Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

রাবির সাবেক উপাচার্যের মেয়ে সানজানা সোবহানকে শোকজ

Icon

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৩, ০৮:১২ পিএম

রাবির সাবেক উপাচার্যের মেয়ে সানজানা সোবহানকে শোকজ

অননুমোদিতভাবে বিদেশে অবস্থান করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানের মেয়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের প্রভাষক সানজানা সোবহানকে শোকজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ২০ আগস্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ শোকজ করা হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে- ৩১ জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত ৫২৪তম সিন্ডিকেট সভার ২৫নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনি কেন শিক্ষাছুটি বাতিলের আদেশ জারি ও প্রাপ্তির পরেও দেশে না ফিরে অনুনমোদিতভাবে কোন অধিকার বলে বিদেশে অবস্থান করছেন, কেন আপনি যথাসময়ে বিভাগে যোগদান করেননি এবং কেন তদন্ত কমিটি ও বিশ্ববিদ্যালয়কে অসহযোগিতা ও অবজ্ঞা করেছেন এবং সিন্ডিকেটের আদেশ অমান্য করে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন তার ব্যাখ্যা প্রদান করার জন্য অনুরোধ করা হলো। এই পত্রের উত্তর প্রাপ্তির পরে আপনার বিভাগে যোগদান বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

সানজানা সোবহানের শিক্ষাছুটি সংক্রান্ত বেশ কিছু চিঠি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। চিঠিগুলো থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে স্নাতকোত্তর কোর্সের জন্য স্কলারশিপ পান সানজানা সোবহান। ২০২২ সালের ৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে দেড় বছরের শিক্ষাছুটি প্রদান করা হয়। একই বছরের ৮ মে, ছুটি চলাকালে তার বেতন চালু রাখার বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে মর্মে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়।

গত বছরের ২৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ড. শেখ সাদ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, গত বছরের ৪ জুলাই অনুষ্ঠিত ৫১৫তম সিন্ডিকেট সভার ৪৫নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক এবং এই অফিসের ২০২২ সালের ২৩ মার্চ ৬৬২/১(৩)/১ই-৭২৫৮ / সাশা নং পত্রের অনুবৃত্তিক্রমে আদিষ্ট হয়ে জানাচ্ছি যে, আপনার (সানজানা সোবহানের) ১ মার্চ ২০২২ হতে ৩১ জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত এক বছর পাঁচ মাস শিক্ষাছুটি পূর্ণবেতনে মঞ্জুর করা হয়েছে।

তবে এর তিন মাস পর আরেকটি চিঠিতে বলা হয়, সানজানা সোবহানের ছুটি পরিষদ সভার ৪৫নং সিদ্ধান্ত এবং ২০২২ সালের ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত ৫১৫তম সিন্ডিকেট সভার ৪৫নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক আপনার (সানজানা সোবহানের) ১ মার্চ ২০২২ হতে ৩১ জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত এক বছর পাঁচ মাস শিক্ষাছুটির আবেদন অনুমোদিত হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সানজানা সোবহানের পুনরায় করা আবেদনটি বিবেচনায় না নিয়ে পূর্বের সিদ্ধান্ত বহাল আছে মর্মে আরেকটি চিঠি দেয় চলতি বছরের ১০ মে। তবে শিক্ষাছুটি শেষ করে সানজানা সোবহান বিভাগে যোগদান করেন চলতি বছরের ২৫ মে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব অভিযোগ এবং চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সানজানা সোবহান বলেন, আমি সমস্ত নিয়ম মেনেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট পূর্ণ বেতনে আমার শিক্ষা ছুটিটিও মঞ্জুর করে। আমার ডিগ্রি শেষ হতে যখন সাত মাস বাকি, তখন হঠাৎ করেই আমাকে জানানো হয়, আমার ছুটিটি মঞ্জুর হয়নি; অতিসত্বর আমি যেন বিভাগে যোগদান করি। স্কলারশিপের শর্তানুযায়ী, মাঝপথে ডিগ্রিটি ছেড়ে দিলে আমাকে প্রায় ৪২ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো। তাই পুনরায় ছুটির আবেদন করি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৭ মাস পর জানায়, তারা আমার পুনরায় করা ছুটির আবেদনটি আমলে নেননি। আমি ২৪ মে তারিখে জয়েনও করেছি বিভাগে, এখন দেখছি নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করে আমার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হচ্ছে।

সাবেক উপাচার্যের মেয়ে হওয়ায় নিজের বিরুদ্ধে এমনটা করা হচ্ছে জানিয়ে সানজানা সোবহান বলেন, আমি সাবেক উপাচার্যের মেয়ে- সে কারণেই আমার বিরুদ্ধে এসব করা হচ্ছে। কোনো অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই, আমি কোনো মার্ডারের আসামিও না, সব নিয়ম মেনেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গিয়েছি; তাহলে আমার ত্রুটি কোথায়?

সানজানা সোবহান আরও জানান, আর্থিকভাবেও আমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। শিক্ষাছুটি থেকে ফিরে আসার পর স্যালারিটার একটা ফিক্সেশন হয়, কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমার সেটি হয়নি। আমার প্রমোশনের জন্য নিয়োগ বোর্ডও গঠন করা হয়েছিল; কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এটি বাতিল করা হয়। আমার প্রমোশনটিও আটকে রাখা হয়েছে।

সানাজানা সোবহানের শিক্ষাছুটি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, বিভিন্ন অফিসিয়াল প্রক্রিয়া শেষে শিক্ষাছুটির বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদনের পর সিন্ডিকেটে যায়। সাবেক উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের জামাতার (এটিএম শাহেদ জামান, শিক্ষক, আইবিএ) নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছিল। তদন্ত কমিটি সাবেক উপাচার্যের মেয়ে সানজানা সোবহানের বিষয়েও কিছু অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে একাডেমিক কাউন্সিলেও বিষয়টি আলোচিত হয় এবং সানজানা সোবহানের শিক্ষাছুটি স্থগিত করা হয়।

সানজানা সোবহানকে দেওয়া ২০ আগস্টের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে রেজিস্ট্রার জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ওনার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, তিনি সেগুলো দেবেন। এরপর সেগুলো সিন্ডিকেটে যাবে। সিন্ডিকেটে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানাবে।

প্রসঙ্গত, অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান উপাচার্য থাকাকালীন তার মেয়ে সানজানা সোবহান এবং জামাতা এটিএম শাহেদ পারভেজের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক তদন্তে উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অন্যদের বিরুদ্ধে ২৫টি অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়। তার মধ্যে, উপাচার্য ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা শিথিল করে তার কন্যা ও জামাতাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, এ অভিযোগের সত্যতা থাকার কথাও উল্লেখ করা হয়।

এরপর ২০২০ সালে ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়োগ স্থগিতের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম