নতুন শিক্ষাক্রম
শিক্ষার্থী জানে না, সে জানে-জানাবেন শিক্ষক
মো. সহিদুল ইসলাম
প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পৃথিবীর যুগান্তকারী শ্রেষ্ঠ শিক্ষক সক্রেটিস প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে উপলব্ধি করেছিলেন যে, একজন শিক্ষক আসলে শিক্ষার্থীকে কিছু শেখাতে পারেন না, কারণ শিক্ষার্থী আগেভাগেই সব জেনে বসে আছে, সে কেবল জানে না- সে জানে। শিক্ষকের দায়িত্ব হচ্ছে তাকে জানানো যে, সে জানে। জানা যে বিষয় শিক্ষার্থীর নিজের কাছেই অজানা বলে ভুল করে থাকে, সে ভুল ভাঙানোই একজন শিক্ষকের মূল কাজ। তাকে শুধু এমন একটা প্রক্রিয়া তৈরি করে দিতে হয় যেন শিক্ষার্থীরাই তাদের ভেতরের বিষয়গুলো বের করে আনতে পারে। বিখ্যাত শিক্ষাবিদ ভাইগটস্কির মতে, শিশু শিখনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এবং অভিজ্ঞরা তার সহায়ক হিসাবে ভূমিকা পালন করে। জন ডিউই বলেন, শিক্ষক হলেন পরিচালক ও নির্দেশক। তিনি নৌকাটি চালিয়ে যান, কিন্তু চালিকাশক্তির উৎস হলো শিক্ষার্থী। প্রমথ চৌধুরী বই পড়া প্রবন্ধে বলেন, ‘শিক্ষকের সার্থকতা শিক্ষা দান করায় নয়, কিন্তু ছাত্রকে তা অর্জন করতে সক্ষম করায়। শিক্ষক-ছাত্রকে শিক্ষার পথ দেখিয়ে দিতে পারেন, তার কৌতূহল উদ্রেক করতে পারেন, তার বুদ্ধিবৃত্তিকে জাগ্রত করতে পারেন, মনোরাজ্যের ঐশ্বর্যের সন্ধান দিতে পারেন, তার জ্ঞান পিপাসাকে জ্বলন্ত করতে পারেন, এর বেশি আর কিছু পারেন না।’
এ কারণে বলা যায় শিক্ষককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রাসঙ্গিক নয়। আসলে মানুষ সবকিছু অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই শিখে। সে যদি কোনো বিষয়ে বারবার শুনতে থাকে, বলতে থাকে, পড়তে থাকে, করতে থাকে, দেখতে থাকে, স্পর্শ করতে থাকে, তাহলে এক সময় সেটা তার মনে স্থায়ী স্থান করে নেয়। তখনই বলা যায় সে বিষয়টি শিখেছে।
পূর্বের শিক্ষাব্যবস্থা ছিল শিক্ষককেন্দ্রিক। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। তাই নতুন শিক্ষাক্রমে একজন শিক্ষককে গতানুগতিক শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতি পরিহার করে সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করতে হবে। পূর্বের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক শুধু কোনো বিষয়ের ওপর আলোচনা করতেন, লেকচার দিতেন। কিন্তু বর্তমানে নতুন শিক্ষাক্রমে শিখন-শেখানো প্রক্রিয়াটি অভিজ্ঞতাভিত্তিক, শিক্ষার্থী বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের মধ্য দিয়ে যোগ্যতা অর্জনের পথে এগিয়ে যাবে। তাই এ ক্ষেত্রে একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীকে কীভাবে যোগ্যতা অর্জনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়-এ বিষয়ে সহায়তা করবেন।
সঠিকভাবে পাঠ পরিচালনার ক্ষেত্রে একজন শিক্ষকের পাঠ পরিকল্পনা খুবই জরুরি। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটি সেশন পরিচালনার জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত শিক্ষক সহায়িকা বা টিজি অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে হবে। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ টিজির ওপর ভিত্তি করেই পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শ্রেণি শিক্ষকদের করণীয়
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শ্রেণি শিক্ষকদের দেওয়া নির্দেশনায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, টিচার্স গাইড ও পাঠসংশ্লিষ্ট উপকরণসহ শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। গতানুগতিক শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতি পরিহার করে সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে প্রচলিত ভূমিকার ঊর্ধ্বে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষককে হয়ে উঠতে হবে সহ-শিক্ষার্থী। তাকে হোম ভিজিট ও উঠান বৈঠক করতে হবে। প্রকল্পভিত্তিক কাজ ও অনুসন্ধানমূলক কাজে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, ডায়েরি ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়তামূলক একীভূত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিখন পরিবেশ নিশ্চিত করবেন শ্রেণি শিক্ষকরা, যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিখনের উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। শ্রেণি শিক্ষক যেসব সমস্যা চিহ্নিত করবেন, তা নিয়ে প্রতি সপ্তাহে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সাপ্তাহিক সভায় আলোচনা ও সমস্যা সমাধানের কৌশল নির্ধারণ করবেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
স্লো লার্নার ও অ্যাডভান্সড লার্নার চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী শিখন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে এবং তাদের শিখন পরিস্থিতি উন্নয়নে কার্যকর কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। মূল্যায়নের মূলনীতি অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন যোগ্যতার মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে ও মূল্যায়নের ধারাবাহিক রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের দলগত কাজসহ সামগ্রিক মূল্যায়নে নিরপেক্ষতা, সততা এবং নৈতিকতা বজায় রাখা। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিখন পরিবেশ তৈরি করতে শিক্ষককে মূলত ফ্যাসিলেটরের ভূমিকা পালন করতে হবে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে কারিকুলাম সংশ্লিষ্ট বাস্তব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আদান প্রদানের একটা অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
শিখনকালীন মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে। নতুন শিক্ষাক্রমে গতানুগতিক পরীক্ষা থাকছে না, বরং সম্পূর্ণ নতুন ধরনের মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষক সহায়িকাতেও মূল্যায়নের প্রাথমিক নির্দেশনা দেওয়া আছে। মূল্যায়ন করতে গিয়ে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে-
১। নতুন শিক্ষাক্রম বিষয়বস্তুভিত্তিক নয়, বরং যোগ্যতাভিত্তিক। এখানে শিক্ষার্থীর শিখনের উদ্দেশ্য হলো কিছু সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জন। কাজেই শিক্ষার্থী বিষয়গত জ্ঞান কতটা মনে রাখতে পারছে- তা এখন আর মূল্যায়নে মূল বিবেচ্য নয়, বরং যোগ্যতার সবকয়টি উপাদান জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের সমন্বয়ে সে কতটা পারদর্শিতা অর্জন করতে পারছে- তার ভিত্তিতেই তাকে মূল্যায়ন করা হবে।
২। শিখন-শেখানো প্রক্রিয়াটি অভিজ্ঞতাভিত্তিক। অর্থাৎ শিক্ষার্থী বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের মধ্য দিয়ে যোগ্যতা অর্জনের পথে এগিয়ে যাবে। আর এ অভিজ্ঞতা চলাকালে শিক্ষক শিক্ষার্থীর কাজ এবং আচরণ পর্যবেক্ষণ করে মূল্যায়ন চালিয়ে যাবেন। প্রতিটি অভিজ্ঞতা শেষে পারদর্শিতার সূচক অনুযায়ী শিক্ষার্থীর যোগ্যতা অর্জনের মাত্রা রেকর্ড করতে হবে।
৩। নম্বরভিত্তিক ফলাফলের পরিবর্তে এ মূল্যায়নের ফলাফল হিসেবে শিক্ষার্থীর অর্জিত যোগ্যতার (জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ) বর্ণনামূলক চিত্র পাওয়া যাবে।
৪। শিক্ষক সহায়িকা অনুযায়ী একটি অভিজ্ঞতা চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের যেসব কাজের নির্দেশনা দেওয়া আছে শুধু ওই কাজগুলোকেই মূল্যায়নের জন্য বিবেচনা করতে হবে। বিষয়ভিত্তিক নির্দেশনার বাইরে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত কাজ করানো যাবে না।
৫। অভিজ্ঞতা পরিচালনার সময় যেখানে শিক্ষা উপকরণের প্রয়োজন হয়, শিক্ষক নিশ্চিত করবেন যেন উপকরণগুলো বিনামূল্যের, স্বল্পমূল্যের এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য (রিসাইকেল) উপাদান দিয়ে তৈরি। প্রয়োজনে বিদ্যালয় এসব শিক্ষা উপকরণের ব্যয়ভার বহন করবে।
৬। মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শিখনকালীন ও সামষ্টিক এ দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হবে।
ক) শিখনকালীন মূল্যায়ন : এ মূল্যায়ন কার্যক্রমটি শিখনকালীন অর্থাৎ শিখন অভিজ্ঞতা চলাকালে পরিচালিত হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি শিখন অভিজ্ঞতা শেষে শিক্ষক সংশ্লিষ্ট শিখনযোগ্যতা মূল্যায়নের জন্য নির্ধারিত পারদর্শিতার সূচক বা পি.আই ব্যবহার করে শিখনকালীন মূল্যায়নের রেকর্ড সংরক্ষণ করবেন। প্রতিটি শিখন অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে সব শিক্ষার্থীকে তথা ইনপুট দেওয়ার সুবিধার্থে শিক্ষক প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পারদর্শিতার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পি.আই-এর জন্য প্রদত্ত তিনটি মাত্রা থেকে প্রযোজ্য মাত্রাটি নির্ধারণ করবেন এবং সে অনুযায়ী চতুর্ভুজ, বৃত্ত বা ত্রিভুজ ভরাট করবেন। তারপর শিক্ষক শিক্ষার্থীর তথ্য ‘নৈপুণ্য’ অ্যাপ্স-এ ইনপুট দেবেন। শিখনকালীন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষক যেসব প্রমাণকের সাহায্যে পারদর্শিতার সূচকে শিক্ষার্থীর অর্জনের মাত্রা নিরূপণ করেছেন- সেগুলো শিক্ষাবর্ষের শেষ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করবেন।
খ) ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন : সামষ্টিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অন্তত এক সপ্তাহ আগে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বুঝিয়ে দিতে হবে এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন শেষে অর্জিত পারদর্শিতার মাত্রা রেকর্ড করতে হবে।
শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে করণীয় : যদি কোনো অভিজ্ঞতা চলাকালীন সময়ে কোনো শিক্ষার্থী আংশিক সময় বা পুরোটা সময় বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকে, তাহলে ওই শিক্ষার্থীকে ওই যোগ্যতাটি অর্জন করানোর জন্য পরবর্তীতে এনসিটিবির নির্দেশনা অনুযায়ী নিরাময়মূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আচরণিক নির্দেশক : শিক্ষক বছর জুড়ে পুরো শিখন কার্যক্রম চলাকালে শিক্ষার্থীদের আচরণ, দলগত কাজে অংশগ্রহণ, আগ্রহ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করে এ নির্দেশকগুলোতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অর্জনের মাত্রা নির্ধারণ করবেন। পারদর্শিতার নির্দেশকের পাশাপাশি এ আচরণিক নির্দেশকে অর্জনের মাত্রাও প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ট্রান্সক্রিপ্টের অংশ হিসাবে যুক্ত থাকবে। আচরণিক নির্দেশকগুলোতে শিক্ষার্থীর অর্জনের মাত্রা শিক্ষক বছরে শুধু দুবার ইনপুট দিবেন। ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সময় একবার এবং বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সময় একবার।
৭) শিক্ষার্থীর যাণ্মাসিক মূল্যায়নের ট্রান্সক্রিপ্ট প্রস্তুতকরণ
শিক্ষার্থীর মূল্যায়নের প্রতিবেদন হিসাবে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের পর এ ট্রান্সক্রিপ্ট প্রস্তুত করা হবে, যা থেকে শিক্ষার্থী, অভিভাবক বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বিষয়ে শিক্ষার্থীর সামগ্রিক অগ্রগতির একটা চিত্র বুঝতে পারবেন।
শিখনকালীন ও ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অর্জিত পারদর্শিতার মাত্রার ভিত্তিতে তার ষাণ্মাসিক মূল্যায়নের ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি করা হবে। ট্রান্সক্রিপ্টের ক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত অর্জনের মাত্রা চতুর্ভুজ, বৃত্ত বা ত্রিভুজ দিয়ে প্রকাশ করা হবে। এখানে উল্লেখ্য, শিখনকালীন ও ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নে একই পারদর্শিতার সূচকে একাধিকবার তার অর্জনের মাত্রা নিরূপণ করতে হতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে, একই পারদর্শিতার সূচকে কোনো শিক্ষার্থীর দুই বা ততোধিক বার ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার পর্যবেক্ষণ পাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে, কোনো একটিতে যদি সেই পারদর্শিতার সূচকে ত্রিভুজ চিহ্নিত মাত্রা অর্জিত হয়, তবে ট্রান্সক্রিপ্টে সেটিই উল্লেখ করা হবে। যদি কোনোবারই ত্রিভুজ চিহ্নিত মাত্রা অর্জিত না হয়ে থাকে তবে দেখতে হবে অন্তত একবার হলেও বৃত্ত চিহ্নিত মাত্রা শিক্ষার্থী অর্জন করেছে কিনা; করে থাকলে সেটিই ট্রান্সক্রিপ্টে উল্লেখ করা হবে। যদি সবগুলোতেই শুধু চতুর্ভুজ চিহ্নিত মাত্রা অর্জিত হয়, শুধু সেই ক্ষেত্রে ট্রান্সক্রিপ্টে এ মাত্রার অর্জন লিপিবদ্ধ করা হবে।
মূল্যায়নে ইনক্লুশন নির্দেশনা : মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চলাকালে জেন্ডার বৈষম্যমূলক ও মানব বৈচিত্র্যহানীকর কোনো কৌশল বা নির্দেশনা ব্যবহার করা যাবে না। যেমন- নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, লিঙ্গবৈচিত্র্য ও জেন্ডার পরিচয়, সামর্থ্যরে বৈচিত্র্য, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদির ভিত্তিতে কাউকে আলাদা কোনো কাজ না দিয়ে সবাইকেই বিভিন্ন ভাবে তার পারদর্শিতা প্রদর্শনের সুযোগ করে দিতে হবে। এর ফলে, কোনো শিক্ষার্থীর যদি লিখিত বা মৌখিক ভাব প্রকাশে চ্যালেঞ্জ থাকে তাহলে সে বিকল্প উপায়ে শিখন যোগ্যতার প্রকাশ ঘটাতে পারবে। একইভাবে, কোনো শিক্ষার্থী যদি প্রচলিত ভাবে ব্যবহৃত মৌখিক বা লিখিত ভাবপ্রকাশে স্বচ্ছন্দ না হয়, তবে সেও পছন্দমতো উপায়ে নিজের ভাব প্রকাশ করতে পারবে।
অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীর বিশেষ কোনো শিখন চাহিদা থাকার ফলে, শিক্ষক তার সামর্থ্য নিয়ে সন্দিহান থাকেন এবং মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কাজেই এ ধরনের শিক্ষার্থীদের তাদের দক্ষতা/ আগ্রহ/ সামর্থ্য অনুযায়ী দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে তাদের শিখন উন্নয়নের জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
লেখক: মো. সহিদুল ইসলাম
সিনিয়র শিক্ষক
কলাগাছিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়
বন্দর, নারায়ণগঞ্জ।
