ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেছেন, অনেক সময় নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হিসেবে ছাত্র রাজনীতি আসে। এটা আমাদের কষ্ট দেয়। যারা রাজনীতি করবে তারা হবে সবচেয়ে সৎ, সাহসী এবং মেধাবী। তারা ছাত্র সমাজের সামনে আইকন হিসেবে থাকবে। আমরা অনেক সময় পত্র-পত্রিকা খুললে দেখি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িতদের সিট বাণিজ্য এবং প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার খবর। অনেকে অনেক সময় অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। আমরা কোনো অবস্থাতেই এগুলো প্রত্যাশা করি না। বরং এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে লড়াই করাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কাজ।

সোমবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবাস বাংলাদেশ মাঠে অনুষ্ঠিত শাখা ছাত্রলীগের ২৬তম বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাদ্দাম হোসেন বলেন, শহীদ ড. শামসুজ্জোহা যেমন পাকিস্তানি বাহিনীর সামনে দাঁড়িয়ে নিজের জীবন দিয়েছে, অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী যেমন স্বাধীনতাবিরোধী-মৌলবাদী গোষ্ঠীর কাছে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছে, তেমনি যতদিন না পর্যন্ত বাংলার মাটি থেকে জামায়াত-শিবির রাজাকার গোষ্ঠীকে চিরতরে নির্মূল না করতে পারি, ততদিন আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।

সম্মেলনে উদ্বোধকের বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, সম্মেলন মানেই সংগঠনে নতুন রক্তের সঞ্চালন, নতুন রোডম্যাপ, রক্তে শিহরণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে স্পন্দিত হওয়া, শেখ হাসিনার পক্ষে লড়াই-সংগ্রামে আগুয়ান থাকার রক্ত-শপথ গ্রহণ করা এবং ছাত্রলীগকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। আমি আশা করি, রাবি শাখা ছাত্রলীগ তাদের লড়াই, সংগ্রাম ও রক্ত ঝরানোর ঐতিহ্য ধরে রাখবে এবং সারা দেশের মধ্যে একটি আইকনিক শাখা হবে। আমি চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা এই শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ব্যক্তিত্ব, সততা, সাহস, মেধা, বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা ও সৃজনশীলতা দেখে ছাত্রলীগের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করবেন। এছাড়া রাবি ছাত্রলীগ যেন শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে ভূমিকা হিসেবে থাকে।

রাজনীতি মানে শুধু পদ-পদবি ধারণ করা নয় উল্লেখ করে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, রাজনীতি মানে শুধু পদ-পদবি ধারণ করা নয়। রাজনীতি মানে আপনি রাজনৈতিক অনুশীলন করবেন, আপনার মনুষ্যবৃত্তি আরও বেশি উন্মোচিত হবে, আপনি ব্যক্তিত্ব এবং সততার শিক্ষা লাভ করবেন, ত্যাগ করার সক্ষমতা থাকবে, দূরদর্শিতা থাকবে, আপনি সমস্যা সৃষ্টি নয় বরং সমস্যার সমাধান করবেন এবং সবার সাথে চলার মতো যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন।

হলের আবাসিক সংকটকে পুঁজি করে রাজনীতি করা ছাত্রলীগের কাজ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন,  আমরা জানি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের এক রুমে অনেক সময় ১০ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থীকেও থাকতে হয়। শিক্ষার্থীদের এই সংকটকে পুঁজি করে রাজনীতি করা আমাদের কাজ নয়। তাদের সমস্যার সমাধান করাই আমাদের রাজনৈতিক দায়িত্ব। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং প্রসঙ্গে সাদ্দাম হোসেন বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নপূরণ করতে হলে, বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে র‌্যাংকিংয়ের প্রথমদিকে স্থান করে নিতে হবে। এজন্য ছাত্রলীগকে চেষ্টা করতে হবে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন রিসার্চ ইউনিভার্সিটিতে পরিণত হয়। গবেষণার মান ও বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেন পড়ালেখার পাশাপাশি জ্ঞান অর্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে, সেরকম বিষয়গুলো রাজনীতির সিলেবাসের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের রাজনীতির সিলেবাসের মধ্যে শুধু মিছিল-মিটিং নয়, আধুনিকতা ও নতুনত্ব নিয়ে আসতে হবে। বর্তমান সময়ের ছেলেমেয়েরা যা কিছু চিন্তাভাবনা করছে, সেগুলোকেও সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

প্রশাসনের কাছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি তার বক্তব্যে বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার ব্যবস্থা যেন করা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমি সেই দাবি জানাচ্ছি।