৪) ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর আবরার ফাহাদ হত্যার প্রায় দেড় মাস পরে ২৬ জনকে আজীবন বহিষ্কার করে নোটিশ দেয়; যাতে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ ছিল আশিকুল ইসলামের (বিটু, ১৬০২০১৬) নাম।
এরপর ২০২১ সালের ২২ মে তাকে কেমিকৌশল-১৭ ব্যাচের একটি কোর্সের অনলাইন ক্লাশে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, কোর্টের স্টে অর্ডার নিয়ে ডিপার্টমেন্ট অফিসে যোগাযোগ করে লেভেল-৩ টার্ম-১ এর অন্তত চারটি কোর্সে রেজিস্ট্রেশন করে। আবারো সাধারণ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে তার এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
